ঢেউ
পাতা ঝরার কালকে যদি গোপন রেখে যাই
মেঘের ময়ূর পাখনা মেলে জলের আভাষ পেয়ে
তোমার চোখের কাজল দেখি তাকায় সহসাই
সরু খালে চিকন ডিঙি দিব্যি চলি বেয়ে।
পাতার আড়াল থেকেই দোলে সবুজ শাড়ির পাড়
মিলে মিশে হয় একাকার সূতার মতো সাপ
অদেখা ঐ সাপের ঠোঁটে কে হবে আহার
বুকের ভেতর জমতে থাকে পথ হারানোর চাপ।
দিক হারানো মানুষ আমি অন্ধকারেই হাঁটি
হয় তো আলোর রেখা পাবো সামনে হঠাৎ করে
গা পুড়ানো তাপে তুমি আমার শীতল পাটি
কেমন করে ফিরবো আমি আমার স্বপ্ন ঘরে?
কেউ জানে না মেঘের আলাপ কেউ জানে না রাগ
তাল হারানো সংগীতে আজ হারিয়ে ফেলা সুর
ভোর হবে এই আশায় কাটে সবুজ সমনবাগ
তাকিয়ে দেখি পথ হারানো একটা ব্যাথাতুর-
মানুষ নাকি পাষাণ প্রাচীর কেউ জানে না কেউ
বুকের ভেতর থমকে দাঁড়ার অবিশ্বাসের ঢেউ।
আলোতে উজ্জ্বল করি
দুচোখের পাতা নেমে আসে সহসাই
কী কারণ, কী কারণ হদিস না পাই
ঘাটতি বিহীন ঘুম কাল রাতে হলো
আজ দেখি অকারণে চোখ ছলোছলো।
বুকের গভীরে কী বানের আভাস?
দরোজায় প্রহরী তো, নেই কোনো পাস
কী করে যুক্ত হই সন্মেলন স্থলে
এসেছি তো নিজ থেকে সত্যি কৌতুহলে
কারা আছ কর্তা-কর্ত্রী দেখাও চেহারা
এখানে তো আমি একা আর বন্ধুহারা
সহযোগিতার হাত না বাড়ালে বলো
জমে ওঠা ভিত্তিটা হবে টলোমলো
দুর্বল ভিত্তির এই ভবিষ্য তহবিলে
থাকবে কাঁপুনি আর চমকাবে পিলে
এখনই সময় প্রিয় ধরো এই হাত
আলোতে উজ্জ্বল করি আগামীর রাত।
বিদায় বলি হে সুবর্ণ সময়
যতই গুছিয়ে আনি গোছানো তো হয় না কিছুই!
কার ইঙ্গিতে সব এলোমেলো হয় দ্রুতলয়ে?
ছড়ানো ছিটানো সব আসবাবে ধূলো জমে একাকার হয়
সবাই তাকিয়ে দেখে,হাসে
আনন্দে বিভোর হয় দেখি
এ কেমন পড়ন্ত বিকেল আমার?
এক ফোটা রঙ নেই,ধূসর পশ্চিম আকাশ
আকাশের মেঘখণ্ড ম্রিয়মান থেকে থেকে
উড়ে চলে দূর থেকে দূরে।
আগত সন্ধ্যা নিয়ে ভাবনার দিন গেছে চলে
ঘণ্টাধ্বনি বাজলো বলে
বাজলো এই আজানের সুর
আমার বসন্ত দিন শীত সন্ধ্যার কাছে হার মেনে
কুয়াশার মুঠো বন্দি হলো…
বিদায় বলি হে সুবর্ণ সময়।
আমার নিজের নদী
তাঁর চোখে ক্রন্দনও নেই-
ক্ষত সব জেগে আছে রাতচরা বিহঙ্গ যেন
বাঁধ ভেঙে ভাসানোর সাহসীরা কই?
পাখিদের ডাকে এক বিমর্ষ নীরব বিকেল
অন্ধকারে এক হা কার মুখ দেখি শুধু
শুষ্ক দুচোখে রাখে লোভের চাহনী।
পিছনের দিন সব সবুজে মাখামাখি দেখি
দিবা স্বপ্ন বললেও দ্বিধাহীন চিত্তেই
নিজেকে জানান দেই এটাই সত্য প্রিয়জন
তাঁর শরীরে নেই যৌবনের জলস্রোত আজ
ঐ দেখো বুকের ক্ষতস্থানে সবুজের ঢাল।
মনু বা ধলাই বলো
কিংবা ধরো জুড়ী ও ফানাই
কণ্ঠিনালা,গোপলাও একই সুরে কাঁদে
জলমগ্ন দিন তাঁরঅথীতের স্বপ্নের রঙ
আজ সব ধূসরের টানে
বক্ষ বন্দী হয়ে গোনে মুক্তির দিন-
আশ্বাস মেলে না!
চোখে চোখ রাখে রাত্রির ঘুম
কী গভীর ঘুম আমার চোখের পাতায় ছিল সে এক সময়ে
আজকাল নৈবেদ্য সাজিয়ে বলি এসো প্রিয়বর…
তার ঠোঁটে বিদ্রূপের হাসি খেলা করে।
জানালায় বাতাসের ধ্বনি ঘুরে ফিরে
কাশ ঝোঁপে কার যেন চলার আওয়াজ
আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে
কাশদের দোল খাওয়া দেখি
পবিত্র শরীর নিয়ে ওড়ার প্রতীক্ষাতে সময় কাটাচ্ছে কাশফুল।
বাউনিয়া খালের দুর্গন্ধ জানান দেয়
সব কিছু পচে গলে গেছে-
শহরের মানুষেরা মানুষের অবয়বে,
মানুষের খোলসে ভরা হায়নার দল
ওরা সব পারে সব।
রাতদের কাছে আমার কত যে মিনতি
ওরা শোনে না সে কথা
গভীর ঘুমের শব্দ প্রতিনিয়ত আমাকে ব্যথাতুর করে
আমার প্রিয় ঘুম জানালায় বসে
আমারই চোখে রাখে চোখ!