কথা বলতে বলতে তুমি
হাসি ও উচ্ছলতায়
কখন যে উজান থেকে নেমে আসা
পাহাড়ি ঢল হয়ে যাও!
পল্লীবিদ্যুতের অনুদ্বোধিত
বৈদ্যুতিক লাইনের মতো
ভেসে যায় ভাবনার
প্রস্তুতি ও প্রাক্কলন;
ভেসে যায় ফসলের মাঠ
হট্টিটির বাসা, সাপের খোলস;
ওয়েদার অফিসের পূর্বাভাস নেই
নেই মেঘনাদ বা বজ্রধ্বনি
সহসায় নেমে আসে বৃষ্টিপাত
ঝর ঝর ঝিরি ঝিরি!
অন্তরঙ্গ জলপাতে ভিজে যায়
মাঠ-ঘাট, পথ ও প্রান্তর
মাটির মিনতি, শস্যের শীষ
বৃক্ষদের ব্যাকুলতা
কেউই পায় না অবকাশ
প্রার্থনায় প্রকাশিত হওয়ার;
সিক্ত হওয়ার নিয়তি নিয়ে
তারা শুধু সিক্ত হতে থাকে—
অনুভবের ভাঁজে ভাঁজে
আবেগের আনাচে কানাচে!
তুমি হাসো, কথা বলো,
গুনগুন— গুনগুনাও
কান পেতে শুনি আমি,
শুনি বোশেখের বরেন্দ্রভুমির
সবখানি হৃদয় ভিড়িয়ে;
হাসিভেজা কথাগুলো
কথাভরা হাসিগুলো
সুরভরা গুঞ্জরন
বাতাসের সঙ্গীত পরিচালনায়
হয়ে ওঠে থীম সং অব লাভ—
‘মোরা আর জনমে হংস-মিথুন ছিলাম-’
আর শুনতে শুনতে এবং
বুঝতে না বুঝতেই
আমার সকল মৃন্ময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
আমার সমগ্র চিন্ময় অস্তিত্ব
শ্রবণেন্দ্রিয়ে পরিণত হয়;
আমার পা নেই হাত নেই
মুখ নেই, নাক নেই
শ্রবণ পিপাসা নিয়ে আমি শুধু
মানবাকৃতির আস্ত একটি শ্রবণেন্দ্রিয়!
কিন্তু আমাকে স্পর্শ করে না-
ট্রাকের হর্ন, ট্রেনের হুইসেল
আমাকে স্পর্শ করে না-
পেন্টাগনের প্রবাদের গলা
প্রত্ন হৃদয় ঘিরে
পুঁজিবাদের নীলাম চিৎকার—
”এক লাখ—এক লাখ—
এক লাখ পঁচিশ হাজার—
দেড় লাখ—দেড় লাখ—— ”
আমার কানে আসে না-
মাছের বাজারের আঁশটে কোলাহল
কিংবা
পনের বছর ব্যাপী সংসার করে আসা
পাশের বাসার প্রেমহীন
ভালোবাসাবাসির হাউকাউ !
সুজাহা, তোমার কবরী-কণ্ঠ
এবং শরীরের রিলিপ ম্যাপ
নিশ্চিত প্রত্যয়ন করে যে
তুমি শতভাগ নারী;
কিন্তু আমার কেন প্রতিক্রমী প্রতীতি জাগে
স্মৃতিহারা পূর্বজন্মে বাঁশিহাতে
শ্যাম ছিলে তুমি!
বদেলেছো তুমি, বদলেছে বাঁশি
তুমি তো এই তুমিই
বাঁশিটি বদলে মাধবী অধর!
আর পুরুষের অঙ্গ নিয়ে
রূপ নিয়ে
নাম নিয়ে
আমার ভেতরে বাস করে
কোনো এক বিরহিণী প্রাণ—
যে পিয়াসে ও প্রকাশে
কানখাড়া রাধা!
সুজাহা, তুমি যদি সত্যি সত্যি কৃষ্ণ হয়ে যাও
বিশ্বাস করো—
পুরুষাধিকারে প্রাপ্ত
রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রসংঘ
ধর্ম ও ধন
সুবিধা ও স্বেচ্ছাচার ফেলে
যমুনার ঘাটে যেতে
রাজি আছি আমি
ভরাজল ফেলে দিয়ে
কাঁখে নিয়ে বাহানার শূন্যপাত্র !
আমার এ লিঙ্গান্তর দেখে
জগতের কপালে ভাঁজ পড়লে পড়ুক,-
বেকায়দায় পড়ে তো পড়ুক-
পোপ অথবা পুরোহিত,
যেমন ইচ্ছে কলাম লিখুক-
হুইস্কি-শব্দের কারিগর
তসলিমা নাসরিন,
যা-ইচ্ছে ফতোয়া দিক
তেঁতুল-তত্ত্বের আবিস্কারক
হেফাজতী আল্লামা শফি,
আমি কিন্তু খুশি হবো—
খুশি হবো! খুশি হবো !
আমার তৃষ্ণা-জেনারেলের হাতে স্থগিত
সংসারের সংবিধান
আমার ক্ষুধা-সিন্ডিকেটের চাপে
অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ
পুরোহিতের পুরোনো পাঠশালা
সুজাহা, তুমি তো কোরানে ক্কারী
বাইবেলে বিজ্ঞ
গন্দমের পাতা ছুঁয়ে বলো দেখি-
স্বর্গ কি হয়ে উঠেনি
উপেক্ষার উঠোন
আদম-ইভের ভালোবাসার
বিনীত অহংকারের কাছে?
হয়তোবা ভুল সময়ে জন্ম আমার
হয়তোবা সময় করেছে ভুল—
ক্যালকুলেটর-সময়ে জন্ম দিয়ে
এই আমাকে—
যার চোখে অলোভনীয়
বিল গেটসের ডলারের হিমালয়ী চূড়া
কিংবা
জর্জ বুশের সভ্যতার যৌনীভেদী যুদ্ধলিঙ্গ
বারুদবীর্য টমাহক-
গ্যাং রেপেও যার রয়েছে
অঘোষিত দায়মুক্তি
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে !
আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের অপারেশনের
স্বর্ণযুগেও
আমি এক অমীমাংসিত মানুষ-
যাকে নিয়ে বিব্রত
অ্যারিস্টটলের যুক্তিবিদ্যা;
আমি অর্থনীতির সংজ্ঞা
যাকে ঘিরে—নোবেলজয়ী দশজন
অর্থনীতিবিদের এগারো রকম মত!
আমি ছুটে যেতে চাই
সেই সে উঠোনে
যেখানে পুরুষ নেই
নারী নেই
নেই লিঙ্গহীন উভয়লিঙ্গ মানুষ
আছে শুধু প্রেম
প্রেম— আর প্রেম।
মাঝে মাঝে একা একা ভাবি—
মাঝে মাঝে কৌতূহল
প্রণয়ের পার্লামেন্টে
তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন হয়ে
গরম করে তোলে শীতকালীন
একপক্ষীয় সান্ধ্য অধিবেশনঃ—
যে-অধর থেকে উঠে আসে
এই মধুহাসি,
যে-ঠোঁট ছুঁয়ে
ঝরে পড়ে বরেন্দ্রীর
গুড়মাখা গুঞ্জরন
সুগারকোটেড শব্দাবলি,
তার চারপাশে কি উড়ে বেড়ায়
প্রতিবেশী মৌমাছির ঝাঁক!
স্বর্গীয় চিনির লোভে তার অস্তিত্বের
আঙিনায় কি বৃত্ত রচে
বিদগ্ধ-নাসা পিপীলিকার সারি ?
তুমি যখন ঘুমিয়ে থাকো ঘরে
সর্বাধিক সাফল্যের কারিগর শয়তান
প্রেষণে ব্যস্ত থাকে—-
পেন্টাগনে
আইসিস-শিবসেনা-মোসাদ মহলে,
নাইট শিফটের ফেরেশতারা কি
ভুলে গিয়ে আরশ-আদেশ
ফেলে রেখে নাইট ডিউটি
মৌমাছির রূপ ধরে
গড়ে তোলে মৌচাক
তোমার অই ঘুমন্ত অধরে?
আমি তো ধার্মিক নই
মঙ্গল আহ্বান শুনেও
ওজুহীন
অবিশ্বাসের চা খাই
নাস্তিকের টি-স্টলে বসে!
কিন্তু যদি কখনো অই মৌচাক
অধরের কাছে পৌঁছে গিয়ে
একবার,—শুধু একবার
চেখে নিতে পারি এতটুকু চিনি,
আর ইনু-মেননের
কাবা প্রদক্ষিণের চমকতায়
কিংবা উইরাথুর অগ্নিমুখে
রোহিঙ্গা-স্তুতির অসম্ভবতায়
আমার মুখ ফসকে বের হয়ে আসে
‘ফাবে আইয়ে আলায়ে রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান’
‘ বলো-তারপরও তুমি তোমার প্রভুর
কোন্ কোন্ নেয়ামতকে অস্বীকার করবে!,——
আমার ভয় হয় সুজাহা,—
কাঁধ থেকে ফেলে দিয়ে
আজীবন বয়ে বেড়ানো
লাল কালির উলকি আঁকা
নাস্তিকতার ব্যাগ,
আমি লুটিয়ে পড়বো সিজদায়—
‘হে প্রভু, আমাকে আর বঞ্চিত করো না ! ’