০১.
গানের ওপারে গান শুনি। পথ ভুলে ঢুকে গেছি এইখানে,
আলো ও অন্ধকার পাড়ের জমাট সময়ে। এইখানে যত
অনুভূতি শূন্য থাকা যায়। এইখানে পাতার আড়াল হলে
পথের সিম্ফনি নিরুদ্দেশ ছুটে যায়। যেন পথ কোথাও
কোনো মায়া জড়াইয়া পড়ে আছে। একমাত্র গুঞ্জাফলই
জানে, কতটা কামরহিত রয়েছি, কতটা উজার
সমস্ত সন্ধ্যাবেলা হাতে নিয়া হার্মোনিকা কে তোলে তুমুল
সুর! আজানের ধ্বনি শুনে থামি, তারপর ভাবি—কী
বিশ্লিষ্ট এ জগৎ! হয়তো পথ ভুলে ঢুকে গেছি প্রান্তর।
হয়তো হৃদয় ভাঙার হাতুড়ি নিয়া বসে আছি। হয়তো
নির্জন, সবকিছু ঢুকে পড়ে গভীরে, মর্মর। মার্জনা করো
হে প্রভু। নিরস্ত্র ঘাম দিয়াই লেখা হোক এক মহাকাব্য
০২.
আমাকে শোনাও দীর্ঘসুর সেই গান, যার শুরু আছে, কিন্তু
শেষটা অনন্যমুখী
দীর্ঘ শেকড়ে শেকড়ে ঘুরে ঘুরে পোকা এক ভাবে—কী এমন
অভিজ্ঞান আর জন্মালো
ঠোঁট থেকে পাখি ফেলে দ্যায় এক বীজ, আর তা ধারণ করে
উত্তরোত্তর চেতনা
কামুক কথার ভিড়ে চেয়ে আছ, সন্দিগ্ধ আলাপ সেরে প্রজাপতি
ঢুকে গেছে নীড়
০৩.
অযথা তোমার নাম স্তব করি সকাল সকাল
বিনম্র বাতাস ওড়াওড়ি করে চারিদিক। হাতের
দশ আঙুল পরিবহন করে দিকবিদিক শূন্যতা।
এমন দিনের ভেতর তোমাকে নিয়ে আমার
হৃদয়ে বেজেই যাচ্ছে এক টিনের ড্রাম, যেকোনো
সক্রিয় সংগ্রাম থেকেও বেশি। মনে হয়, প্রেম
এক সংলগ্ন সুবাস, কাছের-দূরের ব্যবধানে কিছু
ফারাক জাস্ট তৈ্রি করে
এক যুদ্ধফেরত সৈনিক ফেরত আসছে যেন তার
প্রেমিকা বা বউয়ের কাছে, সেই দৃশ্যের পাশেই
আগ্রহভরে অনেককাল কাটিয়ে দেওয়া যায়…
০৪.
নদীটির পাড়ে সুভদ্র কল্যাণ কিছু আছে। নইলে
মানুষ কেন আসে—তীরের জঞ্জাল উজিয়ে বাতাস
ও পানির মিলিত স্রোতে ভেসে যেতে…
তুচ্ছ-তরঙ্গ-নিহিত এই জলের মত যদি হওয়া
যেত
নির্ভার নিষ্পৃহ এই প্রবহমানের ভাষ্য যদি শেখা
যেত
তোমার হৃদয় নিকেল ধাতুয় গড়া, যার রূপ-
পরিধি-যৌবন গাঢ় দুপুরের রঙের মতো উজ্জ্বল
তার ভেতর আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়ি যদিও, ধাতু
দূর্গে আমি নিতান্তই দূর্বল এক প্রবেশক
নদীর তীরের থেকে জলছাপ আমি শিখে যাই
আঁকাবাঁকা নদীর মত সড়কি হাতে ঢুকে যাই
০৫.
তোমাকে, তোমার নাম যা-ই হোক উহ্য রাখি
সংবেদনার পাড়ে অজন্তা-ইলোরা গুহাগাত্রের মতো
অজানা অনেক—ছবির মতো যেভাবে বেঁচে থাকে
আমি তার হৃদয়ের দৃঢ় প্রেমিক, অনপনেয় শেঠ
চোখের চারপাশে যা আছে তা নিয়েই আমি
বেঁচে থাকার সময়ে আয়ত্তে নেই এমন যা—
হৃদয়ে পর্যবসিত, আড়াল করে মেঘের মতো
একদিন তা ছিল উন্মত্ত, ভাঙচুরের আওয়াজ
একদিন অপহৃত হয়েছিলাম সময়কে উল্টাতে
ক্রমে পরিক্রমণের সুতা ধরে হয়ে উঠি গৃহের
এবং ডুবে যাই ছাঁচের ভেতর নিজেরে মানিয়ে
সময় বয়স-নিরপেক্ষ, কোনভাবেই বাগাইতে
পারিনাই তারে, তোমার মতো করে…