পাশে একটু বসো সহজ করে
দুগ্ধদানের মতো সহজ করে পাশে একটু বসো,
দুটো কথা বলি, নির্নিমেষ চোখে দু’মাত্রা তাকাই,
পাশে একটু বসো, আরাম করে, সহজ করে
ব্যাকরণের মতো জটিল হয়ে নয়, ডানার মতো…
অনেক ঋতু পার হলো, দেখা নেই, একটু বসো
ঘূর্ণমান জীবন—পোতাশ্রয় এই আছে তো নেই
কোথায় ঋগ্বেদমোহনা, যেখানে সারেং ও মালি
পাশাপাশি বসে বাদাম খায়, ছলাৎ ছলাৎ চুমুতে
পাড় ভাঙে, কাঞ্চনজঙ্ঘা জাগে মনের কূজনে
পাশে একটু বসো আলগোছে, পিলপিল করে—
এমনভাবে আলতো করে টোকা দাও এ দরজায়
যেন অজান্তে পাঠ করি তোমার দেহের শ্লোক…
যেন শামুক ও ঝিনুকের শোপিস, সাজিয়ে রাখি
হৃদয়ের তাকে তাকে; আরও পাশে এসে বসো
যেন এক অভয়, কবিতার মুচকি হাসি হেসে
হৃদয় আজ চোঁ চোঁ করছে ক্ষুধার্ত পেটের মতো
যেন এক জল-যাযাবর, জলে থেকেও মেটে না
বুকের তেষ্টা—দরজার পাল্লা খোলা, তবু অধিকার
নেই প্রবেশের, যেন নিষিদ্ধ এক বেশ্যা কলোনি
তবু বলি, হৃদয়ে একটু সহজ করে বসো, যেভাবে
বংশীবাদকের ঠোঁটে সুরের পালের উচ্ছ্বাস বয়
লাল নটে শাকের মতো সে ঠোঁট যেন অ্যানটেনা—
শিরার জালের মতো যেন ছড়িয়ে দিয়েছে মোহ
যেন বাগানজুড়ে কেবল ফুটেই চলেছে সুরবাহার—
বুনো গীতবিতান, ওলট-পালট হৃদয়ের বনেদি বর
ভূচৌম্বকীয় ঝড়, জ্বরের তরঙ্গে জাগাও রিখটার…
ভালোবাসায় ঈর্ষা থাকে, ঈর্ষায় থাকে ঘুণ, তবু
কারও ভালোবাসায় মিশে থাকে পশু-পাখির প্রেম
প্রেমাতুর হয় তারা, ঈর্ষাতুর নয়—যেন জলবায়ু
বারাঙ্গনার মতো জলের কলসি নিয়ে ভ্রাম্যমাণ
ঘাটে ঘাটে তৃষ্ণা মেটায় যেন সে এক স্বয়ং ব্রহ্মা
এক শরীরের তৃষ্ণা কেবল এক শরীরেই মেটে?
সে-ই তো প্রেমের রাজা কিংবা রানি, যে পুলকে
শ্লোক ছাড়ে—‘আমি যারে ভালোবাসি তার হাসিই
সব, ও মন তো তার, ও শরীর তো তার, বিচিত্র
প্রেমে মজে থাকুন না প্রেমীর শারীরিক বাগান…’
সে চায় শুধু হৃদয়নাভির ভালোবাসা—ভানহীন
পাশে একটু বসো নিসর্গ, নো মেকআপ লুকে—
ভারি সুন্দর লাগবে ছিপছিপে শরীরের পঙ্ক্তি
ময়ূরের মতো পেখম মেলার আগে সহজ হও
স্বাভাবিক করো শরীরের সমস্ত শরিয়তি ভঙ্গিমা
মারফত জেগে উঠুক ধীরে অবচেতনের পথে…
ধুয়ে ফেলে মুখের সমস্ত আস্তরণ, উড়িয়ে দিয়ে
হৃদয়ের নগররাতের সমূহ জমক কাছে এসো
একটু মিহিমিহি হয়ে বসো, মুখোমুখি হোক হৃদয়
দেহ সে তো কামের পুঞ্জি, বাতি যতক্ষণ জ্বলে
ততক্ষণই আলো, আর প্রেম তো শিখা চিরন্তনী…
পাহাড়ি ঝিরিতে পাথর ডিঙিয়ে জল যায় চলে
তবু ঠায় পাথর থেকে যায়, গড়িয়ে যায় সময়
তবু ঠায় আকাশ থেকে যায়, তেমনি থেকে যাক
আমাদের প্রেম, অশরীরী টান, বুলবুলির শ্লোক…
হৃদয়ের পাশে একটু বসো সহজ করে, যেভাবে
কবিতায় ছন্দ, অলংকার বসে যায় আলগোছে
মিসাইলি নার্স
৩৮.
পৃথিবীতে কারও কারও দুটি চিতা থাকে, দেখতে খরগোশের মতো, আঁচ করার আগেই জিব আটকে নেয়, স্বপ্নসমাধি ঘটে, জুতার বেল্ট ছেঁড়ে, অতঃপর চিতাদের বোল্টে সোনা জমে…
আন্ডারওয়ার্ল্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হলেই সংসদ কিংবা সমস্তই জলপাই রঙের কাছিম—মহাশূন্যে হারিয়ে যায়…
৩০.
প্রকৃতির হাসপাতালে অ্যাসিড ছুড়েছি, ন্যাটো বসিয়েছি, জি-সেভেনের স্তন উন্নত করেছি, শামুক ও ঝিনুকের শোপিস বসিয়েছি, প্রকৃতির হাসপাতালে অ্যাসিড ছুড়েছি…
আর কতিপয় পাখি, কতিপয় গিটারিস্ট সড়কবাতির মতো নিঃসঙ্গ-নিরুপায় ঠায় দাঁড়িয়ে নদীর বাংকারে…
ফেস মাস্ক পরে চেরিফুলের রং ঢাকা যায় হয়তো, কিন্তু জুতার ক্ষয় কি ঢাকা যায়?
৩৪.
ফস করে বেজে ওঠা ঘোড়ার খুরের মতো
ফস করে নিভে যায় অমরাবতীর দেহ
উচ্চ জিহ্বাচাপে
উচ্চ ব্যাংকঋণে…
পদ্মায় জেগে ওঠে সেতু সুন্দর অবয়বে
ঋণখেলাপির অঢেল বীর্যে
ডলার-ন্যাটোর ঘুম ছটাক
ভূমি ধানের বিনিময়ে একটু জল পাক…
ভূমি ধানের বিনিময়ে তবু হাওয়া পাক…
জানি, উপযোগিতা গাঢ় হলেই প্রসূত
পশ্চিম-মধ্যপ্রাচ্য…
জানি, বিশ্বাস গাঢ় হলে বিস্তার পায় স্তন
জাগে বালিয়াড়ি…
তবু যদি ঝুলে থাকে আমাদের আঙিনায়
আইভি লতার মতো
কিছু কার্ডিওলজিস্ট,
আরশিনগরে দেখা যেত পানিপরাগী ফুল
দেখা যেত মান্দারিন হাঁস, কিছু পারুল…
৪১.
ফুলনীতি তালিকায় আমার নামটা থাক
যে শাসনে
চুলের বেণি হয়, সে শাসন কবিতাও চায়
সে শাসনে
কারাগারনামচা নেই, আছে মায়া-রসায়ন…
ফুলনীতি তালিকায় তোমার নামটাও থাক
কাঁকড়ার মাংস খেতে খেতে বলো না—
বউটা নিষ্ঠুর, ছ মাসের শিশুটিকে হত্যা করে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গেল
মাংস, একটি মাংসাশী রাজনীতি—ম্যান্ডেটে চলে আমিষভোজী মেগা প্রকল্প
ফুলনীতি তালিকায় জুতাদের নামও থাক
সামার ট্যানাজারের লালিমায় ফিরবে একদিন
মিসাইলবর্ণের কবিতা—পৃথিবীর শেষ কবিতা!
৪৪.
তোমাদের পকেট ভারী হয়, তাই হয়তো
ডলফিন পায় অভয়াশ্রম
কোথাও কি আছে বইয়ের অভয়াশ্রম?
কোথাও কি পাও মানুষের অভয়াশ্রম?
ফার্স্ট লেডির মেরুপ্রভা দেখেছ, কী ভেলকি!
মাটির দিকে মঞ্চ সেসব ভেলকিই ছড়ায়
জমিন চৌচির লাঙলে, তবু ফসল ফলায়
বুক ফেয়ার করে ওয়াইল্ড বিস্ট পৃথিবীতে
বক ফেয়ার করে গান ও ধনুক দৌরাত্ম্যে
তোমাদের পকেট ভারী হয়, তাই হয়তো
পারভিনরা মিসাইল দেখে, কিয়েভ ধস্ত!
৪৭.
ঘুমের ড্যান্স ক্লাবে
পাখিরা ডানা মেলে নাচছে, উড়ছে…
যাচ্ছি—
নরকের
তোরণের দিকে কালো ফসিল নিয়ে
যাচ্ছি—
পাখিদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে
ডানা ঝাঁপটিয়ে আত্মদানে…
মিসাইলের গন্ধে
পৃথিবীর বনেরা ঘুমাতে পারে না,
পারে না ওড়াতে মা তার আঁচলখানি
মুক্ত বাতাসে, হিমেল বাতাসে…