দেখা হতে হতে
তোমাকে পেয়েছি:
কোথাও দাঁড়িয়ে ছিলে না তুমি
আমারও পড়েনি চোখ হঠাৎ।
দেখা হতে হতে:
উঠতে, বসতে…
অঙ্ক কষতে, না কষতে
তোমাকে বুঝেছি।
তোমার দুগালে
ঈষৎ ছিল যে টোল,
আমার বোকামি দেখে
যদি না হাসতে,
কখনোই দেখা হতো না…
তোমার দুচোখে
এত অনুরাগ,
তুমি না রাগলে,
কিছুতেই বোঝা যেতো না!
গ্রীষ্মের পর বর্ষা
বর্ষার পর শরৎ
শরতের পর হেমন্ত
হেমন্তের পর শীত…
যদি না আমার পাশে
যদি না আমার সাথে
যদি না আমার পিছে
যদি না আমার সামনে দাঁড়াতে,
আমার জীবনে
কখনো
বসন্ত আসত না…
তোমাকে পেয়েছি:
কোথাও দাঁড়িয়ে ছিলে না তুমি
আমারও পড়েনি চোখ হঠাৎ…
তোমারও কিছুটা ছিল ভুল
তোমারও কিছুটা ছিল ভুল…
যখন কসাইগুলো
আমাদের সম্পর্কটাকে
জবাই দিচ্ছিল,
বেঁধেকষে রাস্তায় ফেলে…
আর আমি
ছটফট করছিলাম:
হাত-পা ছুড়ছিলাম,
করছিলাম আর্তনাদ…
এবং
মৃত্যুর আগেই
তোমার শরীর থেকে,
রক্ত-মাংস-হৃদয় থেকে
আমাকে ছাড়াচ্ছিল…
যে-রকম তড়িঘড়ি
মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক-সহযোগী
চকচকা ধারালো অস্ত্রে ছাড়ায়
কোরবানির পশুর চামড়া…
তারপর,
হেঁচকা টানে
ধুলোবালুসহ
ছুড়ে ফেলে
রিকশা-ভ্যানে…
আহ্ কী জল্লাদ!
কেন তুমি কথা বললে না,
একটুও নড়লে না?
করলে না পদাঘাত
নরপশুগুলোর বুকে, মুখে?
কেন ছুড়লে না ঘৃণা, থু-থু…
পৃথিবীর সবটুকু দুর্গন্ধের গাদ?
আমি তো মরেই গেছি,
এখন তুমি করছ সন্তাপ!
তোমারও কিছুটা ছিল ভুল,
তোমারও কিছুটা ছিল পাপ…
ঝুম বৃষ্টি
ক্রিং, ক্রিং, ক্রিং…
তুমি বললে, ‘খোলো…’
ঝুম বৃষ্টি…
লন পেরিয়ে লেবুতলা কাছে
পানির কলটা ফেলে
যুগল বাসার
বিভেদ দরজা খুললাম:
তোমার হাতে
চিনেমাটির সফেদ পাত্র।
মনে পড়ছে না: ঢাকনা ছিল কিনা,
ছিল কিনা ফুলতোলা;
হয় তো ও-দিকে
নজরই ছিল না মোটে।
ছোট্ট করে বললে তুমি, ‘খেয়ো…’
আমি বললাম, ‘এসো…’
তুমি মৃদু হেসে
বাহু থেকে ধীরে
সরিয়ে দুহাত
বললে বাঁকানো চোখে,
‘ভিজে জবুথবু,
বলো তো, কী ভাবে যাই !’
হেসে বললাম,
‘আমি কি ভিজেছি কম!’
তুমি বললে,
‘আজকে না হয় থাক।’
হঠাৎ তখন
কদমের নিচু ডালে
ডেকে ওঠে জোড়া-কাক।
তুমি চলে গেলে…
খাবারটা হোল বাসি।
কী করে ভাবলে
তোমার চেয়েও
তোমার মায়ের
পাঠানো খাবার
আমি বেশি ভালোবাসি!