ভ্রূণবিদ্যা
একটা অঙ্কিত ছবি নিয়ে আমরা পরখ করার চেষ্টা করি
আমাদের নিজস্ব গন্তব্য। কোথায় ছিলাম কিংবা যাব
কোথায়, এমন জিজ্ঞাসার নদী পেরিয়ে দাঁড়াই সুষম ভোর
আর বেদনার কাছাকাছি। যেভাবে লিখিত হয় জীবনের
ভ্রূণবিদ্যা অথবা সাতপুরুষের সাজানো বসতি। শাসিত
সমাজে এভাবেই প্রাধান্য পায় পুরুষতন্ত্র। কেউ বলে না
সাতনারীর ভিটে। কালের আখ্যায়নে, সমতার বিবর্ণ স্বপ্ন
চারপাশে ঘুরপাক খায়। আমরা লিখি নাব্যতার ইতিহাস!
জলাশ্রম
একটি নদী এসে মিশে যায় এই মুগ্ধ জলাশ্রমে। একটি লালখামে ভরা
থাকে আমাদের অনুরাগ। রৈখিক রাতের তারায় জেগে থাকে বিশাল
পৃথিবীর ছায়া, আমরা ক্রমশ ভাগ করে নিতে চাই। হাত বাড়াই
নির্দিষ্ট নিয়তির দিকে। কিছু মেঘ এসে আড়াল করে দেয় পরিণত জলের
আশ্রয়। এ ভাবে বেড়ে গেলে বেদনাদের বয়স, জীবনও খুঁজে নিতে চায়
আলোর আশ্রম। একদিন আমরা ভূমি থেকেও পর হয়ে যাই। আর উড়াই
নিঃশ্বাস। কোনোকালে, নদীরাও পরিযায়ী ছিল—মানুষ ছিল তার একান্ত
অনুগত বাঁক! সহস্র রজনী লিখে প্রেম, যেভাবে খুঁজেছিল বিরহের ফারাক।
অনুষঙ্গ
বৃত্তান্তটা খুব সহজ ছিল না, কিংবা উজ্জ্বলতা দেখে
চেনার উপায় ছিল না কোন সন্ধ্যার ছায়া দিয়েছে
আমাদের বিশুদ্ধ আনন্দ। কোন অনুষঙ্গের ত্রিভুজ
আবারও নির্ণয় করেছে মধ্যাহ্নের মহাযাত্রা। অথবা
বনাধুনিক সবুজের সম্ভাবনায় ছড়িয়েছে একমুঠো
উজ্জ্বল শিল্পের আলো ।
আমরা পূর্বজনমে একে অন্যের পরিচিত ছিলাম
কি না—সে সত্যের ছবিও নেই আমাদের সংগ্রহে।
বিশেষ বসন্তে আমরা শুনেছিলাম কি না জোড়া
কোকিলের সমবেত সঙ্গীত, এর কোনো প্রমাণও
নেই স্মৃতিতে। তবু দ্বিমাত্রিক ক্যানভাসে যুগল
তন্মতায় ডুবেছি—আপাতত সেটাই আমাদের
সংগৃহীত দীর্ণ দলিল।
খাজনা
দলিল দস্তাবেজ নেই। তারপরও দিয়েছি নিয়মিত
জলের খাজনা। অনুকুল সমুদ্রের কাছে চেয়েছি ঋণ
বাড়িয়েছি অজান্তেই মনমেঘের ঘন বিস্তার। আবার
ফেরার হয়ে গিয়েছি সন্ধ্যাগ্রামে, একদা যেখানে
ডুবছায়ায় নামতো প্রেমের প্রান্তপ্রদীপ।
সে প্রদীপের আলোয় আমরা মুখ দেখে চিনেছি
নিজেদের গন্তব্য। যৌথঠিকানা খুঁজে আবারও
পাখিদের মতো হয়েছি দেশান্তরি ,
মাতৃচিহ্ন আর পিতৃদেশ খুঁজে যেমন দাঁড়ায় হেমন্তের সারি।
পাঠের প্রহর এসে
কাছে দাঁড়ায় এসে পথ। পাঠের প্রহর এসে সেই ছবি ধারণ
করে বিক্ষিপ্ত সীমানায়। আমিও পড়ি, পাঠ করে যাই। ভাজ্য
আর ভাজকের যোগফল। কিভাবে নশ্বর নদীর আলো বুকে
নিয়ে উড়ে পাখি। সুষম ফসল কেটে ঘরে তোলে কথার কার্তিক।
আমিও সাজাই কথা। তারপর নিশির নিরিখে উড়াই ঘুড়ি , সাদা
লাল-হলুদ মিশ্রণ। বন থেকে বনে ঘুরে বেড়াই। একটা সবুজ
শালিকের চোখ পড়ে শিখে নেই বাদলের ভাষা। পথের ইশারা
পেয়ে করি কাটাকুটি, আঁকি ঢল আর দলিলের খণ্ড প্রবাহ।
পাখিরও ভাষা আছে। আছে বৃষ্টিরও। ঋতুর রহস্য ভেদে স্বপ্নের
রোদ্দুর। আমাকে শেখায় ভাষা, ভেসে যাওয়া মেঘ—জোসনাপুর ।
ভাঙন ঘনিষ্ট হলে
এখানে সমাপ্ত হয়ে যায় জৈবিক যুগসদন। যোগসাধন শেষে
সন্ন্যাসী-সাধুরা ঘরের পালক ছেড়ে ছুটে যায় রাত বরাবরে।
যারা শ্লোকচিহ্ন রেখে সমুদ্রে গিয়েছিল, তারাও ফেরার জীবন
বেছে নিয়ে হয় দেশান্তরি। আমরা আপাতত ভিটেমাটি ছাড়ব
না বলে, ক্রমশ গুহার ভেতর জড়ো হতে থাকি। মানুষ, সকল
ভাঙন ঘনিষ্ট হলে এভাবেই জড়ায় সংসার। আর অন্ধ দুপুরের
পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখে নদী। সনাতনী ভাটির তালুতে কালের ভাঙন।