মধ্যবিত্ত
মেঘের আড়ালে সময় গড়ায়, বেড়েছে বয়স
এখনো নিজের কান্না পেলে, হাতে তুলে নেই হাওয়াই মিঠাই।
এ-ফাঁকির মানে কি জানেন?
মিথ্যা প্রতিশ্রুতি জেনেও পুজোয় নতুন জামা; ভাবতেই ভালো লাগে!
বৃদ্ধাশ্রম
অভিধানে বৃদ্ধাশ্রম শব্দটা যতই স্বস্তিদায়ক হোক,
তবু মাটি আর শেকড়কে অস্বীকার; বৃক্ষের জন্য তো আত্মঘাতী!
চাইলে তুমি করতে পারো খাঁচার ব্যবসা,
শুধু জেনো, পাখিদের প্রিয় কিন্তু গাছ ও মুক্ত আকাশ
সিদ্ধপুরুষ
তিন নম্বর গলির মাথায়, জোছনার ঘর।
আলো ক্ষীণ হয়ে এলে; কার পায়ের শব্দ?
কারাই-বা গোপনে সিঁদকেটে
চুরি করে কামিনীকাঞ্চন?
মাফলারে মুখ ঢাকা; চাদরের ফাঁকে দেখি খয়েরি শার্ট!
ভোররাতে স্নান সেরে ঘরে ফিরে আসে দিবালোকের সিদ্ধপুরুষ।
শিল্পফাঁদ
সাঁতার শিল্পকে ঘিরে এইযে দ্বিধার ফাঁদ,
অথচ জানেন; যদিও সুইমিংপুলের মতো দেখতে, তবু ওতে পানিই নেই?
খামোখা বিবর্তনের ধুয়ো তুলে কেউ-কেউ;
ধনুষ্টংকার রোগীর মতো হাত-পা ছুড়ে দক্ষ সাঁতারুর ভান করে।
যে ক্যানভাসটা দেখে অনেকেই বলে গেল, ওয়াও!
চিত্রশালার রক্ষীরা জানালো; আসলে ওটা তুলি মোছার এক পরিত্যক্ত ইতিহাস।
দেশ্যালয়
নিষিদ্ধপল্লীর ঘোরলাগা একসময় ঘড়িতে, রহস্যের মজমা।
আমজনতার যেহেতু যৌনাঙ্গ-সর্বস্ব ইজ্জতের গণ্ডি,
আর-তাই; পায়ে-পায়ে দ্বিধার শেকল।
অথচ সাহসে; সেকেন্ডের ঘরে উঁকি দিলে, ঘ্রাণে টেরপাই বাবুদের উপস্থিতি।
সারি-সারি তুঁতগাছের ডালে, পাঙ্গপালের নাচন,
আমাদের সিল্কপল্লীর গল্পটা এমন; রেশম পোকাই যেখানে অচ্ছ্যুত!
নন্দিত বিপন্নবোধ
ম্যালা; মেলা আজ আর নেই।
কার ইশারায় গুটিয়ে গেছে যাত্রাগানের আসর?
পুতুল নাচের সুতো এখন কার হাতে?
সেখানে আজকাল বিরান মাঠ,
কেবলই ঘোড়ার ক্ষুরে-ক্ষুরে ধুলো ওড়ে।
এদিকটায় ক্যাকটাসের তুমুল নাচ,
ঘাগরির আড়ালে সঞ্চিত ঘাতক ছুরি
এভাবেই জমে ওঠে লোভের আফিমে জুয়ার বোর্ড।
ভাবি;
যে স্কেলটার দু’ধারেই ক্ষত,
কী-করে সে সরলরেখার স্বপ্ন দেখায়!
শার্ট
অতিশ্রেণী বাদ দিলে,
শার্ট মানে গায়ের ওপর একটা আলগা কাপড়ের আস্তরণ;
চেনা ঘামের ঘ্রাণ,
টুকরো কাপড়ের সম্মিলিত কারুকাজ
যার পকেটে লুকিয়ে থাকে একেকটা সংসারি গল্প।
আর হাত থেকে পকেট তো কারও কাছে, মহাকাশ সমান দূরত্ব!
বোতাম আর বোতামঘর?
সে তো, পোস্টমর্টেম শেষে জুড়ে দেওয়া একেকটা দরকারি সেলাই।
আমরা ঘাড় পাল্টাতে পারি-না বলেই;
দুরারোগ্য ক্ষত নিয়ে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে কোনো-কোনো কলার।
আরও পড়ুন: নির্বাচিত নবীনের কবিতা