মেডিটেশন
কিছু কথা আছে—পাখির মতো উড়ে যায়
কেউ শুনতে পায় না, শুধু তারে দেখা যায়।
কিছু কথা—শুধু বধির মানুষ শুনতে পায়।
কিছু গন্ধ দেখা যায় হৃদয় দিয়ে—
অনুভূতির দুয়ারে দাঁড়িয়ে তারে নাচে।
এক জন্মান্ধ মেয়ের কাছে শুনেছি—বাতাস দেখতে কেমন?
সে বলেছিল: আমার চোখের জলের মতো!
অন্ধকারের মতো গন্ধহীন আর আলোর মতো বধির!
তাই আমার কথাগুলো ব্যথা হয়ে বেজে ওঠে বাতাসের আড়ালে।
ঋষিঋণ
চোখ বুঁজলেই শ্মশান দেখতে পাই—
শ্মশানে বরফ জমে আছে!
কোথাও আগুন পাচ্ছি না, একটা বিড়ি ধরাবো।
আচ্ছা। আপনার খুঁতি থেকে একফোঁটা আগুন ধার দেবেন?
এই দেখেন-আমার বিড়ির ব্যান্ডের নাম পৃথিবী
পৃথিবীকে পোড়াবো, আমার হৃদয় পৃথিবীকে পোড়াবো!
রবিবাবু-একফোঁটা আগুন ধার দেবেন?
আমাদের জীবনের ধারাপাত জ্বালাবো…
ধ্বনি
একজন গর্ভবতী অন্ধকারে আলোর সন্ধানে ব্রত—
তার চারিপাশে জ্বল জ্বল করছে কালো নক্ষত্র।
মৃত্যুর নীরবতা জীবনের উৎসবকে এভাবে পরাজিত করে।
দূর পাহাড় থেকে কে যেন বাঁশি বাজায়, শান্ত ধীর স্থির সেই সুর।
সেই সুরের পথে গর্ভবতী মা হেঁটে যাচ্ছে—দিগন্তের সীমারেখা পেরিয়ে
তার পায়ের শব্দে লজ্জাবতী মথা নত করে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে—
ঘাসে ঘাসে শিশিরের মাঝে প্রাণ কিচির-মিচির নৃত্যে জেগে উঠেছে।
এসব অনুভব করে পাখিরা গাইছে—
‘আলো ও আঁধারে, জীবন ও মরণে-ভালোবাসা কথা কয়’।
মা-বাঁশির সুরকে যতই কাছে পেতে চায়, সুর ততই দূরে সরে যায়।
এভাবে মায়ের পদযাত্রা থেমে যায়, শুরু হয় নতুন সুরের—
ভূমিষ্ঠ শিশুর কান্না বাশির সুর হয়ে ধ্বনিত হয়।
আর সেই সুরে কালো নক্ষত্রগুলো আলোয় আলোয় ভরে ওঠে।
প্রশ্ন ও উত্তরের বাহিরে
কিছু কথার প্রশ্ন আছে উত্তর নেই
কিছু কথার উত্তর আছে প্রশ্ন নেই
তোমার এই চুপ থাকা প্রশ্ন ও উত্তরের ঊর্ধ্বে।
পৃথিবীতে কে কে চুপ থাকতে ভালোবাসে—
মানুষ, পাখি, মাছ কিংবা পশু—
কেউ নয়, শুধু বক্ষই চুপ থাকে নিভৃতে।
নীরব তার ভাষা-প্রেম-জীবনের ঘা।
তবুও হেমন্ত এলে সবুজ পাতা হলুদ হয়ে যায়
পাতার সাথে ঝরে পরে বেদনা।
বাবা, তোমার ছবি আজ নীরব বৃক্ষ
আমরা তার ঝরে যাওয়া হলুদ পাতা!