প্রতিশোধের জল
তুমি হাত বাড়ালে
আমি মুখ ফেরালাম,
কষ্টে লুকালে ব্যথা, চেয়ে দেখি
তখনো দাঁড়িয়ে তুমি পাথরের মতো,
চোখের কোনে জমেছে আঁধার
ব্যথাভরা বুকে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলে।
সময়ের ব্যবধানে একদিন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
আমি হাত বাড়ালাম,
চোখে চোখ রেখে তাকালে
কষ্টের সীমানা ভেঙে
তুমি চলে গেলে দূরে, বহুদূরে,
পিছু ফিরে দেখলো না দু’চোখ তোমার।
তোমার যাবার শব্দে
চোখের কোনে জমল বরফ
দুপুরের আলো এসে পড়লো দু’চোখে,
অনামিকা, অহঙ্কারে তুমি চলে গেলে,
আমার পাথর চোখে দিয়ে গেলে
প্রতিশোধের দু’ফোঁটা জল।
কতটা অভিমানী হলে
কতটা অভিমানী হলে, নিজেকে আড়াল করে
চলে যেতে পারো দূরে,
নীরবে ঘুমিয়ে নাও শান্তির নিশ্বাস,
তোমার ঘুমন্ত শরীর নিস্তেজ প্রাণহীন,
থেমে ছিল বত্রিশ নাড়ির স্পন্দন,
মায়ের আর্তনাদ আকাশে বাতাসে ভেসে ভেসে
শব্দহীন থেমে গিয়েছিল,
বাবার কান্নারা বোবা কান্না হয়ে অশ্রুহীন
বোনের কষ্টেরা ভাসছিল
আঘাতের নুড়ি পাথরে ভর করে
বেদনায় কাঁদছিল হাজার মানুষ,
শোকের মাতম তুলে
পাহাড়ায় ব্যস্ত ছিল তোমাকে ঘিরে,
তুমি নির্বাক পাথর
কী দারুণ ঘুমিয়েছিল,
মনে হলো কতদিন ঘুম নেই দুচোখে তোমার
যেন শান্তির বিশ্রামে নিমগ্ন শরীর নেতিয়ে পড়েছে।
মায়ের শরীরে মাথা রেখে যে শরীর লেপটে যেতো
বাবার আদরে বেড়ে ওঠা প্রতিটি সময়
কখনো বোঝোনি কষ্টের সীমানা কতদূরে,
অভিমানী তুমি, বেদনা তোমার একান্ত আপন করে
চলে গেলে, কাউকে বললে না হৃদয়ের আর্তনাদ,
কী এমন যন্ত্রনা, কী এমন বেদনা
তোমাকে মৃত্যুর মিছিলে নামিয়ে
মায়ের পাঁজর ভেঙে, বাবাকে করেছে সন্তানহীন।
শরীর
মন তো বোঝোনা তুমি, বোঝো যে শরীর
বোঝোনা সৌন্দর্য তুমি, যৌনতায় খুঁজে পাও
জীবনের মানে।
নারীর শরীর বুঝি আজন্ম শত্রু তার
কী-ই বা আছে এ শরীরে?
কল্পনায় মেলে ধরি যদি সমস্ত শরীর,
মাংসের পাণ্ডুলিপি ছাড়া কিছুই পাবে না তুমি।
প্রতিশ্রুতি
যতটুকু প্রতিশ্রুতি দিলে আশার প্রদীপ জ্বলে হৃদয়ে
দিন, মাস কিংবা বছর অপেক্ষা প্রহর গুনে
ঠিক ততটুকু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে তুমি,
বলেছিলে অপেক্ষার সিঁড়ি ভেঙে একদিন ফিরে আসবে।
বেলা-অবেলায় কিংবা সময়-অসময় ভাবিনি,
যখন যেখানে, সেখানে তোমার
পায়ের স্পন্দন পেয়েছি বলেই,
আশায় আশায় নিজেকে করিনি আড়াল।
আমার ভাবনা, আমার কল্পনা ও প্রত্যাশা,
সব যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছিল
তুমিহীন আমার পৃথিবী কতটা অসহনীয়।
তুমি বলেছিল অপেক্ষায় থেকো
আমার নিলয়ে কিংবা নিকানো উঠানে
ফিরে আসবে,
তোমার প্রতিশ্রুতির বিশ্বস্ততায়
আমি আজো আছি অপেক্ষায়।
আমার অপেক্ষা নির্ঘুম প্রহরে
জোনাকির আলো, ঝিঁঝিপোকার কলরবে কেটে যায়,
ভোরের পাখিরা সকালের বার্তা দিয়ে চলে যায়।
বৈশাখী ঝড়, আষাড়ের মেঘ যদি ফিরে আসে,
ফিরে আসে বসন্তের কোকিল,
আমার বিশ্বাস তুমিও ফিরে আসবে,
আমি তাই অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে,
তোমার প্রতিশ্রুতির প্রতীক্ষায় আছি।