নতুন বাচ্চারা মায়াফসলের শস্যসমাধান
গণিতসংসারে বয়ে নিয়ে যায়; আমি তার পিছু হাঁটি…
স্বপ্নকঙ্কালের পাশে আমার বয়স
মলিন আয়ুর নামে জীবন্ত শৈশব নিয়ে খেলে।
হাঁটতে হাঁটতে জলসূচনার পরম দরজা খোলে চোখ।
চোখ মানে দৃশ্যগান, চোখ মানে বহতাস্মৃতির এক আয়নাশরীর;
হয়তো গভীরে তার জলঘণ্টা আর চারুপাঠের বুদ্বুদ।
যখন গড়িয়ে পড়ে সৃষ্টিবেদনার স্কুলঘর
যে-দৃশ্য আবেগ আনে মনপোড়া মুগ্ধ জানালায়
তাকেও ছাপিয়ে ওঠে ‘ছুটি’ ‘ছুটি’ বলে
শিশুদের কলস্বর।
জ্ঞানবিতানের সৌম্য রাস্তায় নশ্বর জীবিকার মতো
বস্তুত আমিও খাই নিজের বিষাদ:
যাতনাপুষ্টির খোলামাঠে
ভিজতে ভিজতে বেড়ে উঠি
চিরদিন শ্রাবণ স্মারক।
শ্রুতির সকাল কেটে গেছে;
তাই আজ রাত্রিবধিরতা।
ফুল পাখি পাতার সঙ্কটে
গ্রন্থের পৃষ্ঠায় মৌন মুদ্রণের ছবিগুলো।
শত শত হৃদিঘাস আমূল জড়িয়ে নিলে
হয়তো ফুটবে ফুল বসন্তপুস্তকে।
চেতনাশৃগাল খুন করে
পাখিও গাইবে গান; পারঙ্গম শিল্পীর দু’হাত
আঁকবে নতুন করে জলের নিশান;
কেউ কেউ খুঁজে পাবে গুচ্ছগ্রাম,
জ্যোতির্ময় সবুজ স্বদেশ।
আজ সেই কাঙ্ক্ষিত অধ্যায় স্মৃতিঘূণাক্ষরে জেগে ওঠে:
অনন্ত খাতার ছেঁড়া পাতায় বিলীন আঁকিবুঁকি
নিজের মুঠোয় নিয়ে ভাবি, কাশফুল।
ভাবি, আমাদের স্কুলঘর বারান্দার গৃধুল নিশ্বাসে
কত সুর ফেলে গেছে, তাকে ধরি। বলি, আয় আয় আদুভাই
সোনার পেন্সিলভরা স্মৃতির অন্তিমে
চুমু খাই নদীর কাঁকন।
সিঞ্চিত জলের দামে
আমাকেও দিতে পারে কেউ কেউ শরৎহৃদয়,
প্রেম ও প্রথম ব্যথা।
হাহাকার থেকে জন্ম নেয়
আমার-যে পরম আকাশ, তার নীল আয়তনে
বাউলস্তম্ভের মতো গান হয়ে দাঁড়াই লালন।
আজ বর্ণমালার নিষিদ্ধ দুর্গে নিশ্চুপ অক্ষর
আমাকে শাসন করে
বেতপুরাণের গল্প বলে বলে: গোপন সূত্রের
পায়রা উড়িয়ে যারা ঘুম যায়—
মূলত আড়ালসাধু—অনড় বিবেক তারা।
দুর্গম ছাত্রীর কোলে মাথা রেখে ব্যধি ও বঙ্কিম স্বাদ
নিজের শরীরে মাখে; সারারাত উলট পূর্ণিমা জ্বেলে
তারপর ফিরে যায় বিরক্ত প্রেমিক।
জীবনের এও এক অদ্ভুত নিশানা!
উন্মাদ হাসির মধ্যে যে-কল্পনা তৃণ হয়ে ঝরে
তাকেই পুড়িয়ে বলি মহৎ উদয়।
তবেকি সময় এক করুণ দপ্তরি।
গুপ্ত ঘণ্টা পেটায়? বিমূর্ত তার আক্ষেপ থেকেই
স্কুলঘরে সরল সিলিঙে ঝোলে
তন্দ্রাসহপাঠী আমাদের বিনষ্ট বালক?
একদিন স্তম্ভিত স্থিরতা নিয়ে ছুটির হল্লায়
ফুলবেণী খুলে দিয়ে সহপাঠী বালিকার
দেখেছি দূরন্ত তার চোখের পাতায়
আলোর পসরা নিয়ে খসে গেলো
মিটি মিটি তারার কমল।
অন্তর্লোকে পাখি হয়ে
ডানায় আগলে রাখি সেই চোখ।
রহস্যমন্থর তার দেহ
আলোর কোরক যদি ফেলে যেতো
সর্পিল বিনুনি ধরে বহুদূর এগিয়ে যেতাম!
হৃদয়কুণ্ঠিত ঝড়ো দিনে কেউ কেউ
আমাকেও বলেছে, মেয়েরা চিরদিনই
বাঁকা চাঁদ; জল ব্যাকরণে
আকাশে ছড়ায় নীল পুরুষ প্রণয়।
কান্নাকরতলগত দুঃখবালিকারা
আজ তবু স্পর্শ দিক, ছুঁয়ে যাক টিফিন বক্সের
মর্মছায়াতল; স্বপ্নদানার সুখাদ্য নিয়ে
মায়াশীতলতা একখানা আইসক্রিম
বিনিময়ে পাঠাব এখন।
জাগবে হৃদয় সত্য—আলোর প্রচ্ছদে
যার মহাকাল নিরুত্তর প্রতিভায় জেগে থাকে।
ওরে হাওয়াশঙ্খ
বান্ধবীর উড়ো চঞ্চলতা
শ্বাপদ যন্ত্রণা ছাড়া কিছু নয়।
তবু সে-ই সূর্যপ্রতিমার
একমাত্র সহরূপ নারী অবতার।
বাক্সবন্দী সামান্য খাবার
হাতের তালোয় পুরে দিয়ে
কেড়ে নেয় বরফ মালাই।
আজ ওই জলপি- স্ফুলিঙ্গউচ্ছ্বাস আর স্নিগ্ধ কাতরতাসহ
গোধূলিশিশুর কালো কান্না
আমাকে শোনায়।
এই বিয়োগল সন্ধ্যাতীরে
বৃষ্টিপোড়া চাতকের ঘুমন্ত ইচ্ছায়
আমিও কি ছাত্র পদাতিক?
দিনপ্রবাহের বেঞ্চে বসে
কাঁদতে কাঁদতে বড় হই?