আকাশ পোড়ার গান
চন্দ্রমুখী ফুল পোড়ে রাত্রির আগুনে
চতুর মেঘেরা ওড়ে—হাওয়ায় হাওয়ায়
ঘুম ভুলে জ্বলে যায়—গলে যায় চোখ
নাভীমূল কাঁপে কার ঘরের দাওয়ায়?
করো প্রশ্ন—জবাবের আশা ছেড়ে দাও
মধ্যপথে থেমে গেলে বাউল ফকির
একতারা বাজে আর বেদনার মতো?
বয়স্ক দুপুরে কাঁদে রাখাল বধির!
লেগেছে নীল আগুন—ঘুম গেছে দূরে
আকাশও অভিমানে যায় পুড়ে-পুড়ে!
নিষিদ্ধ করতালি
হঠাৎ কোথাও ভাঙলো কারও ঘুম
আকঁছে ছবি পিকাসো না দালি?
আলোর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে পথ
উঠলো বেজে নিষিদ্ধ করতালি!
কেউ বলেছে, রা করো না আর
কেউ বলেছে সব মেনে নাও আজ
বাঁচতে চাইলে মানিয়ে চলো সব
প্রতিবাদের নেই তো কোনো কাজ।
কেউ বলেছে, এবার লড়াই হবে
পথের শত্রু কাটবো ফালি ফালি
বিশ্ব হবে সীমান্তহীন, শুনে
কেউ দিলো ফের নিষিদ্ধ করতালি?
আমার কথা বলবো শঙ্কাহীন
কিসের কারা, কিসের শেকল ভয়
জন্মস্বাধীন পাখির মতো আমি
ভালোবাসার আকাশ করবো জয়।
নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে মন
কার বুকে আজ ঘুমায় বনমালী?
রাধা খোঁজে বৃন্দাবনে শ্যাম
কৃষ্ণ দিলো নিষিদ্ধ করতালি!
চৈত্রে কেন
দুলিয়ে কোমর শাড়ির ভাঁজে তুললে যখন ঢেউ,
আমার তখন দৃষ্টিজুড়ে উড়ন্ত গাঙচিল,
ফেললে ছায়া প্রেমিক হাঙর মাতাল কোনো স্রোতে
নদীর বুকে প্রেমের পদ্যে ছায়ারা ঝিলমিল…
চৈত্রমাসে হঠাৎ কেন কোকিল ডেকেছিল?
কথা ছিল বুকের বামে সমস্ত রাত রেখে
সিঁদুররাঙা গালের তিলে গোপনে ঠোঁট চেপে
উড়িয়ে হাওয়ায় শাড়ির আঁচল, ব্যস্ত রেখে চোখ
দুহাত রেখে বুকের খাঁজে চাঁদ চেনাবো মেপে…
স্বপ্নে হঠাৎ হাতির ঝিলে ফাগুন ডেকেছিল?
সে রাত যেন রেশম রেশম কাদা মাটির চর
চোখের নদী তুললো কি ঢেউ? বাতাস ক্ষেপেছিল?
বেসামাল এক রাত্রি যেন দেহে কাঁপন তুলে
তোমার বুকের বসনখানি উড়িয়ে নিয়েছিল!
শরীর কেন হঠাৎ কেঁপে জোয়ার এনেছিল?
কন্যাকে লেখা পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম চিঠি
[প্রিয় কবি আসাদ মান্নান, আপনার পরামর্শ মনে রেখে]
বাবা তো ক্রন্দনরত পাহাড়ের নাম
গোপন রক্তক্ষরণে
ক্রমাগত ক্ষয় হয়ে জীবনের আয়ু
অন্তহীন তৃষ্ণা বুকে নিয়ে জেগে থাকে
সাহারা—সাহারা!
বিগত নহর স্মৃতি ভেসে ওঠে যদি
বুকে তবু মরুতৃষ্ণা—চোখ ছল-ছল
দূর মেঘে ছেয়ে গেলে হৃদয় সাগর
একটি তারার বাতি কেন জ্বলে ওঠে?
মিথ্যে সব মায়া-স্নেহ—অথবা সঙ্গত
কোনো এক ঝড় ওঠে সমুদ্রে-প্রান্তরে
নবীন নাবিক একা পারে না দাঁড়াতে
শক্ত হাতে ধরে তবু ছোট্ট বৈঠাখানি
জীবনের ঘাটে ঘাটে ভেড়াতে সাম্পান
দুচোখে জ্বলন্ত সূর্য—দুচোখে আগুন
মগজে তুফান তুলে দুরন্ত দুপুর
শূন্য আকাশকে ডাকে নদীর অতলে
হাঙরে-কুমিরে চলে সমস্ত বিরোধ
ত্রস্ত মাছেরা পালায় ভূতলে- পাতালে?
হয়তো না, হয়তো হ্যাঁ। অথবা সঙ্গত
কোনো কারণ ছাড়াই—
নিভে আসে পশ্চিমের জোনাকির আলো।
মানুষের ইতিহাসে
বেঁচে থাকে লালমাছিগুলো।
বাম চোখে তারা জ্বেলে স্বপ্ন আঁকে যারা
যারা গায় পৃথিবীর চিরায়ত গান
যারা শোনে রাত্রির নিশ্বাস
তারা জানে পৃথিবীর তিনভাগ জলে
মিশে আছে দশভাগ বাবার হৃদয়!
ঘুমোতে যাওয়ার আগে
আমাদের মগজের ডান পাশে তুমুল রাতের শিস দিয়ে
একটি ক্ষুধার্ত বাঘ খুব প্রজ্ঞায় হাঁটেন, আর অন্ধকারে
হৃদয়ের আলো জ্বেলে ভয় দেখান কেবল
অথচ, এই প্রেমিকা একদিন খেলাচ্ছলে নিজের আঙুল
কেটে রেখেছিলে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে।
আমরা যারা নিজের চোখ আর হাতকে বিশ্বাস করি না
যারা বহুবার নীল সূর্যের বরফ গলতে দেখেছি
তারা কেউ নিজেদের মুখ দেখতে চাইনি।
নিজেরা কতটা বাঘ;
কতটা ঘোলা পানিতে তীব্র ঢেউ তুলে পান করি…
এসব প্রশ্নের কোনো জবাব খুঁজিনি।
তবে, শেষবার খুব সূর্যরাঙা মেয়েদের কোমরের জলে
আস্ত একটা হাঙর দেখে হেসে উঠেছি প্রেমিক!