ঘাট
ছেড়ে গেছে নৌকা, ছেড়ে গেছে ঘাট! একই জল, একই নদী; মানুষ তবু ঢেউ গোনে, পারাপার করে, পারাপার হয়। মাঝির বয়স বাড়ে, বানের স্রোতে নদীর ভরা যৌবন টের পায় মাঝির বৈঠা! ঘাটেরও বদল হয় স্থান!
সম্পর্কেরা তিক্ত হতে হতে বিভক্ত, বিস্মৃত। পারমাণবিক বিভাজন ছুঁয়ে গেছে লোকালয়, দিগ্বিক ছুটে চলা জ্ঞানশূন্য মানুষেরা প্রশংসা প্রার্থী। জনহীনতাকে ভালোবেসেছিল যারা, তাদের খোঁজে যাবে এই জীবন…
মরা গাঙে জোয়ার আসে হয়তো, মরা মনে ফুল ফোটে কদাচিৎ, অথবা অনূঢ়া যুবতির অপেক্ষাও একদিন শেষ হয়! এইসব ইতিবাচকতাই বাঁচিয়ে রাখে পৃথিবীকে! তবু কেন এত নৈরাশ্যবাদীর মিছিল! এত হাহাকার!
পরম মৃত্যুবীজ বুকে নিয়ে বেঁচে থাকি প্রতিদিন, মৃতের সংসারে হাসি, কাঁদি, ঘুমাই; জেগে ওঠার ভাণ করি! মানুষের মুখ দেখে ভয়কে শনাক্ত করি! রক্তশূন্যতাবোধে নিশ্চল হতে থাকি আর পেছনে ফেলে আসি নিশ্চিত অতীত।
নদী নারী ও নগরের গল্প
নদী বলতে বুঝি মাটির দু’পাশে সরে যাওয়া, নদী মানে অবিরাম জলের স্রোত। কারও কাছে নদী মানে দুঃখ! পার ভাঙার শব্দে ঘুমভাঙানি রাত! জল যেমন গড়িয়ে নামে, দুঃখও তেমন! চোখের সামনে বসতবাটি নেমে যাওয়ার দৃশ্যকেই নদী বলে জানে তারা।
আমার কোনো নদী নেই, চোখের সামনে জলের উচ্ছ্বাস নেই, চেনা দৃশ্যাবলি স্রোতের ভাঙনে নেমে যাওয়ার স্মৃতিও নেই! অথচ বুকের ভেতর কেবলই ভাঙচুর! কেবলি ধসে পড়ার শব্দ! কেবলই বয়ে চলার ক্লান্তি!
বিকেলের আলো খেলা করে জলের চূড়ায়, ভাঙা ভাঙা ঢেউগুলো আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে চলে যায় মুহূর্তে! শহরের কানাগলিতে সন্ধ্যা নেমে এলে যেমন ভাসমান মেয়েগুলো মিলিয়ে যায় অন্ধকারে!
নদী, নারী, নর, নগর-শুধুই কতগুলো শব্দ নয়। গ্রাম পতনের যেমন ইতিহাস আছে, নগর পত্তনেও থাকে অনেক মানুষের গ্রাম ছেড়ে আসার গল্প! অনেক শ্রমিকের রক্ত জল হওয়ার ঘর্মাক্ত দীর্ঘশ্বাস!
আয়ু
দীর্ঘায়ু হও…এই বলে প্রার্থনা করেছিলেন যারা, তারাও একদিন আয়ুর স্বল্পতায় দেখে যেতে পারেননি আমাদের জীবনের দৈর্ঘ্য! আয়ু দীর্ঘ হলে দুঃখরাও দীর্ঘ হতে থাকে, একে একে ছুঁয়ে দিতে হয় জীবনের আনাচকানাচ।
পলেস্তারা খসে যাওয়া পুরনো ইটের দেয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দৌড়ে চলা শৈশব ফেলে আসতে হয় স্মৃতির ঘাটে। আয়ু দীর্ঘ হলে মায়া বেড়ে যায় শুধু! আর কমতে থাকা চোখের জ্যোতি ঝাপসা হতে থাকে ক্রমশ।
আয়ুর দৈর্ঘ্যের অভিশাপে একদিন একে একে ছুঁয়ে আসতে হয় প্রাক্তন প্রেমিকাদের সমাধিফলক! পেরিয়ে যেতে হয় অজস্র শবযাত্রা…