মফস্বলের কবি
মরে গিয়ে যে লোকটি সংবাদ শিরোনাম আজ-
তিনি মফস্বলের একজন কবি। সমুদ্র ও পাথরের
সাথে বেড়ে উঠেছিল তার শৈশব। যাদু ও যন্ত্রে
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তিনি বাজাতেন সেতার। আর মসজিদ,
গীর্জা-মন্দিরের ছায়া মাড়িয়ে হেঁটে যেতে যেতে
হিসেব মেলাতেন সূর্যসংসারের।
সংসার তাকে গ্রহণ করেনি। সমবায়ী সন্ধ্যালগ্নে
সমুদ্রও তাকে করেছে বর্জন। যারা ভালোবাসার
ডালি হাতে একদিন প্রদক্ষিণ করেছিল তার চারপাশ,
তারাও একদিন বেছে নিয়েছিল পরবাস।
সজল স্বদেশ বুকে নিয়ে তিনি মাঝে মাঝে
আয়োজন করতেন যে কবিতা উৎসব- তা মূলত
ছিল তার বেদনার বাতায়ন।
তার মৃত্যুর পর আজ তাকে নিয়ে যজ্ঞ হচ্ছে। কেউ কেউ
লিখছেন দীর্ঘ প্রবন্ধ। তারাই ছেপে দিচ্ছে- যারা একদিন
তার একটি কবিতাও ছাপেনি।
আমিও মফস্বলে বসেই তার জন্য লিখছি এই শোকগাঁথা।
নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অব লিবার্টি আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে-
বলছে, কবির কোনো কররেখা নেই।
বিজলীবৃন্দ
চমকে উঠছে জল
চমকে উঠছে বৃষ্টির ছায়া,
ঘনমেঘ- দুপুরের নীরবতা ভেঙে আছড়ে
পড়ছে তোমাদের দরজায়, ব্যথা হয়ে
বিনয় হয়ে।
আমি বিজলীবৃন্দকে এক কাতারে দাঁড়াতে
বলছি। সৃষ্টির সকল আলোকে
বলছি আমার বশ্য হতে।
আমি আরও একটি মোমবাতি জ্বালাতে চাই।
প্রকাশনালয়
ছাপা হয়ে বেরুচ্ছে চন্দ্রের রাতলিপি। যে রাত
সেরেছিল নদীর বস্ত্রহরণ- যে রাত
লুট করে নিয়েছিল দীপালীর ভিটেসূত্র,
গ্রন্থাকারে বেরুচ্ছে সেসব গদ্যকল্প।
কেউ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দিচ্ছে অবৈধ
অর্থের যোগান। সংরক্ষিত রাজকোষ
দখলের মহড়ায়, কেউ ভুলে যাচ্ছে নিজের
আত্মপরিচয়, ভুলে যাচ্ছে—
বিধবা মায়ের অশ্রুভাষা।
ছাপা হয়ে বেরুচ্ছে মেঘ-মমি-মন্তব্য।
বেরুচ্ছে ‘লাইক’এর দীর্ঘ সারি।
যে প্রান্তিক কবি জমি বিক্রি করে গতবছর তার
একমাত্র কাব্যগ্রন্থটি বের করেছিলেন—
তার দশটি কপিও বিক্রি হচ্ছে না!
চৈত্রচিত্র
কে গাইছে বর্ষশেষের গান !
কার কণ্ঠে জেগে উঠছে
আলোর আগামী! এসব রাগরশ্মি ছুঁয়ে
কে যাপন করতে চাইছে প্রিয় চৈত্রজীবন।
আমি তার জন্য একটি গল্প লিখছি।
শোনাতে চাইছি, আমাদের সম্মিলিত
শূন্যতাগাঁথা।
যে পাখিটি আমাদের পাশে বসেছিল,
গায়কের সাথে আমি করিয়ে দিতে চাইছি
তার পরিচয়।
উপবাস
আমাদের আরাধনার তালিকায় ‘তাকিয়ে দেখা’
ছাড়া অন্য কোনো সূচি ছিল না। ছিল না
ভালোবাসা! প্রেম! পরিণয়—কিছুই !
উপবাসী উনুন বুকে নিয়ে শুধুই
বলেছিলাম, বেঁচে থাকতে চাই।
প্রধানত বেঁচে থাকার মাঝে যে আনন্দ
তা উপভোগ করার জন্যই পড়ে দেখতে
চেয়েছিলাম মৃতদের রেখে যাওয়া রোজনামচা।
জানতে চেয়েছিলাম—তারা কতটা ভিজতে পেরেছিল
ঘামে ঘেরা স্বাধীন সৈকতে।