বিশ এক বাইশে মাঘ
দুটি চোখ পরস্পর কেউ কাউকে কিছু না বলে
দুটি কদবেলের পরিপূর্ণ স্বাদ চেখে নিয়ে নিলে
কেউ কাউকে কিছু না বলে আবারও একা একা
আমার আর কিছু খাইবার ইচ্ছা জাগে না মনে
প্রবল উত্তাপেও—চারপাশে বিবর্ণ মাংস কেবলই
রোদে পড়ে থাকে—নৈঃশব্দ্য ডুব দেয় অন্ধকারে
আরও আরও কত নকল সন্ধ্যা এসে লিখে নেয়
চুমু খাওয়া ঠাণ্ডা কাঁপের—তাকিয়ে তা শুধু দেখি
নির্জনে ক্ষয় হতে থাকা পাতাবনে একাকী ঢুকে।
হিম এসে গায়ে পড়বার পর ভাবি—এ এক অসুখ
ব্যাঙ ভেবে সাপ গ্রাস করছে ফোসলানো আগুন;
যত অতলে যাই, তত দেখি বিধ্বস্ত স্তনের পরিখা
কারো কোমরে হুক লাগিয়ে টানছে লাল পিঁপড়া
পাথরে চাপা পড়ে আছে সূর্যমিনার কারও কারও!
এমন অন্ধকারে হু-হু শীত এসে কামড়ে দিলো বলে
যেইসব দোকানে মাংসের ঘ্রাণ বিক্রি হতো দেদার
কুয়াশা-বন্যায় তাদের মাস্তূল ভেঙে হয়েছে চৌচির
গরম ধানের এইসব বিবর্ণ স্বর কানে তুলি না আর।
নিরুত্তাপে শুয়ে আছি চোখ দুটো খেয়ে নিলে মাছে
আমার গায়ের ওপর গোখরো সাপ ফনা তুলে আছে!
ধানের ধারাপাত
তুমি কড়াই থেকে সদ্য নামানো সেদ্ধ ধান
বুক অথবা মুখ ফেটে পড়ে আছ চুপচাপ।
রোদে শুকানোর পর ডালা ভরে চাতাল
থেকে তুলে নেব বস্তায় ভরে
নিয়ে যাবো ধানকলে
একে একে ছাড়িয়ে নেব পুরোটা বসন।
চাল হবার পর রান্নায় যাবে তুমি
ফুলে উঠবে—যেমন ওঠে সমুদ্রে ঢেউ।
তোমাকে গ্রাস করে আরামে ঘুম দেব
ঢেকুর তুলে তোমার দেহ নিয়ে আলাপ
করব আর সব খাদ্যগ্রহণকারীর সাথে।
বর্জ্যত্যাগেই সুখ ভেবে আহা, তোমাকেই
প্রতিদিন খেতে থাকব আঁশের আশায়।
ধান, তুমি আচানক করো না অভিমান
পরিমাণ না ভেবে এভাবে বসন খোলায়;
গোলায়ও তো খুলে খায় ইঁদুর অথবা কীট
মিটমিট করে যে হাসে কিশোর এবেলায়
তারও মুখে পুরে দিও সুডৌল স্তন্য বোঁটা
গ্রহণ শেষে সেও তো পাখি হবে একদিন!
আহা কুয়াশাজীবন, ধবল খাতায় লেপটানো কালি
সংশয় দাঁড়িয়ে থাকে পাশে—ধরে রাখে হাত
ফলে প্রতিবাদমুখর কণ্ঠের ঝিমুনি বেড়ে গেছে
বলে দাঁড়ানো হয় না আর দাঁড়াবার জায়গায়;
মাস্তুল ভেঙে গেলে যেমন নাবিক হারায় দিশে
রোদ মনে হয় মর্চুয়ারি ঘর; কফিনে শোবার পর
চাবি হারিয়ে দারোয়ান ঘুমিয়ে অথবা বেখাল।
চুপ হয়ে আছি—মাছি কাছিমের খোলসে ঢাকা
বলে চারপাশ ঝুলে থাকে অন্ধকার কবর হয়ে।
ফলে নিকট অতীত রোজ সামনে ফিরে এলে
কোথাও আর দাঁড়ানো হয় না শঙ্কায়; মৃত্যু লয়ে
প্রলয়ের প্রবল প্রসাধন প্রতিদিন মেখে নিয়ে গায়
ভাবি, একদিন এ মাঠও নিশ্চয় হবে সমান্তরাল।
আহা কুয়াশাজীবন, ধবল খাতায় লেপটানো কালি
বালিহাঁসের বিষণ্ন চোখে আঁকি সেসব কথা খালি!