ব্ল্যাক আউটের দিন
সহজ ছিল না তোমাকে অভিবাদন জানানো
সত্যের নির্মোহ সংজ্ঞায় সরল পঙ্ক্তি আঁকা
যখনই লিখেছি, ব্যাকস্পেসে মুছে গেছি
বিচ্যূতির ফাঁদে নিষ্পেষিত ঈগলের আর্তকথা!
ভূমির শিকড় যেমন শিখর অব্দি যায় বহুদূরে—
শব্দের গ্রেনেডে আহত কথারা দলিত মিছিলে
আমারই বাগ্যন্ত্রে কণ্ঠরোধে বারেবারে এসেছে ফিরে।
মধ্য জুলাইয়ের জ্বলন্ত উনুনে জ্বলছ স্বদেশ আমার!
যেন তিয়ানানমেনের বিক্ষোভে ফুঁসছে ছাত্ররা আজ!
মুহুর্মুহু টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেডে
আমাদের ঘুমগুলো প্রতিরাতে দুঃস্বপ্নে বিক্রি হয়
ক্ষমতার বাটখাড়ায় জীবনের দামে—মৃত্যুকূপে!
শাসকের জালে আটকা, নবীন প্রাণের জাটকা
শকুনের বেদীতে খুন বসরার গোলাপ—
এমন স্বাধীনতা কি চেয়েছি আমরা?
জনগণের কাঁধে চেপে হাঁটে স্তালিনের ভূত
ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলে ইয়াহিয়ার অট্টহাসি সুখ!
কোথাও যে আলো নেই, আমরা ভালো নেই —
ক্ষমতার পোষকে শোষক একেশ্বর প্রভু ভাবে!
আমাদের সন্তানেরা চিরহরিৎ অরণ্যের
পলাশ-শাল-সেগুন-জারুলের বাকলে
দীর্ঘ অমানিশার জখমে বেদনার পত্রে ঝরে!
এই ধান শালিকের দেশে পাঁজরের ধ্বংসাবশেষে
সহস্র ভাই চম্পা’র মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তিগানে
ওরা আবাবিলের ডানায় ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে আসে!
ওদের আলোর মিছিলে স্নাইপারের নির্ভুল নিশানা
শটগান, পিস্তল, চাইনিজ রাইফেলের স্প্লিন্টারে
শত আবু সাঈদের বুক ঝাঁঝরায় শায়িত কবরে!
বিশ্ব বিস্ময়ে দেখে, শেষ নিঃশ্বাসের অপেক্ষায়
ইয়ামিনের পালক দেহ—কিভাবে পোষাকি খুনি
সাঁজোয়া ট্যাংক হতে টেনে-হিঁচড়ে রাস্তায় ফেলে!
আহা, লিকলিকে নিথর শরীরে রক্তের বন্যা
খণ্ডিত মাথার ঘিলু সহপাঠীর হাতে—
নবীন মগজ বৃদ্ধদের সংস্কারে অপ্রয়োজনীয় বটে!
আমার পরম ব্যর্থতা, ক্ষোভ, দেশপ্রেমের স্পৃহা—
প্রতিবিম্বহীন আয়নাঘরে রোজ জীবন্ত মরে
চারদেয়ালে শিশুর কপালে আসমানি বুলেট ঠেকে!
কেউ হাসে, কেউ কাঁদে; আর যারা চুপ থাকে
তারাও দেখেছে কিভাবে রাজপথ-গলি রঞ্জিত
আমাদের সন্তানের নরম তুঁতফল শরীর ফেটে!
বিপ্লব মানুষকে কাছে টানে
ভালো মন্দের ব্যবধান গড়ে —
শুদ্ধ মানুষ সূর্যের আলোয় ব্যস্ত অসূর বধে
হন্তারক ছাত্র পোড়ায় পৈশাচিক উল্লাসে!
আমার চোখ জ্বলে যায় মানুষ পোড়া গন্ধ—ধোঁয়ায়
মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁদানে গ্যাসের যন্ত্রণায়
কখনও তৃষ্ণা পেলে, সবুজ ঘাসের কচি মুগ্ধতায়
মুগ্ধ বলে, ‘ভাই, পানি লাগবে? পানি?’
ওর বাড়িয়ে দেয়া হাতে মুক্তির আবে জমজমে
আমি আকন্ঠ নিমজ্জিত হই আজন্মের ঋণে—
অসহায় দেখি, মুগ্ধ’র কপাল ফুঁড়ে রক্তিম সূর্য ওঠে!
পরিচিত মানুষের অচেনা মুখ—
যেন বুনো বাইসনের দাঁতাল শিংয়ে
চিঁড়ে ফেলে সহস্র মায়ের গর্ভ —
রক্তাক্ত মুখে লুটে খায় গর্ভফুল!
যীশুর দেহের পেরেক আজ বুলেট যন্ত্রণায় দগ্ধ-
মৃত্যুর আগে উনচল্লিশ দিন, শোহান বুঝেছে সে কষ্ট!
এতোদিন কি তবে আমি ভুল মানুষ চিনেছি সুখে?
পাপবিদ্ধ হৃদয় ছুঁয়ে পাশাপাশি দেখেছি স্বপ্ন ?
যারা আমাদের সন্তানকে হত্যা করে স্বাধীন দেশে..
তোমরা আমার কেউ নও —!
রক্তের গন্ধ শুকে মুছে ক্ষমতার দিন আসবে যাবে
আমরা রাখবো মনে মানুষ নামের অমানুষকে!
মনে রাখবো এই কালো রাত্রির কারবালার দিন —
সহিসের অশুভ ছায়ায় বিশ্ব হতে বিচ্ছিন্ন বাংলা
ব্ল্যাক আউটের বিভৎসতায় এই নির্মম অস্থির দিন!
দাবানল
মাউয়ের দাবানলে ছড়িয়ে গেলে এ পোড়াদহে
প্রাগৈতিহাসিক চিহ্ন হারিয়ে আমি এক ধ্বংসের স্তুপ!
রিয়েলএস্টেটের আর্কষণ তুমিহীন এ বিরান ভূমি —
বাতাসের রন্ধ্রে এখানে মাংসের পোড়া গন্ধ ভাসে —
ক্রুদ্ধ মেঘের ঘর্ষণ —জলবায়ু কণার হ্রাস বজ্রপাতে!
ঘন ঘাসের অরণ্যে—কাঁচা-পাঁকা রোদের দাবীতে
যে বুনো জানোয়ারেরা মশাল মিছিলে আগুন জ্বালাত
মাৎস্যন্যায়ের চিতায় ওরা ফটাফট পোড়ে জীবন্ত—পার্পল!
প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘরে আছে সেই জীবাশ্মের নির্দশন!
দেহের-মনের প্রয়োজন, পাপ নয় সেটা জেনে
সৌন্দর্যের আকর্ষণ ততক্ষণ, যতক্ষণ সে দূরের আবরণে!
ঐ রাতের চাঁদ দিনের আলোর সমঝোতাতেই চলে!
সামাজিক কৌলিন্যের দ্বিধা দ্বন্দ্বের সংঘাতে
তুমি চলে গেলে ঘোর উষ্ণতর দিন উপেক্ষাতে!
নিরবিচ্ছিন্ন ভাবনায় আমি সংজ্ঞায়িত করি না তোমাকে!
এ পোড়া বৃক্ষরা জানে শিরীষ পাতার ক্লোরোফিলে
কতো প্রেম জমেছিল আমাদের কিউটিকল প্রণয়েতে!
তোমাকে পেয়েছি আমি, সূর্যাস্তের অলৌকিক তিরোধানে!
মানুষও কখনো জ্বলে
দেশলাই ছিল না যে এতটুকু আগুন জ্বালাবো!
অনুঘটক ব্যতিত তবু অন্ধকারে দপ করে
জ্বলে ওঠেন ঈশ্বর! শেষ তিনি জ্বলেছেন
তুর পাহাড়ে—যে তুমি সুরমার কালি চোখে লাগাও!
তিনি বরাবর দৃশ্যত থাকেন নীরব, যখন
ধারণের অতিসহ্যে বাতাসের মলিকিউলে
দূষণ—সংঘর্ষে বায়ুমণ্ডলে লাগে বিবাদ!
পুড়ে যায় শোভিত অর্কিড, বসরার গোলাপ,
জলপাই বাগান—রক্তের প্লাবনে জেগে ওঠে
জীবাশ্মে জীবাণু, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হারকিউলাস!
অনাদায়ে কিছু দায় অমীমাংসিত প্রবাদ
বর্ণিত বর্ণিল গ্রন্থে মানুষের প্রাণের সংহার!
ব্যবচ্ছেদের হিসাব কষেন তিনি: এইখানে
সংরক্ষিত প্রজননে মানুষের নয়া প্রজাতির
ক্লোনের আবাদ হবে—তারা করবে পৃথিবী শাসন!
আর যারা পূর্ববর্তী ছিল, তাদের পাঠানো হবে
সীমানার শেষ প্রান্তে—মানুষের গারদ খাঁচায়!
ঈশ্বর মুঠোতে ছড়িয়ে দেন পোড়া জমি, দেশভাগ—
. ভূমির অমরাকোষ বিচ্ছেদের যন্ত্রণায়
. ক্ষুধার্ত মানুষ জন্তুর খাবার, ঘাস খায়!
মৃত্যুর হেরায় আদমের দেশ-প্রাণ ভস্মীভূত হয়—
. পরে জেনেছি পাহাড়ে কেবল ঈশ্বর নয়,
. কখনও মানুষও ওঠে জ্বলে!
ভ্রূণফুল হত্যাকারী
জো বাইডেন, পতিত প্রাণের মর্মরে উদাস তুমি আনমনে।
হোয়াইট হাউসের দম্ভ তোমার বিন্যস্ত শুভ্রকেশে!
যদি তুমি প্যালেস্টাইনে যাও, প্লিজ হাঁটবে সাবধানে!
মৃত ভ্রূণফুল, শিশুফুল, পূ্র্ণ চাঁদ-যৌবন আগুন
যত্রতত্র ছড়িয়ে সেখানে! ওদের বয়স থমকে গেছে
রক্ত-মাংস, অস্থির মূলেতে—ওরা গ্রোথিত মাটিতে!
সে রাতে মিউজিক ফেস্টিভ্যালে হামাসের হত্যাযজ্ঞে
স্বর্গীয় সময় নরকে পর্যবসিত হলে—
পৃথিবীর খোলা কারাগার প্যালেষ্টাইনে বদলা নিতে-
ইস্রাইল আঘাত হানে প্রতি ইঞ্চি পবিত্র ভূমিতে!
জো, এ শুধু যুদ্ধ নয়, অন্যকিছু! ওরা ভূমিদস্যূ!
বাস্তুভিটা ফেলে ফিলিস্তিনিরা জন্মাবধি ছোটে তাই
‘আল-নাকবা’য়’; উত্তর হতে দক্ষিণে,
দক্ষিণ হতে উত্তরে, প্রাণ নিয়ে মধ্যভাগে!
বাইডেন, পবিত্র আত্মার অস্তিত্ব কোথাও আর কি নেই?
তোমার ঠোঁটের কোণে দ্যাখো তো লেপ্টে আছে কি রক্ত?
ধারালো দাঁতের ফাঁকে আছে কি স্ব-প্রজাতির মাংস?
কোথা হতে শুরু করবো ভাবছি আমি তাই!
কলম দেখলে ভয় পাই—!
ক্ষেপণাস্রে যদি কলম শিশুর বুক ফেঁড়ে যায়…
মাগাজি রিফুজী ক্যাম্পে যখন অগণন উদ্বাস্তু
এক টুকরো রুটি আর নোনতা জলে জীবনের খোঁজে—
কয়েকটি টয়লেটে দীর্ঘ অপেক্ষা জৈবিক বর্জ্য ত্যাগে-
মুহুর্মুহু মিসাইলের ফায়ার ওয়ার্ক সেখানেও চলে!
আলফাখৌরা স্কুলে ইস্রাইলের আজরাইলী থাবায়
শিশুর বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ করুণ ছটফটায়!
স্বজনেরা বিকৃত লাশের পাশে
যন্ত্রণায় হামাগুঁড়িতে কাতড়ায়!
শিশুরা ঘুমায়না প্রকম্পিত নগরীর রাতে —
ওরা স্থায়ী কালিতে শরীরে নাম লিখে রাখে-
বোমায় বিধস্ত দেহ সনাক্তকরণে চেনা যায় যাতে!
আল্লাহর সৃষ্ট সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হাসপাতালে বোমা ফেলে-
পঁচাত্তরটি বছর ফিলিস্তানীরা ক্ষুধা-তৃষ্ণায়, বুলেটে মরে!
গাজায় মেঘেরা মৃত্যু কালো, মানুষের আয়ু ধোঁয়া!
লিখেছেন শহীদ কবি হেবা আবু নাদা,
“মৃত মানুষের জন্য, অক্সিজেন নয়”! তিনি দেখেছেন,
জীবন বাঁচাতে প্যালেষ্টাইনে খাদ্য-পানি -পথ্য নাই!
জ্বালানী ব্যতিরেকে জেনারেটর বন্ধ হলে
ফোনের চার্জারে অ্যনেস্থেশিয়া ছাড়াই অপারেশন চলে!
ফার্মেসী কোথাও নেই যুদ্ধাহত শহরে —
ডাক্তারের কোট ক্ষতের ব্যন্ডেজে, সে ক্ষত সেলাই হয়
ঘরের সুঁইয়েতে! ভিনেগার ভরসা এন্টিসেপটিকে!
আহতের ক্ষতে জন্মে পোকা, তাজা দেহ ওরা আজ খাবে!
জো, তোমার নাসারন্ধ্রে আসে কি মৃত্যুর আগরবাতি ঘ্রাণ?
শ্রবণের ইথারে ভাসে কি এ্যামবুলেন্সের সাইরেন?
তোমার সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিষ্টেম কখনও কি
আলোড়িত হয় ফাইট-অর-ফ্লাইট মোশনের মৃত্যুকূপে ?
সে জলপাই বাগান ঘেরা ঘেঁটোতে
শুনেছো কি তুমি শব্দ হতে সদ্য শিশু জন্মে?
আর শব্দেই মানুষ অণু থেকে বিশ্লেষিত পরমাণু হয় ?
ফিটাস মায়ের গর্ভকে কবরস্থান জেনে যায় ?
জো, নেতানিয়াহু’ ভ্রূণফুল হত্যাকারী!
গাজায় জন্মের আগে যে শিশু জন্মায় —
বিদ্যুৎ বিহীন হাসপাতালের ইনকিউবিটরে তার মৃত্যু হয়!
মুছে যাক আজ তাহলে লিখিত সকল কবিতা!
গাজায় আগামী বসন্তের স্বপ্ন দেখার কেউ থাকবে না!
আমি তো কোন শিশুর দিকে আর তাকাতে পারি না!
পতিত পাতার জলাভূমিতে
মধ্য রাতের নিঃসঙ্গে আজ এ নিদান চরাচরে—
পথ শেষে সবাই যখন আপন ঘরেতে ফেরে —
অসংলগ্ন সময়ের সেই যাদুকরী উপ্যাখানে
পতিত পাতার সাথে আমার গল্পরা যায় বেড়ে।
তোমার হাতের ঘামে, ঝরা পাতাদের প্রস্বেদনে
অশরীরীর ধ্রুপদী নৃত্যে, চন্দ্রফণার লালাভ বৃত্তে —
জাতিস্বর আমি হাঁটি অতীত ইউটোপিয়ার দ্বারে —
চেটে নিই তাবৎ হেমকুচি টক্সিক মেঘের স্কচ -চিত্তে!
গৃহহীন জড়ো পাতা জন্মান্তরে দৈহিক বদলায় —
দন্ত-কর্ণ, লম্বা লেজে পাতা শশকে রূপান্তরিত হয়!
মুটো শশক চন্দ্রালোকের দৈব নিশির শিশির চাটে-
সভ্যতায় থ্যাঁতলায়ে শশক মর্গে অবশিষ্ট হয় ক্ষয়!
চলে যাওয়ার নিয়মে জোয়ার-ভাটার মাইগ্রেশনে
সঞ্চিত তরল দুঃখ—রক্ষীকোষের রন্ধ্রে, বরফে!
টিম্পিশকার স্ফুটনাঙ্কে গলিত পাতা শব মিছিলে
ওসেরিসের বিপ্লব-পতিত পাতার জলাভূমিতে!
জারকের পঁচন গাঁজনে ভালোবাসা নষ্ট হলে
শেষ হয় কবিতার দিন! বনভূমি জ্বলে তুরে—
অ্যাড্রিনালে আমি ফিরি ঘরে
যমদূত সাথে ঘোরে—ফেরাতে পারিনা তাকে-
হেম-অ্যাবশেসনে —আমি চলে যাই দূরে।