দুই প্রান্তের ভালোবাসা
দুটো মানুষ দুটো মানুষকে তীব্র ভালোবাসার পরেও একে অপরকে ছেড়ে যায়, নাহ তাদের ব্যক্তিগত কারণে নয়, পারিপার্শ্বিক কারণে। হয়তো বা পরিবার, সমাজ, কিংবা যোগ্যতার কারণে।
তোমার প্রেমিক বড় চাকরিজীবী কিংবা ধনাঢ্য ব্যক্তি নাও হতে পারে, তার যা আছে তাতেই মানিয়ে চলার মানসিকতা তোমার আছে, অথচ তুমি চাইলেও তাকে নিয়ে ভালো থাকতে পারবে না। হয়তো পরিবার তোমার অধিক ভালো চায় বোঝাতে গিয়ে, তোমার ভালো থাকার হাতিয়ারটাকেই তোমার কাছ থেকে সরিয়ে নেবে।
তোমার প্রেমিকা আহামরি সুন্দরী অনন্যা নাও হতে পারে, বাপের অঢেল টাকা নাও থাকতে পারে, সেসব এর পরোয়া না করা পুরুষ তুমি। অথচ তোমাকেও বন্ধুমহল, সমাজ, কিংবা পরিবারের সম্মুখীন হয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে হারাতে হয়।
নিজেদের সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার জন্য, দুজন-দুজনকে ছাড় দিতে পারলেও, একদল মানুষ, কিংবা সমাজের ভয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে আসতে হয়।
অতপর সমাজকে দেখানোর মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষকে নিয়ে দিব্যি দিন কেটে যায়, কেবল দুটো প্রান্তে থাকা দুটো মানুষই বোঝে সারাদিন মিথ্যে অভিনয় শেষে, একেকটা নির্ঘুম রাত কাটানোর কী যন্ত্রণা! কী ভীষণ যন্ত্রণা!
কালো রঙ
কালো রঙ আমার ভীষণ প্রিয়।
কেননা আমার মায়ের গায়ের রঙ কালো।
ছেলেবেলায় যেই যুবকের প্রেমে আমি পড়েছিলাম,
তার গায়ের বর্ণ ছিলো কালো।
আমার জন্ম দেওয়া সন্তানের গায়ের রঙ কালো।
কালো রঙের একটা শাড়ি আমি যতটা আনন্দ নিয়ে পরি,
একজন কালো বর্ণের মানুষের সাথেও
ততটা আনন্দের সাথে মিশি, কথা বলি।
কালো রঙকে আমি মায়ের মতোই সম্মান করি,
প্রেমিকের মতোই ভালোবাসি,
সন্তানের মতোই স্নেহ করি।
হে সুন্দর মানুষ,
আমি কেবল ঘৃণা করি,
তোমার ওই কালো মনকে।
যা তোমার দেখার চোখকে অন্ধ করে রেখেছে।
কালো রঙ, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রঙ।
লোক দেখানো সমাজ
ক্যামেরার সামনের একটা মানুষ এবং ক্যামেরার পেছনের একটা মানুষের মধ্যে পার্থক্য কতটা জানেন?
ঠিক স্বর্গ এবং নরকের মতো।
ক্যামেরার সামনের একজন মানুষকে দেখে মনে হবে যেন সে স্বর্গীয় সুখে ভাসছে, অথচ সেই মানুষটাই বাস্তবজীবনে নরকের যন্ত্রণা ভোগ করছে।
ভাই, হাসি দিয়ে দুইটা সেলফি তোলা গেলেও, প্রচণ্ড কষ্টে দুইটা মনের কথা বলার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। যারা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ, তারা কখনো নিজেদের ব্যক্তিগত কষ্ট দুঃখ সমাজের সামনে দেখায় না, বরং সমাজে নিজের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য মিথ্যে অভিনয়ে ঢেকে রাখে নিজেকে। ঠোঁটের হাসি দিয়েই মনের ভেতরের কষ্টটাকে লুকিয়ে রাখে।
এটা রুঢ় সত্য যে, একটা মানুষ বাইরে থেকে ঠিক যতটা ভালো আছে বোঝায়, বাস্তবজীবনে ঠিক ততটাই কষ্ট বয়ে বেড়ায়। এমন লোক দেখানো জীবনের সাথে আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত।
তবে আফসোস, আমাদের সুখ দেখে সমালোচনা করার মতো লোকের অভাব হয় না, অথচ প্রচণ্ড কষ্টে একজন পাশে থাকার মতো লোকের খুব অভাব হয়। বড্ড বেশি অভাব হয়।
আরও পড়ুন: নির্বাচিত নবীনের কবিতা