সমুদ্রপুত্র: ছয়
এ শহর স্বাধীনতা ব্যতিত কিছুই দেয়নি মেয়েটিকে
ভালোবাসা, হিংসা, ব্যথা, স্মৃতি, এমনকি স্পর্শটুকুও।
শরতের আকাশে সাদা মেঘের খেলা দেখে মেয়েটি কল্পনায় ডুবতে থাকে,
হাতিয়ে বেড়ায় ঢাকার রাস্তায় অজানা কোথা হতে ভেসে আসা কাশফুলের রেণু।
অথচ সে কিছুই পারে না ছুঁতে;
সমুদ্রপুত্র, তোকেও না।
মেয়েটি সূর্যালোকে একটি ছবি আঁকে,
আঙ্গুলের রেখাগুলির একেকটা টান যেন প্রিয় সখির জীবনপথ
অথচ মেয়েটির ক্যানভাস রঙহীন।
বাংলাদেশ
স্বাধীনতা শব্দটিকে বেশ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছি সেই কৈশোর থেকেই।
যে দেশে নিজের মত-প্রকাশ করা যাবে না,
সেখানে সংবিধান রাখার কোনো প্রয়োজন আছে কি?
যেখানে তফসিল আর অনুচ্ছেদগুলো ভরে আছে তুচ্ছ শব্দে,
দরকার নেই বাক-স্বাধীনতা নামক অপ্রয়োজনীয় কিছু।
আমাদের বুদ্ধিজীবীদের স্থান হোক চিড়িয়াখানায়
মুক্তচিন্তকের মানে খুঁজবে বন্ধু রাষ্ট্রে, এদিকে
অন্ধত্ব আর বধিরত্ব মেনে নেবে প্রত্যেকটি প্রাণ।
নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে স্বাধীনতার পর থেকেই,
রক্তরঞ্জিত যে লাশ, সে আমি নই, তবে আমিই কিন্তু বাংলাদেশ।
আশীর্বাদ: চব্বিশ
নারী, তুমি ইহকালের আশীর্বাদ
পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই
পুরুষের সম্পত্তি হয়ে যাও।
তারা কখনো পারে কি নিজেদের এমন ভাবতে?
কোলে নেওয়ার কিংবা খেলার ছলে যে চাচাতো ভাই
তোমার স্পর্শকাতর অঙ্গে বারবার ছুঁয়ে যায়,
কাপড় বানানোর নামে যে দর্জি
তোমার বাড়ন্ত বুকের মাপ নেয় শক্ত হাতে;
দূর সম্পর্কের পঁয়ত্রিশ ঊর্ধ্ব ভাই যখন স্কুলগামী তোমাকে ডেকে নিয়ে
অতর্কিতে আঙুলের লাঙল চালায় তোমার অপরিপক্ব দেহটিতে,
ভাই-বন্ধু দীর্ঘযাত্রাকালে কঠিন বাহুবন্ধনে জড়িয়ে নেয় নিজস্ব সম্পদ ভেবে।
রিকশায় কবির কোমল হাত তোমার পেটের ভাঁজে আঁকড়ে নেয় অবলীলায়,
পিতৃতুল্য তোমার পরিচিতজন বাসি মুখেই গালে চুমু দেওয়ার ছলে
চুষে নেয় তোমার ঠোঁটের যত হাসি,
আবার দেবতার মতো শ্রদ্ধার মানুষের হাত
চষে বেড়ায় তোমার পুরো শরীর।
এক জীবনে কত পাওয়া!
তুমি তাদের নাম ভুলে যাবে খুব অবহেলায়
নাম প্রকাশ করতে গেলেই পাছে লোক বলবে তুমি এঁটো,
কিছু ভুলে যাওয়া ভালো থাকার একমাত্র অবলম্বন।