স্ফুরিত
শরৎ-পূর্ণিমার আকাশ ক্যানভাস, মেঘের ভাঁজে-ভাঁজে কত দোল। শাদা-নীল মেঘ দুলে-দুলে মিলিয়ে যায় দৃষ্টি’র বহু দূর, অথবা মেঘই গোপন বার্তাবাহক, নৈঃশব্দ্যে প্রাপকের ঠিকানায় ছুটে যায় রাত ফুরোবার আগে।
রাতের রঙ চোখে জমা হলে, নির্জনে ঈশ্বর খুঁজতে গিয়ে, সংজ্ঞাহীন এঁকে ফেলি স্ফুরিত তোমার মুখশ্রী। মেঘদূত বয়ে নিয়ে গেলে সেই আঁকা, অন্তরীক্ষে চোখ রেখে চিত্রীকে দেখতে পাও?
প্রবাহিত সময় জুড়ে খোলা আকাশের ভরা চাঁদের আলোয় পুড়ে যায় দূর পাহাড়ের বন, শ্যাওলা পড়া ঘাটে বাঁধা নৌকোটি কী বলে পাড় ঘেঁষা কাশফুলকে, কেউ জানে না…
নিথর
ঝিঁঝি পোকার ডাকও অসহ্য লাগে। সেলাইয়ের বড়সড় ফোঁড়ে বন্ধ করে দিতে ইচ্ছে হয় এদের শব্দ করার মুখ। বাতাসের শব্দও বিরক্তিকর বাদ্যযন্ত্র হয়ে বেজে ওঠে, দিগ্বিদিক্ শূন্য হয়ে ধেয়ে আসা সন্ধ্যাগুলোতে। পৃথিবীর কাল-রেখায় এই-ক্ষণগুলোকে কেন জন্মাতে হয়, তা-জানিনে, সুনীতি। শুধু মুছে দিতে ইচ্ছে করে সমস্ত মিথ্যে পাখির ডাক, যা উড়ে যেতে চায় পুড়িয়ে দিয়ে বোরোধানের খেত এবং শীত নেমে আসা শাল মহুয়ার বন।
বৃক্ষান্তরাল
রাতের নৈঃশব্দ্যে কান পেতে নীরবে তার নিশ্বাস শুনি। প্রতিটি নিশ্বাস দিনে ঘটে যাওয়া একটি করে গল্প, যার রচয়িতা প্রকৃতি, আর শ্রোতা নির্জন বৃক্ষ।
ঘন রাতে জানালার কোল ঘেঁষে, আমি যখন কবিতা যাপন করি, ১৮ নম্বর হাউজের প্রিয় হাসনাহেনা বৃক্ষ, তুমি কি শুনে ফেলো আমার ভেতরের অস্পষ্ট ভাষার অব্যক্ত গদ্যগুলো? তোমার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে রাতের যে প্রহরী, তার নিকোটিন ধোঁয়ায় সুবাস গুঁজে দিয়ে, তুমিও কি শুষে নাও কিছু নেশা?
আচমকা রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে গলির মোড়ে একদল কুকুরের ব্যথাতুর ডাক, কী লিখতে চায় রাত্রির পিঠে?
তখন সুদূর কোনো গ্রামে পদ্ম দিঘিতে থেমে গেছে হাঁসের জলকেলি। পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি নারিকেল গাছ চিরল চিরল পাতায় লিখছে শান্ত জলে পূর্ণ-চাঁদের সাঁতার, ঈশানকোণে ধানক্ষেত ফালিফালি করছে মোহন বাঁশিসুর!
নক্ষত্রতিলক
দোলপূর্ণিমা রাতে আকাশে তর্জনী তুলে দ্বিখণ্ডিত করি ১টি নক্ষত্র, তোমার ললাটে ফেলব বলে। ভূমণ্ডলের বহু দূর হতে বিস্ময় জাগানিয়া হে, তুমি হয়ে ওঠো সুন্দর–আমি হয়ে যাই তোমার ললাটতটের নক্ষত্রতিলক।
জোনাকি
গহিনে থাকা নিশ্চুপ পাখিটি ছুটে যেতে চায়, ডানায় জড়িয়ে আজন্ম জমে থাকা শতসহস্র হলুদ চিঠি। বসন্তদিন থেকে সূর্যমুখীরঙ নিয়ে আত্মমগ্ন অক্ষরগুলো উড়ছে আলো জ্বেলে জ্বেলে। কাগজে সাজাতে পারি না কিছুতেই। ডানায় ভর করে এলোমেলো অক্ষরগুলো না লেখা বাক্য হয়ে চলে গেলে তোমার কাছে, তাদের তুমি ‘জোনাকি’ বলে কাছে ডেকো!