মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
মানুষের রক্ত লাল—ঈষৎ টকগন্ধ
বুঝাতে চেয়ে বুকের একথাবা নরম মাংস প্রতিদিন
আকাশের দিকে ছুড়ে মারি, প্রতিদিন শকুন আর চিলের ঠোঁটে
ভাগাভাগি হই! সভ্যতার জটিল প্রেসে ছাপা হয়
ঘন রক্তের দাগ
.
খুন হই বলে খুনিদের হাত এত স্বচ্ছ—এত প্রসার
অবারিত দিন পেরিয়ে রোদ ছোট হয়ে উঠছে!
বৃষ্টিরা ভুলে গেছে মাটি-ঘাস—ভ্রূণের সজীবতা
ও কপিলার জমির জোয়ার
চাষাবাদ ছিন্ন করে এক টুকরো কালোছায়া গিলে খায়
সুদীর্ঘ মহাকাল!
মধুঋতুতে
আগুন জ্বালিয়ে নাইলনের সুতোয় সেলাই করি
ঝাঁকঝাঁক মানব শরীর! আকাশ-পৃথিবীর ব্যবধানে
রক্ত বিলিয়ে সভ্যপাড়ার মানুষগুলোর পিয়াস মেটাই
কথাচুপ পলাতক থাকি, খুন হতে হতে আরও
অদ্ভুত বেঁচে উঠি
মানিকদা’, একটা লেখা হবে? উপন্যাস না গল্পও না
তুমুলানন্দ! আকাশের তারা দিয়ে তারাটির দেশে বসে
এই বেঁচে থাকার রহস্যটি জানিয়ে দিও
কারণ—ঈশ্বর এখনো গরিব পাড়ার ভাষা বোঝেন না!
বালিকা
বালিকা—এত ভেতরে ডেকো না
চুমুগুলো চরমপন্থী
রাখডাক মানবে না—বদমাশ মন
গলিয়ে দেবে তোমার
চীনের প্রাচীর
তখন এই উজ্জ্বল সর্বনাশ
তোমার দুধেল শাদা কোমরের ভাঁজে
রাইফেল টাওয়ারের চিহ্ণ বসাবে
শরীরে সাঁতার ছড়াবে সোনালি
নেশার মাছ
বালিকা—এত ভেতরে ডেকো না
অন্ধকারে এমন উজ্জ্বল হয়ো না
মিহি ঘাম শুঁষে খাচ্ছে লজ্জার দূরত্ব
ছাড়ো ছাড়ো সরে যাও
চুমুগুলো চরমপন্থী
ভেতরে নিয়ো না
তোমার সম্পূর্ণ সর্বনাশ করো না
হেমলকের সুখ
সবকিছু ভেঙে ফেলার আগে নিজেকে আমি
কৌতূহলে ছড়িয়ে দেই আগুনের কাছে
আগুন পুড়ে যায়, গন্ধ ছড়ায়
নির্ধিদ্বায় বেড়ে ওঠে শৈশবের ট্রেন!
হেমলক মহিমান্বিত না কলঙ্কিত
সক্রেটিসে? এই এক প্রশ্নে
আত্মার ফেনায় জন্ম নিতে থাকে
সূর্য গোলকের ধাঁধা
জিরাফের দৌড়াত্ম্য ও বিষণ্ন বিকেল
সমুদ্রকে তখন শিশু বানিয়ে হৃদয়ের কাছে
পৌঁছে দেই নরকের ২১টি গোলাপ
আর বনেলা পথজুড়ে রেখে আসি
আমি ও আমার জন্মের দূরত্ব
মৃত্যুর কাছে যে কখনো কৃপণভাবে দাঁড়ায়নি!