০১.
উঠানে মুরগি তাড়া খেয়ে ছোটে বিস্ফারিত চোখ ডানা ঝাপ্টে ঊর্ধ্বশ্বাসে
চেঁচায় যতদূর সম্ভব প্রলম্বিত কণ্ঠনালী বাঁচার আর্তনাদে, পেছনে তার
আঠারো জন মাংসলোভী নরপশু ছোটে বত্রিশ হাতে তুলে, হাপরের হাওয়া
রোমশ বুকের খাঁচায় ওঠে নামে তাদের নাকের ডগায় ঘন হয়ে জমে ঘাম;
মুরগি দৌড়ে পালায় ভুট্টা ক্ষেতে, গাছে ওঠার ব্যর্থ চেষ্টা তার পাখি বটে তবু
পাখি সে তো নয়—খপ করে ধরে ফেলে বহু হাত একসাথে মুঠো মুঠো
তুলে ফেলে নরম পালক তার, তারপর জ্যান্ত ছাল তুলে ফেলে কি মসৃণ হলুদ
চর্বিভরা নগ্নদেহ এক-এক করে বিদ্ধ হয় আগুনে তাঁতানো গরম লোহার শিকে—
ধড়ফড়, ধড়ফড়, বিস্ফারিত চোখ আকাশের দিকে লজ্জায় গুটিয়ে থাকে মরা চাঁদ
শুনশান নীরবতা…গাছের সাথে বেঁধে রাখা, মুখবাঁধা ধর্ষিতা কিশোরীর লাশ!
০২.
বাস চলে, বাস সর্পিল সড়ক বেয়ে তন্দ্রাজড়ানো রাত, ঘুম ঘুম চোখে
যেভাবে আঠায় জড়ানো ছেঁড়াপাতা, স্বপ্ন ছেঁড়াখোঁড়া, যদি রাত পার হয়ে
যায় বাসের চাকার ঘর্ষণ দুলুনিতে, ঘুম ভেঙে যেতে যেতে ফের ঘুম
নিদ্রাবশ যাত্রীরা এর ওর গায়ে ঝুঁকে পড়ার লজ্জা থেকে জেগে ওঠে
উচ্চকিত হর্ণের আওয়াজ…‘এই ড্রাইভার গাড়ি থামা’, ধারালো অস্ত্র
হাতে উঠে আসে ষণ্ডা গুণ্ডা, ‘চোপ চোপ, শালারা চোপ, যার যা আছে
পকেট থেকে ফ্যাল মালকড়ি, শালিরা খোল তোদের কান আর গলা থেকে দুল
যত সোনার চেন’…কণ্ঠরোধী অন্ধকার, ঘর্ঘর করে চলে বাস নিরুদ্দেশ
স্তব্ধতা জমাট, ‘বাসে মালাউন মেয়ে আছে কে, কে? মাথার কাপড় তুলে দেখা দে !’
কাঞ্চন লুণ্ঠন শেষে কামিনী সম্ভোগ জমে ওঠে বাসের পেছন সিটে
মুখ চেপে, কামড়ে ছিঁড়ে গণিমতের মাল দলবদ্ধ ধর্ষণের উত্তুঙ্গ সুখে
ফিরে আসে একাত্তরের বন্দিশালা দুহাজার পঁচিশের রাত, চলে বাস—
০৩.
ঘুম ঘুম আরো ঘুম, ঘুমের অতলে ঘুম, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ানো
আছিয়ার ঘুম, যখন জেগে থাকে দেখে সব, চক্ষুষ্মান তার দেখা অপরাধ
যত ঘুম ততটা সুবিধা ওকে ছিঁড়ে খুঁড়ে খেতে সর্পিল উল্লাসে—
জাগে পশুত্রয়ী—বোন জামাই আর তার শ্বশুর, ভাসুর
নামে রাত—ব্লেডে কাটে ওর সঙ্কীর্ণ গহ্বরের খাঁদ, আহ্!
চেপে ধরে কণ্ঠনালী সব চিৎকার…খুঁড়ে খুঁড়ে প্রশস্ত করে খাদ
রক্তপ্লাবনের মুখে ঢোকে একে একে তিনটি অ্যানাকোন্ডা
পেছনে পাহারা দেয় বোনের শাশুড়ি—সেও নারী, মাতা?
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধ!
০৪.
মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে পিতার সমাধি সম্মুখে
কুণ্ঠিত অপরাধী মনে ভাবে কেন তার মৃত্যু হয়নি
গতকাল উপর্যুপরি ধর্ষণের রাতে, সে তো মরেই গিয়েছিল
এক পাল বুনো শুয়োরের হিংস্র নখের আঁচড়ে
কখন বাবা তার অচেতন দেহ দু’হাতে তুলে
এনেছিল স্নেহশোকে চোখের জলে ভেসে—
আর কখনোই বা গিয়েছিল থানায় মামলা দিতে
কিছুই জানে না সে, দেহ তার যন্ত্রণা প্রদাহে
কুণ্ডুলী পাঁকিয়ে পড়ে ছিল বিছানার পর;
ঘুম ভেঙে শোনে বাবাকে খুন করে গেছে
গতরাতের বিক্রমধারী ধর্ষকেরা তার !
রাতের ব্যবধানে কোথায় হারাল বাবা?
চিতা থেকে আনা দেহভস্ম তার মিশে আছে
মাটির সমাধিতে, হাতে লেপা কয়েকটি ছোট ছোট
স্তূপে ওঠা চূড়ায় মাটির ঘট—জমা হবে সেখানে
প্রতিরোধের প্রতিজ্ঞা থেকে সব শোকাগ্নির জল !