পহেলগাঁওয়ের সিঁদুর
মৌন পাহাড়ের সারি দৃষ্টিসীমা থেকে যত দূরে যায় ততটা নীল হতে থাকে
নীলাভ …নীল … গাঢ়নীল পাহাড়ের শীর্ষদেশ উঁচু-নিচু বক্ররেখায় আঁকা পহেলগাঁও
নীলাকাশের দিগন্তরেখায়—যতদূর দৃষ্টি প্রসারিত করা যায় শান্ত গম্ভীর পাহাড় প্রদেশ
সবচেয়ে কাছে যে-পাহাড় সবুজ গুঞ্জনময় দীর্ঘ পাইনের সারি লতা-পাতা ঝোপঝাড়
ঝিঁঝিঁ-ডাকা-নৈঃশব্দ্যের অনন্ত প্রহরায় নেমে আসা পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ
সবুজ ঘাসের কার্পেট—সেখানে বসে আছে এক নিস্তব্ধ নারী তার স্বামীর নিথর
শবের পাশে—যতটা নিঃশব্দ পাহাড়ও জানে না হতে, মধুচন্দ্রিমার কাল অনন্ত বাসর
এখানে বয়ে চলেছে ব্যথা তার নিশ্চেতনার—একটু আগেই ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি
করে একদল জঙ্গি করোটি ফুটো করে গেছে তার, ‘এই প্যান্ট খোল, প্যান্ট খোল
দেখা তোর ধর্ম পরিচয়, নিশ্চিত হওয়া বড় দায় আমাদের ধর্মচেতনার!’
‘আমাকেও মেরে ফেলো, যখন আমার স্বামীকে মেরেছ!’ বলে চিৎকার করে ওঠে মেয়ে
তাকে দুহাতে সরিয়ে ঘাতকরা খান খান হাসিতে পরিপার্শ্বের নৈঃশব্দ্য ভেঙে বলে,
‘তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছি যাতে মধুচন্দ্রিমার আনন্দ পেতে পারো বাকি জীবনজুড়ে!’
মেয়েটির সিঁথির সিঁদুর গলগল করে গড়িয়ে পড়ে স্বামীর কপাল থেকে…
সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে এই রক্তরেখা কতদূর যাবে নীলাভ…নীল…গাঢ়নীল
পাহাড়ের উপত্যকা বেয়ে আরো কত অনাহুত রক্তদর্শনে, কে জানে?
গাজার আরশ
বোমার আঘাতে আকাশে উৎক্ষিপ্ত মানুষ
বিস্ফোরিত অগ্নিকুণ্ড থেকে ধোঁয়ার উদ্গীরণ
তার আবহে দৃশ্যমান পাখির মতো উড়ন্ত মানুষ
মানুষ দেখেনি কোনদিন উড্ডয়ন এত নিষ্ঠুর
হতে পারে, মাটির অভিকর্ষ টানে পতিত মৃত্যুর!
নিশ্চিহ্ন জনপদ, ছোট ছোট শিশুদের শব সাদা
কাফনে মোড়া; বেঁচে গেছে যারা বোমার আঘাতে
ঝলসে যাওয়া মুখ, সাদা গোলাপ রক্তে ভিজে টইটুম্বুর
ক্ষুধায় কাতর এক টুকরো রুটির জন্য উন্মুখ—
চোখে জল টলমল শুকিয়ে নদীর ক্ষীণ কালো রেখা
সব মাছ মৃত, কাদায় আটকে থাকা সব কলরব!
দীঘিনালার স্মৃতি
আগুন ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে, পাহাড়ের মতো উঁচু-নিচু
সমাহিত নয় শুধু—সে তো উত্তেজিত উত্তুঙ্গ শিখা
পারদ লাফিয়ে উঠে করে দখল সীমানা
দাউ দাউ জ্বলে জ্বর, নীল নীল জলে
ছায়া প’ড়ে কালচে রক্তের মতো রঙ তার,
গাছ তো জানে না কেন তাকে পুড়ে যেতে হয়
কবে থেকে সে হয়েছে কার উপদ্রব?
তেমন মানুষ কিছু পাহাড়ের ঢালে
আর আকাশের নীলে, মিথোজীবিতায়
করেছিল গান করুণাপরাণ—
হঠাৎ আগুন কোথা থেকে আসে?
কেন তারা পুড়ে যান?
স্তম্ভিত নির্বাক দেখে চোখ :
বাতাসে বিপুল ছাই, জলে ছায়া কাঁপে আগুনের
সে আগুন জ্বলে যায়, নেভে নাকো আর!