অমা
কার ভাগের বলিদান এই নিরস রাত্রিতে কে পেয়েছে ভাগ্যে, কে কখন কোথায় প্রস্তাব রাখছিল ঠুনকো প্রণয়ে কিংবা ও-হে মরমি বাউল পাশের জেলা নরসিংদীতে একজোড়া চোখ কী করুণ, বরুণ—তবুও জেগে কি থাকে এই পাষণ্ড শিকারির পথ চেয়ে? দূর থেকে মনে হবে মৃত, জন্মক্ষরা সেই গ্রাম যার প্রতিটি নাগরিক অন্ধ; অন্ধকার খুঁড়ে খুঁড়ে অনাদিকাল খুঁজেছে তারা আল্লা-রসুলের ক্ষমা মার্জনা
অমা, এই ভাবে বিষণ্নতা ছড়াও। গোখরোর পাশ দিয়া হাঁসগুলো ভয়হীন চলে যায়, ক্ষয়ে যায় মৌন বিধবার জ্যোতির্ময় যৌনতা
গণনা
নিজের দোষে বিষ ছড়ায়া যায় দেহে। গণনা করে দেখি অলকানন্দার রঙে মিশে যায় ঋতু কিংবা তার ছোট বোন মাধুর্যের হি হি। মিহি যে গন্ধ গরমে ধীরে অতি ধীরে ছড়িয়ে গেছে বগল থেকে শরীরে, তার খেয়ালে আবিষ্ট মন জেগে থাকে। থেকে গেছে সনাতন রূপ, আহা—বহুদিন মগজে এমনি ফিরে তেড়ে আসে ছলনার ছিনাল—বৈরাগ্যের পথে দেখা হয়, দেখি জেগে আছে ভাঙা অবলুপ্ত নারী। বয়ে যেতে যেতে নদী, তারও তো নজর পড়ে চুপচাপ সেতুটির মুখ
ডেডবডি
সমগ্রজীবন জুড়ে সমস্ত চলে যাওয়াটুকু একরাশ। গোপনে মরে গন্ধ ছড়াচ্ছো প্রকট, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণরত হঠাৎ বালকের ভাগ্য। নরসিংদী রেল স্টেশন; যেখানটায় ‘নরসিংদী’ নামের সাইনবোর্ড সেখানেই রাখা হয় ট্রেনে কাটা ডেডবডি আর সমস্ত স্টেশন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ডোডো ও দোয়েলের কিচির-মিচির, লালা। লাশের শরীরে থাকে অতীত মানুষের গন্ধ ও স্মৃতি, কখনো কখনো মশারি ছেড়ে ওঠে আসা ভাতঘুম। মানুষ জানে না কোথায় থামতে হয়, কোথায় থেমে গেলে জীবন ফিরে পায় গতি ও একটা রঙ-বেরঙের শবযাত্রার মিছিল
পতিদাহ
পতিদাহ প্রথায় প্রতিদাহে দাহে, যেন ঋতুরহস্যের ছুরি
কী কঠোর, কঠিন এই দেহটারে ফালি ফালি করে কাটে
ফতুর হয়া গেছি একটা মাত্র নামে; কী ধার, কী মায়া
যেন গমখেতের উপর জন্মানো বত্তাশাক তুলতে থাকা
কিশোরীর স্তনে ও বগলে বয়ে যাওয়া ফাল্গুনি হাওয়া
ডাক
প্রাণহীন মরাকাঠে তার লাগিয়ে ধনুক তন্তুর সুরে গান গায় বাউল, তবলা বেজেই চলে একাধিক বাজনাদারের হাতে। বাজনাদার, বোঝ কি সেই সুর? বোঝার বাইরে বিসর্জনের দুঃখে বাজে যে ঢোল, করুণ?—বাউলমন সবটা জানে না একদিন যা ছিল, ছিল; সব চুকে বুকে গেছে নিজমৃত্যুতে বৃষ্টির দিনে লাশ কবরে রেখে মাটি চাপা দেয়ার পর প্রাণ ফিরে এলো দেহে; আত্মীয়-স্বজন বাড়ি যেতে যেতে শুনল না মাত্রই কবর দেয়া জীবিত লাশটার ডাক।