বার্থোলোমাসের গ্রামোফোন
এ কেমন গ্রামোফোন বার্থোলোমাস!
সারারাত ঘুরছে…
গগন শিরীষের গুঁড়ি কেটে বানানো—
গ্রামোফোন ডিস্ক।
এ কি সেই বৃক্ষ!
নাকি বর্ষীয়ান বৃদ্ধের যাপিত জীবনের
সকরুণ পুঁথিপাঠ।
রাত জেগে শুনছি
পাখিদের খুনসুটি, ভালোবাসা, সংসার
গা বেয়ে শুঁয়োপোকা উঠে যাওয়া শিহরণ
বাতাসে ভাসতে থাকা পাতার সবুজ
কাছাকাছি মানুষের পায়ে পায়ে হেঁটে চলা
কথা বলা
কাছে আসা-দূরে যাওয়া
আশ্লেষে চুমু খাওয়া
ঋতু পরিবর্তন
নগর পত্তন।
হঠাৎ দূরে কোথাও কুকুরের কান্না
তখন অনেক রাত।
ডিস্ক ঘুরছে…
কাছে আসছে জোড়া জোড়া পা
পারস্পরিক কথাবার্তা-মাপজোখ—
ধাতব আওয়াজ
ঘর্ঘর-ঘর্ঘর…
দাঁত বসিয়ে দিচ্ছে ধারালো করাত!
বৃক্ষের আর্তচিৎকার!
রোড ডিভাইডার রেলিঙে
মাস কয় কাজ শেষে
বৃক্ষবাকলের আদলে দৃশ্যমান—
নকশা কাটা কংক্রিট রেলিঙ।
কাজের ফাঁকে হয়তো কোনো এক শিল্পী
মনের খেয়ালে কখন এঁকে চলে গেছে
খুঁটির আড়ালে এক এঁকেবেঁকে উঠে যাওয়া…
খেয়াল করেনি কেউ আসতে যেতে
কালো সেই রেলিঙে লেপ্টে থাকে
গুল্মলতার সাথে ডোরাকাটা সর্পিল…
রাত হলে হাইওয়ের গাড়ির আলোয়
চকচক করে ওঠে
আচমকা নড়ে ওঠে—
রেলিঙে পেঁচিয়ে থাকা
আস্ত অজগর !
নারদ নদের কথা
নারদ নদের বুকে জল নেই।
পাঁকে পাঁকে ফুটে আছে অজস্র পানাফুল—
পানাফুলে মুদ্রিত ত্রিনয়না শিব।
ও গঙ্গাধর,
মৃত এ নদের পারে প্রতি সন্ধ্যায়
একা একা বসে কাঁদে তোমার গৌরী!
কত দাক্ষায়ণী কিষাণী
কিষাণের সাথে—
চৈতালী দুপুরের সতীদাহে আজো
পুড়ে পুড়ে মাটি খুঁড়ে—
ঢেউখেলা নারদের বুকের কল্পনায়
আলপনা আঁকে।
সাজায় ভক্তিভরে
সবুজ মাঠের ঘাসে
সার সার রসুনের ফেনায়িত ঢেউ।
হাত বাঁধা মুখ বাঁধা নারদের লাশ
পড়ে আছে কবে থেকে উৎসমুখে!
ও শঙ্কর,
তৃতীয় নয়ন খোলো
ডমরু বাজাও—
তুমুল গঙ্গাধারা জটা থেকে
দাও, খুলে দাও!