গ্রহণকাল
করোটিতে অস্থিরতার বিষ ইদানীং
সময় খুবলে খায় বাস্তবতার কীট
কী অদ্ভুত দ্রাক্ষারসে ডুবে থাকে মানুষ
কী মদিরা-ঘোরে তবু মুগ্ধ সব মন
এত যে বিষধারা বয়
এত যে গরল উগরায়
কী নির্লিপ্ত তবু সব!
উপেক্ষায় মুদে থাকা চোখ
আপন কেন্দ্রাভিমুখে ঊর্ধ্বশ্বাস ছোটে
মাড়িয়ে যায় মানবিক বোধের পাহাড়
আমিও ফিরে যাই নতমুখ
পথে পড়ে থাকে স্বজনকে চিকিৎসাধীন রেখে
গন্তব্যাভিমুখী পথচারীর লাশ
মৃত বাবাকে জড়িয়ে আহত মেয়ের আর্তচিৎকার
কানে আঙুল গুঁজে মুহূর্তে সরে পড়ি
ঝঞ্ঝাট বাড়িয়ে কী লাভ!
তোমাকে ভুলে গেছি
তোমাকে ভুলে গেছি সেই কবে
সেই কবে হৃৎপিণ্ড থেকে সরিয়ে নিয়েছি অস্থিরতার বিষ
রাতদুপুরে এখন আর তেষ্টা পায় না তোমার কণ্ঠের
দারুণ কোনো লেখা পড়ে তোমার সঙ্গে আলোচনার
উত্তেজনায় টগবগ ফোটে না মন
একান্ত কবিতার খাতা হাতে তোমাকে খুঁজি না আর
বারান্দার টবে গোলাপ ফোটে রোজ, অপরাজিতা
সে খবর বাসি হয়ে যায়
তোমাকে জানানো হয় না
তোমাকে ভুলে গেছি
ভুলে গেছি সেই কবেই
শুধু হঠাৎ হঠাৎ তুমুল বেজে ওঠ হৃৎপিণ্ডের তারে
হতবিহ্বল মন বড় বেসামাল, চঞ্চল তখন
ভুলে যেতে যেতে তোমাকেই বেভুল গেয়ে ওঠে অগোচরে
তুমি
কদিন থেকে হৃদ গোলোযোগ ভীষণ!
অনিদ্রা, বুক ধড়ফড়, বুক ব্যথা, অস্থিরতা নিয়ে
হার্টফাউন্ডেশন, কার্ডিওলজিস্ট দৌড়াদৌড়ি
ইসিজি, ইকো, ইটিটি, এনজিওগ্রাম হরেক টেস্ট
ডাক্তার হতাশ, হতোদ্যম…
হৃৎপিণ্ডে কোনো অসুখ নেই আপনার!
অতঃপর গম্ভীর ঘোষণা…
ডাক্তারি-তরিকায় এমন কিম্ভুত অসুখ সারবে না,
জেনে চুপিসারে বেরিয়ে পড়ি আমি
আমার অসুখের নাম ‘তুমি’
হৃৎপিণ্ডে বসত গেড়ে যে অবিরাম ঘুণ কাটছ ইদানীং…
ডাক্তারকে বলিনি…
তোমার গন্দম চোখ
তোমার গন্দম চোখে দৃষ্টি ফেলি না
নিষিদ্ধ নগর
নিঃশব্দে ছেড়ে যাই
চুপিসারে ফিরে যাই বেহুলার লৌহবাসরসম মনে
তীর্যক দৃষ্টিতে তোমার কক্ষপথ দেখি
আনমনে পথ ভুলি ফের
মনের জানালায় চোখ রেখে দেখি সাপ হয়ে ফণা তুলে আছ
ফণিমনসার বীজ
আর আমি
অনবধানে তোমাকেই বয়ে এনেছি মনের ভেতর…