করিডোর
হেঁটে যাচ্ছি হাসপাতালের করিডোরে-
দু’জন পাশাপাশি
ফিরে আসা জীবন স্পর্শের প্রলোভনে খামচে ধরে হাত
বিড়ালের মতো
উফ্! কী করছ?
ছুঁতে ইচ্ছে করছে
এত জোরে?
ভালো লাগছে!
আবারও হাঁটতে থাকা জরাজীর্ণ রেললাইনের মতো
পাশাপাশি
ফিরে ফিরে তাকানো চোখে চোখে, লাল চোখে
ভয়ানক সে চোখ যেন পুরোটা দখল করে নিতে চায়।
এবার হাতটি ছেড়ে দিলাম
দখল হয়ে গেলেই চুক্তিতে যেতে হয়
স্পর্শটুকু না-হয় স্বাধীনই থাক।
চুম্বন
ভালোবাসার প্রতীক, আনন্দের মুহূর্ত-চুম্বন
যা কোমল ও বিশুদ্ধ একটি মুহূর্তের উষ্ণ অনুভূতি
একটি মানসিক প্রলোভন।
চুম্বন-অদৃশ্য আবেগের ফিসফিস
চোখে চোখে একটি প্রতিশ্রুতি, সংযোগ
এটি এমন একটি প্রেমের ভাষা, যার কোন শব্দের
প্রয়োজন নেই।
চুম্বন-একটি মূল্যবান কিছু
একটি মুহূর্ত ধরে রাখা, কখনো ভক্তির লক্ষণ
ভালবাসার বন্ধনে কখনো একটি সীলমোহর।
চুম্বন-একটি শুরু
একটি মধ্যম এবং সবশেষে একটি পরিণতি
এটি চিরকাল ধরে রাখার মতো একটি মুহূর্ত
কারও কলম হাতে তৈরি একটি; প্রেমের গল্প।
প্রকৃতি আমার অনুস্মারক
প্রকৃতি-বন্য এবং মুক্ত
সময়ের হাত ধরে বোনা রঙের সিম্ফনিতে—
সৌন্দর্যের একটি টেপেস্ট্রি
পর্বতমালা জাঁকিয়ে উঠতেই শিখরগুলো
সূর্যের সঙ্গে চুম্বন করে
উপত্যকাগুলো নীল ও সবুজ জলের তাল
ধরে রাখে বুকে
নদী বয়ে যায় রূপার মতো গভীর এবং প্রশস্ত
গোপনীয়তায়
গাছগুলো আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়
শাখাগুলো হাত নেড়ে বিস্তৃত হতে হতে আরও
শক্তিশালী ও সাহসী হয়ে ওঠে
প্রকৃতি-বন্য এবং মুক্ত
বিস্ময় নিয়ে দেখি—প্রকৃতি আমার জায়গার একটি অনুস্মারক,
পুরনো এই পৃথিবীতে।
গোপন প্রেম
গোপন প্রেম-ছায়ায় লুকিয়ে ছিল
একটি নিষিদ্ধ শিখা যে এতটা উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে
জানা ছিল না।
আমরা জানতাম এটা ভুল ছিল,
কিন্তু নিজেদের সরাতে পারিনি
সময়টা এমন ছিল যে আমরা আঁধারেও
পতঙ্গের মতো উড়ছিলাম।
আমরা গোপনে দেখা করেছি
চুরি করা মুহূর্ত চুরি করেছি
হৃদয়ের ব্যথা, শূন্যতা, ঘাটতি সবটুকু পূরণ করেছি।
অপরাধ এবং লজ্জা, সহ্য করেছি
কেবল একটি রাতের জন্য
একটি চুমুর জন্য-যা অস্পষ্ট ছিল দু’জনের কাছেই।
আমরা জানতাম,
লুকুচুরি এ খেলা শেষ করতে হবে
বিলুপ্ত হওয়ার আগেই হারিয়ে যেতে চাইনি
তাই অবশেষে বিদায় জানালাম।
আমাদের চোখের জলে ভুলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে
গোপন প্রেমের দাফন হলো, স্মৃতিগুলো রয়ে গেল
মনের মধ্যে ভূতুরে আওয়াজ তুলে
আমি সারাজীবন আফসোস করবো
একটি রাতের মধুময় মুহূর্ত,
একটি চুমু-হারিয়ে ফেলার শোকে।
ভরসা
সোফাটাতে শুয়ে আছি সারারাত
মাথাটা ঠিক জায়গা মতো নেই, কাৎ হয়ে আছি
পা’য়ের পাতা দুটো উঁকি দিয়ে আছে—
হলুদের মাঝে কালো সুতোর বুননে নকশিকাঁথার ফাঁকে।
জীবন কাঁটায় টিকটিক শব্দ চলছে অনবরত
তার শব্দ পেলাম না, কখন এলো!
আউল চুলের ঝুঁটি বাঁধা মানুষটা গা ঘেঁষতেই
ঝাঁজালো গায়ের গন্ধে নিঃশ্বাস টেনে ধরলাম।
সে তাকালো
কী অদ্ভুত এক সম্মোহন
দেখলাম,
ও চোখে আমার জন্য মায়াজল টলটল করছে
চোখ বন্ধ করলাম
সে কাঁথাটা টেনে দিলো চিবুক পর্যন্ত
পায়ের পাতা দুটোও ঢেকে গেল।
এক সময় তার ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ টের পেলাম
খুব কাছ থেকে
চোখ খুলতেই দেখি, মুখের ওপর পড়ে আছে মুখ-
আর চোখ দুটো-যা নিশ্চয়তা ও ভরসা দেয়।