পরম্পরা
আজ যা কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে,
সমাজে একসময় আগাছার মতো ছিল তার প্রাদুর্ভাব—
গ্রামে-গঞ্জে শহরে-বন্দরে মোড়লের বিস্তৃত উঠোনে
সম্রাট-জমিদারের নূপুরধ্বনিত রাজকীয় প্রাসাদে;
পরিসংখ্যান বিভাগ সেই বহুপত্নীক পরিবারের কথা
ভুলে গেলেও ইতিহাস চলে যায়নি ছেড়ে আমাদের;
সতীন নাই কিন্তু সতীনদের রেখে যাওয়া ঈর্ষা ও
আগুন, বিষ ও বিতৃষ্ণা ধরে রেখেছে পুরোনো রাজত্ব
যেভাবে চলে যাওয়ার পরও রয়ে গেছে বৃটিশদের
ডিভাইড এন্ড রুল পলিসির দ্বন্দ্বমুখর সাম্রাজ্য
আকীর্ণ হয়ে বয়কট, বুলডোজার ও ঘৃণার প্রচারণায়!
ফলে আমরা যারা আজ সতীনহীন মায়ের সন্তান
তাদের রক্তেও রাজত্ব করছে বাতাসস্থ কার্বনডাই
অক্সাইডের মতো ঈর্ষা ও আগুন, বিষ ও বিবমিষা।
সেসবের উদ্গীরণ মাঝে মাঝে সংক্রমণের বন্যা হয়—
আমাদের ভাবনায় ও ভাষণে, মন্তব্যে ও মিডিয়ায়…
অকৃতজ্ঞ হাওয়া
আমাদের চারপাশে অকৃতজ্ঞ হাওয়া;
এ হাওয়া ছুঁয়ে গেছে প্রান্তরের বুক;
সেদিক নজর দেয়নিকো কেউ;
ফলে গোড়াবৈরী মন নিয়ে দিনেদিনে সে স্থায়ী হয়েছে।
পুরোনো ক’টি আমগাছ- দালানছোঁয়া নত ফলভারে—
নিয়ত শংকিত: অপবাদে কখন যে
ছুটে আসে কুড়াল করাত!
আর এত যে ভোজনপর্ব-নগরীর সরু বারান্দায়,
এখানে-ওখানে,
তবুও কোনোখানেই ঢেঁকুরের ধ্বনি নেই।
আর কী করেই বা থাকে!
রীতির খেলাফ হলে কলংকিত হয়
আমাদের উদ্ভাসিত অহম এবং জীবনের শীর্ষবিন্দু দুই-ই!
তাই আজ কদলিবৃক্ষের পায়ে সমানত নমস্কার!
কেননা যে ওষধিদর্শন সারস্বতজ্ঞানে
সবিশেষ বিবেচনায় শাশ্বত হয়েছে!
তাই হয়তোবা বটবৃক্ষ ছাড়ে জনপদ,
প্রান্তরের নিরাশ্রয়বিন্দু!
আর এক অদ্ভুত নীরবতার সায় পেয়ে
অশ্বত্থের ডালে বসে গোড়া কাটে
অদ্ভুত করাতি; অথবা ভাগ্যবান
শাখামৃগের পুচ্ছখোয়া গর্বিত প্রজন্ম!
অধিকন্তু, বিজ্ঞাপিত আবিস্কারে অধিগত এই যে
অস্তিত্বের চূড়ান্ত ত্রিলোকে প্রতিটি মানুষ
স্বয়ম্ভূ আপনঈশ্বর।
আর কেন যেন শাখামৃগের হিমযুগীয় যোগসূত্রে
সায় নেই অনেকেরই আজ।
তাই তো গতকাল ছিলোই না;
এবং আগামীকাল শূন্যতার মহাগর্ভ।
তবে আর থাকে কী বলুন-
অসম্বদ্ধ আমি আর উল্লসিত আজ ছাড়া!
তাই কেন যে মহাপুরুষ নির্বংশের অপবাদে
শুধু শুধু মন ভেঙেছিলেন!
এহেন প্রেক্ষিত যখন তাহলে আর খোঁড়াখুড়ি কেন
উৎকণ্ঠিত কে ছিল গতকাল—
আমার বা আমাদের আঁতুড়ের দ্বারপাশে, আদৌ ছিল কিনা!
জয় পরাজয়
একদিন দিয়েছিলে নিজহাতে সোনার তিলক
সে নয়, নিজেই তুমি সবখানি ধন্য হয়েছিলে
তারি নামে উঠেছিল সাতরঙা সোনালি শোলক
সখার গরবে তুমি সেই কথা মুখে নিয়েছিলে।
যেখানেই ভাষা আছে , প্রেম আছে, আছে বর্ণমালা
যেখানেই সত্য রুদ্ধ, প্রেম রুদ্ধ, রুদ্ধ উচ্চারণ
যেখানেই কাঁপে প্রাণ হাতে নিয়ে বরণের ডালা
সেখানেই তার কথা ভালোবেসে সতত স্মরণ।
আজ তুমি ভয় পাও? চাঁদ দেখে বুজে নাও চোখ?
পেঁচা হাসে নখে বিঁধে হেমন্তের যমজ ইঁদুর
বাদুড়ের পাখনায় বেজে ওঠে আলোকের শোক
কাঁটাতারে সাড়া জাগে, বেজে ওঠে পরাজিত সুর।
চেয়ারে আসীন লোভ; পাহারায় প্রলুব্ধ সিপাহী
দালালেরা পরামর্শ; দুর্বলেরা দ্রুত হাততালি
সুবিধাবাদীর হাতে তেলভরা তেলের সুরাহী
গুণীজন চুপচাপ তার হাতে শুধু হাতখালি ।
তুমি তো সুবিধাবাদী ভুলে আছো টিপ উৎসব
দালাল-নেতার চোখে চেয়ে আছে দুচোখ তোমার
নেতার নিষেধ? আজ তাই বুঝি তুমিও নীরব?
লোভের খোয়াড় হাসে, জ্ঞানকণ্ঠে কুত্তার কলার।
কথা বলে রূঢ় কণ্ঠে ত্রিকালজ্ঞ ধূসর অতীত
যতই দুহাতে সাঁটো শব্দবৈরী তুলো দুই কানে
আমি কিন্তু চোখে দেখি সবখানি তুমিই পতিত
সোনালি শিষের সুর বেজে যায় হেমন্তের গানে।