বান্দরবান-১
গভীর সবুজ বান্দরবানে আছি।
ইচ্ছে হলে তুমি আসতে পারো, যদি আসো
তোমাকে দেবো এখানের বিজয় পাহাড়, গাছগাছালি,
লতাপাতা, ড্রাগন বাগান
আর আমার বুকের ভেতরে লুকিয়ে থাকা
তরতাজা গোলাপ।
আমি জানি, তোমার বড়ো বিষাদিত মন।
তোমার সব দুঃখ, সব ক্লান্তি, সব অসুখ নিমিষেই
দূর করে দেবে এই গোলাপের সুবাস।
যদি আসো,
আমার গোলাপের সুবাস
তোমাকে পরিণত করবে চপলা গঙ্গায়,
আমাকে করবে তার রূপালি বরণের ঢেউ।
বান্দরবান-২
এখানে ঢুকে গেছে অদ্ভুত পোকাগুলো।
ওরা গোগ্রাসে খেয়ে নিচ্ছে সকল সবুজ
এবং উগরে দিচ্ছে ভীষণরকম ভয়াবহ বিষ।
নীরব শব্দে,
নীরব আর্তনাদে কাঁদছে বান্দরবান।
তার চোখের জলে বয়ে যাচ্ছে রিংখিয়াং নদী।
বান্দরবান-৩
আজ বান্দরবান ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
সে বলল: ‘তোমার মতো মধুর সখা আমি
পাইনি বহুকাল।
তুমি এসেছো বলে আমার সবুজ হারানোর
দুঃখ ভুলে গিয়ে কিছুকাল মজেছিলাম তোমার
নরম জোছনায়।
তুমি চলে গেলে আবার আমার দুঃখের দহন নিয়ে
বয়ে যেতে শুরু করবে শঙ্খ নদী।’
বান্দরবান বড় মর্মস্পর্শী, বড় বেশি প্রেমময়ী মাতিনের মতো।
আজ বান্দরবান ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
আমার চোখে জল।
বান্দরবান-৪
আফ্রোদিতি চলে গেছে সেই যে কবে!
তোমার নীলাচল দেখে মনে হলো,
সে আমার আফ্রোদিতি যেন।
তাকে হারানোর বেদনা আর আমার নেই।
নীলাচলের নীল আঁচলে আমার বাকি প্রহরগুলো করে দেবো পার
এবং রচনা করবো একটি নতুন মহাভারত।
বান্দরবান-৫
এই শহরে একজন চৌধুরী বাবুল বড়ুয়া ছিলেন।
তিনি হাসতেন, গাইতেন আর লিখতেন কাকডাকা ভোরে, গোধূলি বেলায়।
তাঁর হাসির শব্দে,
তাঁর গান ও কবিতার ছোঁয়ায়
এই শহরের বুকে বেজে উঠতো নায়াগ্রা জলপ্রপাত,
জেগে উঠতো কুন্তিমাতার সীমাহীন প্রেম।
চৌধুরী বাবুল বড়ুয়া মৃত নক্ষত্র হয়ে গেছেন আজ বহুকাল।
তিনি নেই বলে এই শহর, এই বান্দরবান শহর আর শহর নেই।
তাঁর বুকে বসতি গড়েছে অসংখ্য বিষাক্ত পোকা আর ভয়ঙ্কর হাবিয়া দোজখ।