দূরত্ব
না হজরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন বিভাগ,
না বেনাপোল স্থলবন্দরের চেকপোস্ট-কোথাও আমার নামে কোনো লাল
ইনজাংকশন নেই; এবং ছিলও না কোনওদিন। আর থাকবেইবা কেন!
আমি তো ভাই সোনার বাংলার গদিচ্যুত লুটেরা নই, কিংবা ধর্মের নামে
বিভ্রান্ত কোনো জঙ্গি! জেলগেটে মালা পাওয়ার মতো খুনি নই বলে
শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো আমাকে দেখামাত্র মুখ ফিরিয়ে নেয়!
তো কী আমার পরিচয়? আমি কেবল প্রেমিক একজন, সাথে লালরঙের
একটি স্বর্গীয় অস্ত্র,-যার জন্য জেলা প্রশাসকের লাইসেন্সের প্রয়োজন
হয় না; কারণ এটি প্রেমের রাজা কিউপিডের কাছ থেকে পাওয়া উপহার।
রক্তে চাঁদমারী, রক্তেই ট্রিগার। তো রহস্যজনক আঁধারে আমভরা আম-
গাছগুলো যতই ঝরে পড়ুক ক্রশফায়ারের ঝড়ে, আমি কেন বলতে যাবো,-
পুলিশের অপর নাম হয়রানী! টিকেট পেলে আমিই যাবো; প্লাকার্ড হাতে
তুমি ওয়েলকাম জানাবে জেএফকে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে—‘হাই!’
আমার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হাতে আসা বাকি; আনসিডিউল্ড তুমি
উড়ে এলে হঠাৎ; ল্যান্ড করলে ঢাকায়। এখন তোমার শরীরে র্যাবরঙের
নিষেধ; আমার হতাশার চোখে বিস্ময়ের কন্টাক্ট লেন্স। অথচ ঢাকা ছেড়ে
আর ফিরে যাবে না নিউইয়র্কে,—প্রেমের পেসনোট পড়ে জেনেছি। এসে যদি
অনতিক্রম্য দূরত্বই রচবে, কেন এলে? সে জন্য তো তোমার উত্তেজনার
ভূকম্পকালীন নাভির মতো উথাপলপাথাল আটলান্টিকই তো যথেষ্ট ছিল!
হায় ভূগোলে লেটার মার্ক! নিকট এত দূর হয়—আগে জানা ছিল না!
অন্য আগুন
যে আগুনে পুড়ি আমি, তার আঁচ লাগে তোমার গায়ে
আমি ভালোবেসেই আগুন বাড়াই
বাড়ানো আগুনের ছিটায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে বন্ধ্যা সাঁঝ;
বন্ধ্যা সাঁঝকে আঁকড়ে ধরে বুকে
দাদার আমলের বালতি নিয়ে
এমন আগুনে জল ঢালো কেন?
একটু পুড়ে দ্যাখো—কত সোনার খনি তোমার ভেতরে!
এভাবে আর কতদিন পড়ে থাকবে—
– লোহালক্কড়ের সিল নিয়ে গায়ে?
ভালোবাসার স্টেশন
যখন তোমার জেদি নিস্ক্রিয়তায় থেমে থাকে অনুরক্ত
কারো আহ্নিকগতির ট্রেন এবং সেটা জেনেও
তুমি নিস্ক্রিয় থাকো—তোমার ডায়মন্ড পায়ের
কাছে পড়ে থাকে সবুজ সিগন্যালের ফ্ল্যাগ, তখন
লোকাল ট্রেন, ইন্টারসিটি ট্রেনের শব্দ ছাপিয়ে
একটি মনের মৃত্যুঘণ্টা শোনে স্টেশনমাস্টার।
ও আমার মালিকিন, তোমার সোনার বাংলা
বিদেশ প্রত্যাবৃত্ত প্রধানমন্ত্রীর মন নিয়ে যখন
লাল গালিচার পথ বেয়ে
তুমি এসে বুঝে নাও
ভালোবাসার উল্কি আঁকা সিংহাসন,
চারপাশে চোখগুলো—
এসএসএফ-এর সতর্কতায় টানটান
আসমানি চাঁদ হয়ে জ্বলে ওঠে ঝাড়বাতি,
জোছনায় উদ্ভাসিত—
হৃদয়ের সাদা জোন, রেড জোন—
ভেতর দরোজার সামনে
ফোয়ারায় ঝলমল করে
পূর্ণচাঁদের লক্ষ রেপ্লিকা,
পূর্ণিমার পৃথিবীর মতো ধন্য হতে থাকি আমি।
যখন চারপাশে ভিড়, শব্দের সন্ত্রাস,
অথচ আমি একা, তার মানে—
তুমি নেই প্রজ্ঞাপিত প্রাণের প্রাঙ্গণে,
আমার হৃদয় পাহারাহীন আঁধারের এজমালি রাত,
আনারকলিরা এসে রেকি করে,
অস্ত্রে শান দেয় দেবী চৌধুরানীর দল
মোড়ে মোড়ে জেগে থাকে—
শয়তান ও সিপাহী;
কিন্তু চিৎকার শোনার থাকে না কেউই,
তাই চিৎকার করি না
সবাই এটাকে মৌনতামোড়ানো সম্মতি জ্ঞান করে;
আমি লুট হতে থাকি—
আর সফল পরকিয়ায় হাসে কিউপিডের সুইস ব্যাংক।
কিন্তু কি আশ্চর্য, কোনো কোনোদিন—
একটু আধটু লুট হতে ভালো লাগে—যদিও পরক্ষণেই
রাডারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ছাইরঙা ধোঁয়া!
ও আমার মালিকিন,
আমি যে মাঝে মাঝে খানিকটা লুট হই—
. তুমি কি টের পাও?
শ্রাবণ ভালোবাসার শরৎ উপসংহার
তোমার সাথে নুন চুকাচুকি; তাই তো জানা হলো—
সময়ের ব্যবধানে—
বহু নক্ষত্র কালোবামন, বহু নদী খাল,
কিন্তু দুনিয়ায় কোথাও কর্তৃপক্ষ কমেনি,
বরং বৈচিত্র্যে ও বেশভুষায় বহুগুণে বেড়েছে;
দ্যাখো, আগেরগুলো সবই আছে; তার সাথে
যোগ হয়েছে ভণ্ডামির টাইপরা আরও এবং অনেক!
আজ কোনো সর্পরূপী প্ররোচনা নেই; তবু বহুবার
তোমার নিঃশ্বাস ঘেঁষে রক্তমাংসের আদম হয়েছি—
গন্দমের পাতা নেড়েও তুমি কিন্তু একটিবারও হাওয়া হতে পারোনি!
সেলফি তোলো হাঁটু ঘেঁষে হাঁটুতে, চুল মিশিয়ে চুলে,
ঠোঁট এসে ভিড়ে ঠোঁটে, তকু ফাঁক রয়ে যায় কোথাও!
সরস্বতী মেধা, আফ্রোদিতি বাহু; এই নিয়ে নত হও—
প্রত্নরঙা প্রথার দুপায়ে প্রতিদিন—
‘এটার পেছনে মহাসেন!
ওটার বুকে সিডর!
আড়াল মানে তো চুরি!
প্রকাশ্য মানেই RAB…’
আর তোমার কথার শেষে প্রতিবারই কেঁপে ওঠে
স্বরাষ্ট্রসচিবের পিওনের মতো তিনটি বিস্ময়চিহ্ন!
হতাশার হাত ধরে আমিও কিন্তু ফিরে আসতে পারি।
হয়তো তুমিও মাঝেমাঝে তেমনটাই ভেবে ফেলো!
কিন্তু যাকে ভালোবাসি একবার,
হোক সে—
প্রযোজিত কান্না কিংবা স্বতঃস্ফূর্ত হাসি,
প্রণয় প্রেয়সী কিংবা স্বার্থের শ্যালিকা,
তার পথে বৃক্ষ হতে—
তার রাতে চাঁদ হতে—
কোনোদিন ভুল করেও একটিবার এতটুকু ভুল করি না।
অতএব পহেলা জুলাই থেকে যদি তুমি নাই থাকো—
রাগে কিংবা অনুরাগে আর,
তবুও আজ অথবা আগামীতে
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র প্রযোজিত দিনে—
পাবে তুমি অসংজ্ঞায়িত এই আমাকে—যেমনটি পেয়ে এসেছো এতদিন!