প্রজাপতিঘুড়ি
আমার যে হাতে ছিল ঘুড়ির নাটাই
আমি সেই হাতটাকে গুটিয়ে নিয়েছি, আর
সুতো কেটে দিয়ে তাকিয়ে রয়েছি ঘুড়িটির দিকে।
দেখছি, ঘুড়িটা ঠিক প্রজাপতি হয়ে গেছে
প্রিয় প্রজাপতিঘুড়ি, তুমি কেন সারাক্ষণ চারপাশে ওড়ো?
সন্ধ্যারানি
ট্রেনে করে আমাদের গ্রামে সন্ধ্যারানি আসেন।
আমরা জানালা খুলে দেখি তিনি সিঁদুর কপালে
আসছেন। যখন পাখিরা নীড়গামী—গরু নিয়ে রাখাল বালক
ঘরমুখী—তখনই আসেন তিনি। তাকে দেখে
ফুটবলখেলা মাঠের ছেলেরা হৈ চৈ বাড়ি ফেরে, আর
রঙিন পাখনা মেলে অজস্র ফড়িং; কুন্তলে
অসংখ্য আলোর ফুল জড়িয়ে এমন
দিগন্ত বিস্তারি আগমন দেখে কামিনী আপাও
সাদাদাঁত বের করে সুগন্ধী হাসেন
রাত্রিমুখ দেখতেই ব্যস্ত তিনি ফিরে যেতে চান
বলি, আহা! সন্ধ্যামহারানি আজ রাতে আমাদের বাড়ি থেকে যান।
বিচ্ছিন্নতা
বৃষ্টিকে কান্না বলি না—বৃষ্টি কার জন্য কাঁদে?
আকাশতো নীলাভ পাথর—কেবল তাকিয়ে থাকে
. মন বৃক্ষেরা থাকে শুধুই তাকিয়ে
. যেমন নদীরা নিজ স্রোতে বয়ে যায়
পাখিগুলো উড়ে যায়—গাছের একান্ত খোপে
যথারীতি হয়ে যায় বেনামি পালক
বস্তির অস্থির বুক ভেদে ভবনে বাজতে থাকে গান
মানুষ নিজের মতো হাঁটে, আর
যে দাঁড়িয়ে থাকে জানালায় চেয়ে
তার জন্য বাতাস কী সহমর্মী হয়?
. সবকিছু নিজ স্রোতে বয়—
বৃষ্টি ঝরার শব্দে কারও পায়ে নূপুর বাজে না।
পেনড্রাইভ
এর মধ্যে সব আছে—ভাব মোহ উত্তেজনা তাপ
. চামড়ার খাপ
আমাদের দীর্ঘকালীন বিরহজনিত
দুর্বৃত্ত দুশ্চিন্তার চাবুক আঘাতে
আহত রক্তাক্ত হওয়ার অমলিন ছাপ
এই নাও পেনড্রাইভ—
বাতাসের খামে ভরে কত আর পাঠাবো গোলাপ
বোতাম
অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে—
চোখের মণি, বুকের বোতাম
বুকের বোতাম—আমার প্রিয় রঙিন বোতাম
. হারিয়ে গেছে
চোরাবালির এই সময়ে
কাচের প্রিয় ফুলদানিটা ছিটকে পড়ে ভেঙে গেছে
সাগর সাঁতরে কূলের কাছে
সাঁতার কাটতে ভুলে গেছি
যত্নকরে রেখে দিলাম পাথরগুলো
বুকটা খালি—বুকের বোতাম
হঠাৎ কোথায় পড়ে গেছে
শরৎ
শ্বেতশুভ্র ওড়া মেঘদল
ডানা ঝাপটায় দূরে অম্বর
ছোট পর্বত পেটে কাশফুল
শুধু উড়ছেই, শুধু উড়ছেই
নদী তিরতির জলে মাঠঘাট
ছেড়ে আনমন হয়ে ছুটছেই
তাকে পরশায় হীরা ঝলকায়
করে চিকচিক, রোদে ঝলমল
সাদা পায়রার পাখা লীন হয়
দূরে প্রান্তরজুড়ে ধানক্ষেত
বায়ু দোল খায়, ঢেউ খেলছেই
যেন ফূর্তির কোনো শেষ নাই
চির বৈকাল, কাচা হলদির
রোদে ভিজছেই সারা গাঁও-গ্রাম
কত হৈ চৈ, কত চঞ্চল
পারা রামপাম, পারা রামপাম
তার কথা ভুলে যাও
পেছনে যে পথ রেখে এসেছিলে পথে
. তার কথা ভুলে যাও
হয়তো সেখানে কোনো উদ্যান ছিল
. ঝরনার ধারা ছিল
দখিনা বাতাসে পাখিদের কলতান
রূপালি আলোয় ফড়িঙের ছিল গান
এত মুগ্ধ যে ভুলতে পারো না স্মৃতি!
. সেই পথ ভুলে যাও
পেছনের পথ পেছনেই পড়ে থাক
আসলে ওসব তোমার ছিল না কিছু
উদ্যান নয়, ঝর্ণা ধারাও নয়
. তার কথা ভুলে যাও
যে হাত তোমার নয়, যে বনে কখনো
তোমার নামটি ধরে কোনো পাখি গান করে নাই
যে চোখ স্বপ্ন দেখেনি তোমাকে নিয়ে কখনোই
. তার কথা ভুলে যাও
ওই বুকে তুমি ছিলে না কখনো
তার ভাবনায়, ঘোর লাগাকালে
ফিরে ফিরে তুমি আসোনি কখনো
. তার কথা ভুলে যাও
বরং যেটুকু এখন তোমার আছে
বুক খুলে তাকে কাছে টেনে নাও
সারাটা পৃথিবী তার হাতে তুলে দাও
তবুও বেরিয়ে পড়ি
আকাশ মেঘলা ছিল
ঝড়ের আভাস ছিল
তবুও বেরিয়ে পড়ি
বেরোনোর তাড়া ছিল
কোথায় থামতে হবে
এবং কোথায় যাবো
সে সব পরের কথা
সে সব নির্ণয় হবে
বেরিয়ে পড়েছিলাম
গভীর আঁধার রাতে
পাহাড়ি দুর্গম পথ
হৃদয়ে অভয় ছিল
নদীতে উতাল ঢেউ
আচড়ে পড়েছে তীরে
বেবিয়ে পড়েছিলাম
বেরোনোর তাড়া ছিল
কত কী যে ঘটে যায় ভালোবাসায়
কত কী যে ঘটে যায় ভালোবাসায়
কাঁদতে কাঁদতে দেখো হাসি পায়
হাসতে হাসতে চোখ ভিজে যায়
আকাশের স্তব্ধতার সাথে
ঝুঁলে থাকে রাত
তার মুখ ভেসে ওঠে আয়নায়
না কাটে রাত, না দিন যেতে চায়
কত কী যে ঘটে যায় ভালোবাসায়
সবকিছু গোছগাছ, রঙিন দেখায়
ভালো লাগে একাকিত্ব, ভালো লাগে সব
পৃথিবীটাজুড়ে শুধু আলোর বৈভব
তাকে ছাড়া শ্বাস নেওয়া হয়ে পড়ে দায়
তার ছবি ভেসে ওঠে আকাশের গায়
কত কী যে ঘটে যায় ভালোবাসায়
সুখের মতোন এক ব্যথা খুঁড়ে খায়
না ক্ষুধা লাগে, না পায় পিপাসায়
আমাকে উন্মুক্ত করো
আমাকে উন্মুক্ত করো, হে শোভা বিনীত
তোমাতে নিমগ্ন হবো, তরল তড়িৎ হও
কেঁপে কেঁপে উঠবো পুলকে
ভুলোকে-দ্যুলকে যাবে ছড়িয়ে জিকির—
তপ্ত হও, রপ্ত করো প্রগলভ আমার আগুন
অপূর্ব ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়, তাতে
স্নান দিয়ে হতে চাই পুণ্যবান, হতে চাই
সিদ্ধ-সিদ্ধার্থ; রিক্ত করো, খুলে ধরো অরূপনগর—
আমাকে উন্মুক্ত করো, হে শোভা বিনীত
তোমার নামের বর্ণ বৃষ্টিফোঁটা হয়ে আজ ঝরে
গিরিখাতে ফুটে আছে অনল গোলাপ
কী অপূর্ব পাপড়ি তার!
অবনত হয়ে আমি পান করি আবে জমজম—
কুয়েকাফ কত দূর, কত দূর সিনাই পর্বত
তোমার মধ্যেই সব হে সুন্দর, হে শুভ্রবারুদ
আমাকে উন্মুক্ত করো, হে শোভা বিনীত