বেদনার সমান বৃক্ষ
(শহীদ কাদরীকে)
কোনো আগুনই মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়া পরিণতি পায় না
কোনো নদীই উজানের আহ্বান ছাড়া নির্মাণ করতে পারে না,
ভাটির ঘূর্ণন। কোনো বেদনাই আকাশকে সাক্ষী না রেখে—
পারে না ধারণ করতে তার জীবনের সঞ্চিত আয়ু।
বেদনার সমান বৃক্ষে যতগুলো পাতা,
কিংবা সূর্যের লিখিত উপাখ্যানে মানুষের পঠিত যতোগুলো পৃষ্ঠা—
মূলত সেগুলোই থেকে যায়। পাতা ঝরে ঠিকই,
কখনো মলিন হয়ে যায় পৃষ্ঠার অক্ষর,
মাটিতে-কাগজে, পড়ে থাকে কিছু স্থায়ী কান্নার দাগ।
ছাই ও ছন্দের সকাল
ছাই উড়ছে। ছন্দ উড়ছে। পাখিদের পায়ে-পায়ে
আঁকা হয়ে যাচ্ছে যে ভোরের আলপনা, আমি একদিন
সেই রেখামাত্রা থেকে তুলে আনতে চেয়েছিলাম
তোমার অলিখিত কবিতার চিত্রকল্প। বসতে চেয়েছিলাম
তোমার হাতলওয়ালা চেয়ারে।
কয়েকটি পাপড়ি দিতে চেয়েছিলাম উড়িয়ে হাওয়ায়,
কয়েকটি রেণু-ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিলাম ইস্ট রিভারে
উপচেপড়া আগুন থেকে নিতে চেয়েছিলাম নির্বাক উষ্ণতা
যেভাবে সবস্মৃতি মুছে দিতে দিতে শ্রাবণ তার শ্রী ফিরে পায়।
পতঙ্গের পুনর্বাসন
আমি আবার লিখতে চেয়েছিলাম জাগতিক পতঙ্গভাষ্য
আমি আবার শুনতে চেয়েছিলাম কবি’র নেওয়া
হাওয়াবাগানের সাক্ষাৎকার। যে বাগানে একদিন
প্রজাপতিরা খেলতো মঙ্গলসান্ধ্য খেলা, জোনাকীরা—
আলো ছড়াতো তাদের নতুন সংসারে, অভিসারে
প্রেমিক দাঁড়াতো তার প্রেমিকার পাশে, শিল্পসম্ভবা রাতে।
যারা পতঙ্গের পুনর্বাসন চেয়ে ছড়ায় শর্তহীন ভালোবাসা—
আমি তাদের জন্য রেখে যেতে চেয়েছিলাম
একটি বিষ্ণুবৃক্ষ ক্যানভাস,
আগামী দুইশত বছর ধরে যে চিত্রকর
আঁকবে ছবি, জীবের-জীবনের
যে কবি সেই সুতোর গায়ে পরিয়ে দেবে তীর্থপরিধান।