সঞ্চয় ভেঙে চলি
প্রকাশ্যে নয় কানে কানে কথা বলি
বয়স বেড়েছে সঞ্চয় ভেঙে চলি।
প্রিয় প্রতিভাসে আয়নায় সেই মুখ
প্রতিনিয়তই প্রতিরোধ সম্মুখ।
মুহূর্তমায় বিয়োগে বিয়োগে দিন
কখনো বিষাদ কখনোবা রঙ্গিন।
পাশ ফিরতেই কেটে যায় একবেলা
আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে রাখি অবহেলা।
যত মত তত পথ ভুল করে করে
অতিরেক প্রীতি চেঁচায় সমস্বরে।
জীবনের কাছে প্রশ্ন করেছি, তাই
বেড়াতে এসেছি এইবার ফিরে যাই।
প্রকাশ্যে নয় কানে কানে তাই বলি
বয়স বেড়েছে সঞ্চয় ভেঙে চলি।
প্রকাশে অক্ষত
গোপনে সারিয়ে ফেলি ক্ষত
আমি তাই প্রকাশে অক্ষত!
মুখোশের আড়ালেই লোকটির মুখ
সাবধান ভূষণের মাঝে পাড়ি দিচ্ছে পেছন-সম্মুখ
পরিস্ফুটনে ঐ লোকটিই আমি
প্রকাশিত আপোষকামী
দ্রুতবেগে ধরে ফেলি সুতো
যদি হয় প্রচল প্রসূত
এটা কোনও গল্প নয় সত্যিও নয়
মুখোশের ভেতরে নির্ভয়
খেলা করে আনন্দ শীৎকার
আসলে চিৎকার
শরীরে ময়লা জমে দাগ গোপনীয়
প্লাবিত জোছনার কথা তাদের শুনিয়ো
গোপনে সারিয়ে ফেলি যাবতীয় ক্ষত
আমি তাই প্রতিদিন প্রকাশে অক্ষত!
ছিন্নভিন্ন ভিন্ন তর্জনীতে
এই তো আমার পাঁচটি আঙুল
পাঁচটি ছেলে
ঐ তো আমার পাঁচটি আঙুল
পাঁচটি মেয়ে।
পাঁচটি আঙুল তিনটি ছেলে
দুইটি মেয়ে
সকালে ভুল বিকেলে ঠিক
সন্ধ্যাতে মাঝখানে
রাতের অন্ধকারে তাদের
হারায় যে ইশকুল।
এই তো আমার পাঁচটি আঙুল
দুইটি ভুলের
তিনটি যদি সত্যিই হয়
তাতেই হুলস্থুল।
ডানের আঙুল শুরুতেই ভুল
বামের চিহ্ন নেই
আমার আঙুল ছিন্নভিন্ন
ভিন্ন তর্জনীতে।
এই তো আমার ঐ তো আমার
সব মিলিয়ে দশটি আঙুল
করজোড়ে পাঁচটি আঙুল
ভিন্ন তর্জনীতে।
যাবো না তবু যাই
স্পষ্ট করে বলে দিতে পারি
যাবো না সেখানে!
তবু যাচ্ছি অবিরত প্রতিযোগী হয়ে
অস্পষ্ট ভাবেই দ্রুত এই যাওয়া আসা
লুকিয়ে লুকিয়ে খুব …..
আমি এর নাম দিই শ্লেষ-বাস্তবতা
সবাইতো যাচ্ছে বেশ কেউ কেউ নিমপাতা হয়ে
অশত্থের পাতাও বদলে মুথাঘাস হয়ে
বিবর্ণ বিষণ্ন তবু দৃঢ় তার উড়ে চলা
স্পষ্ট করে বলে দিতে পারি
যাবো না, যাবো না!
পেছনে তাকাই আর খুব দ্রুত দৌড়ে যাই
সময়কে হারাতে হারাতে নতুন সময়
আমাদের এ ভাবেই পরাভূত করে।
প্রতীকের সেই ছবি
দূরের জানালা থেকে প্রতীকের মতো
একটি সুতীক্ষ্ম তীর ছুটে আসে…
বুকের ভেতরে এই চিত্রকল্প-নদী
বয়ে চলে তিরিশ বছর।
আজ এই কার্তিকের আহত বিকেলে
প্রতীকটি ছায়া হয়ে শরীরে লুকায়।
কাছের জানালা থেকে সৌন্দর্যের নতুন উপমা
যতই দৃষ্টান্ত হোক দৃশ্যের ভেতরে বাইরে
দূরের জানালা থেকে প্রতীকের সেই ছায়াছবি
প্রখর রোদের মতো বিকেলেও নিত্য সঙ্গী হয়।
ছন্দ
ছন্দ আমাকে দেখিয়েছে আলো-পথ
পথের মধ্যে ছিল না পাথরকুচি
খোলা দরোজায় ছিল না নিষেধ রেখা
একজীবনেই জেগে ওঠে স্বকীয়তা।
ছন্দ আমাকে নিয়মের মাঝে রেখে
জানিয়ে দিয়েছে এভাবেই শুচি রতি
ছোট এ জীবনে কেন যে হুলস্থুল!
অনতিক্রান্ত বৃত্তের মাঝে থেকে।
ছন্দ আমাকে ঢেউ হয়ে কাছে ডাকে
মিথুন মুদ্রায় চলমান ছবিগুলো
রক্তে রক্তে স্রোতনদী হয়ে ওঠে
তালশাঁস কাঁপে মাত্রাবৃত্তব্যাপে।
সামগ্রিকতা
চোখের চুম্বকে আটকে আছে নদী
সেই সাথে উদ্দীপিত ঢেউ
সব নিয়ে একটি শরীর
ততোধিক, ততোধিক….
উপমারহিত বলে
সৌন্দর্যের অনুষঙ্গ হোঁচট খেয়েছে।
লাবণ্য, সুষমা এই সমার্থক যতো
কোমলতা যতোই মাধুরী
ততোই উপরে ওঠে ওই চারুশীল
এই নদী বয়ে চলে চোখের চুম্বকে
এই নদী নিরন্তর সামগ্রিকতায়।
পঁচিশে বৈশাখ
বৃক্ষের যত কথা থাকে
কাকলি কূজন বৈশাখে।
ভরা সুধা যাক বয়ে যাক
প্রতিদিন পঁচিশে বৈশাখ।
বাতাসতো ধ্বনি হয়ে ওঠে
বালিকার দেহে ফুল ফোটে।
বেগবান হয় সেই ফুল
কিশোরীর এলোমেলো চুল।
সেভাবেই নদী-স্রোত-দেহ
চৈত্রের খা-খা সন্দেহ
দূরিভূত। আবেগের ধ্বনি
ঊষালোকে সেই সুর শুনি।
সমারূঢ়া দ্রুত কাছে ডাকে
কাকলি কূজন বৈশাখে।
ভরা সুধা যাক বয়ে যাক
প্রতিদিন পঁচিশে বৈশাখ।
গোরাচাঁদ ভবন
গোরাচাঁদ ভবনে গেলে
খুঁজে ফিরি সেই মুখ সেই কণ্ঠ এবং পাখিটি
কি অবাক ধ্বনিগুচ্ছ ঢেউ হয়ে
যে ভাবে পাড়ে আসে সেইমতো
গোরাচাঁদ ভবনে গেলে সব পথ নদী হয়ে যায়
মুহূর্তে হারিয়ে ঢেউ ভুল সুরে
নিয়ে যায় অপর বেলায়
হাহাকার করে ওঠে পাখির শীষের ধ্বনি
গোরাচাঁদ ভবনে গেলে ফিরে পাই হারানো কৈশোর
শুধু নেই সেই পাখি
নাড়ি ছিঁড়ে চলে গেছে মাতৃভূমি ছেড়ে
পুরো বাংলাদেশের যত গোরাচাঁদ আছে
মানচিত্র বদলে গেছে বলে
সব পাখি উড়ে গেছে অন্য এক মানচিত্রের মাঝে।
উপুড় হওয়া নদী
একটি শিশিরবিন্দু উপুড় হওয়া নদীটিকে প্রশ্ন করে
হে নদীমাতৃক দেশে জননী আমার
তুমি কি কাঁদছ?
এই প্রশ্নে নদীর কান্নার ধ্বনি
দ্রুত বেড়ে ওঠে
না, কোনো স্রোতধ্বনি নয়, প্রবহমানতা নয়
আনন্দ শীৎকার নয়
নদীটি কাঁদছে খুব পড়ন্ত বিকেলে
তার বুকে জল নেই কেন?
রূপকথা
শিশু ও কিশোরের পাঠ্যসূচিতে রূপকথা নেই
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কিংবা ঈশপের গল্প
একুশ শতকের শিশুরা ছুঁয়েও দেখে না।
রূপকথা আজকাল বড়দের জন্য
এখন প্রতিনিয়ত রূপকথা তৈরি করছেন
রাজনীতিবিদগণ।
বদলে যায় পথের প্রকৃতি
পাড় ভাঙতে ভাঙতে কত পথ
নদী হয়ে গেল
চলতে চলতে কত বন্ধু
বন্ধুর পথের মাঝে ভেঙে দিল প্রীতি
জীবনযাপনের নানা চক্রযানে
দুর্ঘটনা সাক্ষী হয় কৌশলের কাছে
যেমন ঝড়ের পর
তাণ্ডবের চিহ্নসূত্রগুলো
ক্ষতিকেই বৃদ্ধি করে দ্রুত
তেমনই বন্যার পর
শুশ্রূষার মতো পলিমাটি
বর্ণময় করে তোলে পার্থিব জীবন
পাড় ভাঙতে ভাঙতে যত পথ
নদী হয়ে যায়
নদীও পথের মতো হয়ে ওঠে
দীর্ঘ নদীপথ
এভাবেই বদলে যায় পথের প্রকৃতি
অপ্রকাশ্য স্ফূর্তি পায় মানব হৃদয়ে।
পিতা-মাতা বৃক্ষ নিজেই
রক্ত যদি পিতৃপরিচয়
তবে সে সঠিক সুতো নয়।
লাবণ্যের কচিপাতা মৃত
সে রূপ বাইরে প্রকাশিত।
খুলে পড়ে অস্থি মজ্জা হাড়
ব্যবধান অসম পাহাড়।
যদি সূর্য ধীরোদাত্ত হয়
তবে ঘটে চাঁদের প্রণয়।
তবু চাঁদ পরাধীনতায়
নিজেকেই কুরে কুরে খায়।
রক্ত যদি পিতৃপরিচয়
আলোছায়া তখন বিস্ময়।
গাছে ফুল ফল বিকশিত
পরিচয় সেভাবেই বিবৃত।
বৃক্ষের পিতা-মাতা নেই
পিতা-মাতা বৃক্ষ নিজেই।
মুখোশের ভেতরে মুখোশ
বদলে যেতে যেতে স্বকীয়তা খুন হয় রাতে
দিনের আলোয় ফিরে আসে পুরনো আঙ্গিক
তুমি এরকমই, তিনিও, সেও, এবং
আমিও কি?
আমারও কি মুখোশের ভেতরে মুখোশ?
আমি সারাদিন আমি
আমি সারারাত আমি
তাহলে লখিন্দরকে সাপে কাটে কেন?
অনন্তের কবি
বিপাকে পড়েছে নদী ঋতুমতি নারীটিকে নিয়ে
যুবতী মধুর ঢেউ নদীটির সাথে মিশে গিয়ে
নদীস্রোত হারিয়েছে দুর্নিবার তার দ্রুত গতি
জেগেছে লাবণ্যলতা অনুপম মধুময় রতি
ওই বুকে দেহ মেলে কথা বলে নদী কল্লোলিনী
দুলে ওঠে নদীর শয্যায় সাপ নয় তার দুই বেণী।
দেহের সান্নিধ্যে অনুপরমাণু শক্তি হয়ে ওঠে
শক্তির শকটে চড়ে যে ধ্বনি বিবৃত ঠোঁটে
প্রিয় ধ্বনি শিল্পময় অবসাদ অথবা খোয়ারি
ভেঙে নদী বলে ওঠে ওকে নিয়ে পথ দেব পাড়ি
নদীকে ধারণ করে নারী যেন অভিভূত ছবি
নারীর বিদ্যুল্লতায় নদী হলো অনন্তের কবি।
বরষার পদাবলি
বরষার মতো বেগবান দিন চঞ্চল
জীবনে রয়েছে জানি অগণ্য ভ্রান্তি
বর্জ্যপ্রতিম আছে যত গ্লানি মর্মে
রেখেছি কাঁচের শোকেসে বিষাদ সাজিয়ে
এবার শুদ্ধ হয়ে যাবো ঠিক বর্ষায়
কালো মেঘ যদি গতিময় তবু বিঘ্ন
আকাশ তখন অন্ধ বন্ধ জানালা
নোনা সমুদ্র চোখের গভীরে দৃপ্ত
অশ্রু শুষেছে বিপ্রলম্ভ সাহারা
ভরা বর্ষায় চলেছে স্টীমার শরীরে
হাঁটুজলে প্রেম উথাল পাথাল বিভ্রাট
বিবস্ত্র নদী দু’পাশে প্রেমিক প্রেমিকা
জমে থাকা গ্লানি ধুয়ে নেবে বলে ভ্রান্তি
উদোম নদীর অতিথিরা স্বরবৃত্ত
এসো প্রেম এসো মনের মাধুরী মিশিয়ে
ভরা বরষার অবগাহনের সূত্রে।
সত্য ও মিথ্যা
তোমাকে জেনেছি সত্য
দীর্ঘদিন
আজ প্রমাণিত হলো
মিথ্যে।
তোমাকে জেনেছি মিথ্যা
দীর্ঘদিন
আজ প্রমাণিত হলো
সত্য।
সত্য ও মিথ্যার সংজ্ঞা
কে দিয়েছিলেন?
এখন তাকেই আমি
খুঁজছি।
নদী শাসন
বেঁধেছি পাখির বাসা নদীটির তীরে
ভাঙনের ভয় মেয়ে দেখিও না তুমি
পাড় যদি ভেঙে যায় আমি ভাঙবো না
স্রোতের নদীকে আমি শাসন করতে জানি।
শ্যামলী হাঁটুজল
নগরী কোলাহল শান্ত চুপি গ্রাম
বৃষ্টি থই থই কৃষক দিশেহারা
বৃষ্টি বর্ষায় হাঁসের জলকেলি
আকাশে মেঘ ওড়ে পাখিরা ঘরে ফেরে
এমতাবস্থায় কিশোরী শ্যামলিমা
উঠিয়ে পরিধেয় নামে সে হাঁটুজলে
কিশোরী কথা বলে হাতের শৃঙ্খলে
হাঁসেরা বাড়ি ফেরে তখনো দুই হাত
নামেনি যথারীতি মেয়েটি চঞ্চল
দূরের গাড়ি থেকে বিমূঢ় দুই চোখ
শ্যামলী হাঁটুজলে প্রেরণা উচ্ছাস
দৃশ্য সরে যায় গাড়ির গতিবেগে
সঙ্গে নিয়ে ফেরে শ্যামলী হাঁটুজল।
ঘামের মরশুমে উদ্ভাসিত তুমি
এলুমিনিয়ামের শরীরী অবয়বে উদ্ভাসিত তুমি
চোখের চুম্বকে ছন্দ সমীরণে চম্পূ জাগতিক
দরদি তরজমা তরঙ্গিনী হয় আনাজ তম্বুরা
চুড়ির ঘর্ষণে মন্দাকিনী ছোটে ঘামের মরশুমে
হৃদয় মন্থনে তখন ভূইচাঁপা উদ্ভাসিত হেমে
বিস্ফারিত চোখ বধূর মাঝে করে প্রেমিকা সন্ধান।
আরও পড়ুন: চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৩ জন (ভিডিও)