নদী
নদীর কাছে দিগন্তে হেলান দিয়ে
আমারও কিছু বলার ছিল
কেমন করে অনন্ত জীবন বয়ে চলে
অবসরের বেলা ভুলে ছুটে চলা
সাগর পানে!
সাগর তার ফেনিল বুকে-থেকে সুখে
গর্জন তুলে ডেকেই চলে স্রোতস্বিনী, পল্লবিনী
চন্দ্রমনি, হরঘরণী হাজার নামের তুফান তোলে
লবণাক্ত ঘূর্ণিমুখর প্রেমের লোভে যায় ছুটে যায়
তন্ত্রমেদুর দুপুর ভুলে বোকা সরল সকল নদী
নিরবধি আত্মভোলা চপলতার জলাঞ্জলি দিয়েই
সুখী!
ও নদী, সুখ কারে কয়, বোঝো তুমি?
এমন নাচন, ধ্বংসকেতন তোলে যখন হায়দরি হাঁক
সে কি তখন তোমার আপন? ভেঙে নিলে চাষার কুলা
চলে গেলে দুধের গোলা, একটুও কি মন পোড়ে না
জান কাঁপে না! এমনই অন্ধ প্রেম কামনায় ছুটেই চলো
ঠিক হলো, ঠিক হলো না। ও নদী, এমন প্রেম আর করো না
আর করো না, থামতে শেখো, শিখে থামো…
রেশমি জরির ফড়িং
কোথায় যে মেঘ জমেছে!
দমকা হাওয়া, বিপদ সংকেতে
আকাশে পাতালে নাকি মাংস-মজ্জার জাদুর বাক্সে
বলে যাবে কে?
এ তল্লাটে কোনো তান্ত্রিক বাস করে না।
তন্ত্র ছাড়া জানা যায় কিছু!
নীলগিরি নীলাচলের পথে ফড়িং ছিল
তারা তরতর করে ওড়ে আর হাসে, তাদের পুচ্ছকেশে
রকমারি সাজ, পাঁজরে রেশমি কাপড়ের কুচি
দোলানো মোহন সুখ আর সুখ!
ভেবেছি একটা মনে জমে যাওয়া সব মেঘ উড়াবো
বনে বাদাড়ে ফেলবো তলানির যত অনুভূতি
যতবার উঁকি দেবে রোদ্দুর ততবার স্নানে শুকাবো
কলিজা;
আরও ভেবেছি, একটা জীবন ঘুরাবো রেশশি জরির
ফড়িংয়ের পিছু পিছু…
পারলে সিগারেটটা ছেড়ো না
সূর্যাস্তের ঠিক আগে যে গোলাপি আভা
আমাকে বিমোহিত করে তাতে
গা এলিয়ে এক চুমুক ধূমায়িত কফির সাথে
তোমার ঠোঁট টেনে নেয়ার বাসনা করছি;
তখন সুখের সাথে একটু সিগারেটের ধোঁয়া মিশেল
থাকলে মোহ বাড়বে
পারলে সিগারেটটা ছেড়ো না
(এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙুর ফল থেকে
তোমরা মদ্য ও উত্তম খাদ্য তৈরি করে থাক,
এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে
নিদর্শন রয়েছে। সুরা নাহল ১৬:৬৭’)
পারলে মদ্যটা মজাও
বোধশক্তি সম্পন্ন হও
কাছে আসতে পুলসিরাত লাগবে না
একটু সুক্ষ্ম কাতরতায় সুরা ঢালো দুটি সরু গ্লাসে
বুকে বুকে চিয়ার্সে রঙিন আলো জ্বালালে
মদ্যআর্দ্র ঠোঁট ঘষে নেবো অতীন্দ্রীয় অলি গলিতে
পারলে সিগারেটটা ছেড়ো না
আগুনে পোড়ানো ইসক—কামাতুর করে
ধোঁয়া আর সুরায় ডোবা ঠোঁট
নবরত্ন সভার মূর্চ্ছনা তোলে
গর্জনরত মেঘ নেমে এলে চন্দ্রগিরিতে
নিত্য আর কলা—অঙ্গ উন্মুক্ত করতে ব্যস্ত হয়
অতএব পারলে ছেড়ো না
ছেড়ো না জঙলি নদীর বাঁক
ছেড়ো না ধান শালিকের ঢাক
আর আমার তুলসীগঙ্গার মায়া
মারিজুয়ানা আর বুদ্ধের ধ্যানে
যখন পৈত্রিক ভিটা আলুথালু হয়
তখন একটা হাতের ওম লাগে হাতে;
একটু ছোঁয়ার তীব্রতার মোড়কে জড়িয়ে
একটা শীতঘুম দিতে চাই
পারলে মারিজুয়ানার একটা সুখটান রেখো
আমি অথবা লিওনার্দোর মোনালিসা
যে কেউ একটা সুখটান দেবে
দিবে ধোঁয়াসে চুমু তোমার তন্দ্রামগ্ন ঠোঁটে
পারলে সিগারেটটা ছেড়ো না
উজ্জীবন
জল পতনের শব্দে
চোখ খুলে যায় ঘুমের
ছুঁয়ে যায় অতপর…ঘোরগ্রস্ত ঘ্রাণের একটা জীবন
প্রথম প্রেমের মতো অশরীরী স্পর্শ বুকের ডান বাম করে
নেমে যায় জলে
তখন কাল বৈশাখীর মোহ পাকা ধানের পতনে ব্যস্ত
অথচ
গভীর স্নেহে কৃষক এক একটি পূর্ণিমার মৃত্যু দেখেছে;
গুনেছে অমাবস্যার অন্ধপাত।
বুকের আশা লুট হয়ে যায় এভাবেই…বেহায়া বাতাসে।
তবুও
আম্রকাননে মুকুল ফোটে; নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও
শিউলি জ্যোৎস্নায় স্নান করে;
ভেঙে যাবে ঘুম
জেনেও চোখে এসো,
আমরা ঘুমাবো উজ্জীবনের ঘুম…
অন্ধ ঈশ্বর
জীবনের সবটুকু সঞ্চয় তুলে দিয়েছি
অন্ধ ঈশ্বরের হাতে
অথবা দিতে বাধ্য করেছে তার স্বৈরশাসন
তার হাতের কড়ে নেই কোনো ছিদ্র
চুইয়ে পড়ছে না কোনো বিনোদন
তবুও একটা বুভুক্ষু জিহ্বা
খেজুর গাছে হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখার মতো
তাঁর কঠিন চিবুকের নিচে ঝুলে রেখেছি
যদি ভুল করে ঝরে পড়ে এক ফোঁটা প্রেম!
তাহলে চেটে খাবো
শুষে নিবো সবটুকু
জনমের ক্ষুধা মেটাও হে প্রভু;
হে স্বৈরশাসক, নিয়েছ যা সব আমারই
আমি না থাকলে তুমি অস্তিত্বহীন
আমি আছি বলেই তোমার দম্ভ!
আমি চাইনি এই স্বর্গমর্ত্যের হোলি খেলা
এই বেহুলা লখিন্দরের নট নটীর নাটকীয়তা
এজিদের বুকের বুদবুদ আর ইসমাইলের মস্তকের
বিনিময়ে প্রভু ভক্তের প্রমাণ!
তবে কেন এই বিশ্বলয়ে খেলিছ সব আজব খেলা!
কেন তোমাকে বিশ্বাস করার প্রতিদানে মৃত্যু
উপহার পায় আবরার?
পিশাচের কানে আসে না কোন হাইদরী হাঁক!
যদি সন্তান হারানোর বেদনা দেখতে না পাও
কানে কুলুপ এঁটে বসে থাকো,
মজলুমের আত্মচিৎকার শুনতে না পাও,
তবে তুমি অন্ধ, তুমি বধির!
ঈশ্বর অন্ধ হলে ভক্তের মৃত্যুই আশির্বাদ
যেহেতু মৃত্যু ছাড়া এই ব্রহ্মাণ্ড পরিত্যাগের কোনো পথ
নেই, যেহেতু তোমাকে জবাবদিহি করার কোনো দরবার নেই
সেহেতু তুমি স্বৈরাচারী আর আমি দ্রোহী!
ফিরিয়ে দাও আমার জীবনের সঞ্চয়
ফিরিয়ে নাও তোমার অনুকম্পার জান
দিতে চাই না আমার জীবনের সঞ্চয়,
নিতে চাই না তোমার করুণার নিঃশ্বাস;
দিতে চাই না সিমোনা মন্টির সাত মাসের পৃথিবী না দেখা শিশু,
দেখতে চাই না হলি আর্টিজানে তোমার স্বৈরতন্ত্র;
দিতে চাই না নাফ নদীতে সাঁতার, হতে চাই না রোহিঙ্গা শিশু;
জন্ম নিতে চাই না সিরিয়া ইয়েমেনে রক্তাক্ত দশ লক্ষ শিশু হয়ে।
কেন তৈরি করছ সিরিয়া আর ইয়েমেনে গোলাপের রূপ দিয়ে শিশু?
আবার শুলে চরাচ্ছ কেন জিশু শিশুকে?
জবাব যদি না দাও তবে তুমি স্বৈরাচারী আমি দ্রোহী।
কতল করো আমাকে।
তোমার এ নটঙ্কী নটঙ্কী খেলা থেকে দোজখ অনেক উত্তম।
প্রস্থান চাই,
যেহেতু মৃত্যু ছাড়া তোমার স্বৈরতন্ত্র থেকে বের হওয়ার উপায় নাই
সেহেতু মৃত্যই শ্রেয়…
উলঙ্গ তলোয়ার
কেউ কি কোথাও নেই?
কোথাও জেগে নেই একটি উলঙ্গ তলোয়ার!
সহস্র মায়ের যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে এসেছে এইসব ধর্ষক!
আর সাথে করে এনেছে একটা করে উলঙ্গ ধর্ষণফলা।
থেঁতলে চুষে মায়ের কলিজা খা।
আর মায়ের যোনিপথ হাজরে আসওয়াদ নয়,
প্লাবিত উদ্যান: বন্য শুয়োরের দল, ঢুকে যা।
ঢোক। যে পথে তামাম পৃথিবীর কুলাঙ্গার এসেছিস,
ঢুকে নে, সে পথে সহস্র লজ্জার থুতুসহ সকল নিরুপায় রাষ্ট্রকে।
একটা মা শিশুর অতিষ্ঠ রক্তপাতের কান্না,
একটা রাষ্ট্রযন্ত্র সমূলে উৎখাত করা
পার্ল হারবার আক্রমণ থেকে নগণ্য নয়,
জেনে রাখো জিহাদি; জিহাদ হবে উলঙ্গ তলোয়ারে,
আবার একটা যুদ্ধ চাই—
রিকয়েললেস রাইফেল অথবা কোনো আগ্নেয়াস্ত্র
লাগবে না
একটা উলঙ্গ তলোয়ারই যথেষ্ট।
মূকবধির কাকধার্মিক রাষ্ট্র;
রাষ্ট্র, তুমি কি কারো মা, কারও কন্যা অথবা কারও বোন!
আঁচলে আগলে রেখে ফণিমনসা অথবা ওপানসিয়া
কতদিন নিশ্চিন্তে তন্দ্রামগ্ন থাকা যায়!
কতটা মা শিশুর রক্ত চুষে চুষে খেতে চাও দ্য ভ্যাম্পায়ার রাষ্ট্র?
একটা উলঙ্গ, শুধু একটা উলঙ্গ তলোয়ার দিয়ে
এককোপে কেটে দাও একবার প্রকাশ্যে
একটা নরাধমের ধর্ষণপ্রবণ শিশ্ন
যা কোনো মায়ের সৃষ্টির ফসল নয়।
পাখি
পালকের স্পর্শে ভেঙে গেছে ঘুম…
এখন রাতভর জেগে থাকি পাখির স্বপ্নে
বিমূর্ত প্রেমের জৌলুস রঙ খেলে
জেগে আর ঘুমে শুধুই অঙ্কুরিত ভ্রম
আফ্রোদিতির আত্মা ভর করে দেহের গহীনে
এক পেগ মদ ঠোঁটে ঢেলে ফাঁদ পেতে থাকি
সোনাপাখির আদি-অন্তে সুখ ছড়াবো বলে।
সুখের অফুরন্ত বৃষ্টি আচ্ছন্ন করে ডুবিয়ে
তলিয়ে যায় সমস্ত জনপদ
যেখানে পাখি নেই কেবলি তার আবেশ
পালকে কাম, পালকে প্রেম-কাহারবা, দাদরা, ঝুমুর…
বিষণ্নতার দিন ভেঙে জ্যোৎস্নার উজ্জ্বলতায় গান হবে
ও পাখি, এসো জেগে আছি মহাকালের রথে,
তোমার ধ্রুপদী রঙে আমাকে সাজাবে বলে।
দাঁড়কাকের জীবন
করতালিতে মুখর হয়ে ভুলে যাইনি দাঁড়কাকের জীবন
একটা সাবানের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকা দৃষ্টি
বিড়ালের সাথে মিলে যায়।
বোনপ্লেটের উচ্ছ্বিষ্ট ফেলনা হলেও কৃপণতা
প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বড় বেশি চাকচিক্যের।
আহা বিড়াল! আহা দাঁড়কাক!
তোদের সাথে সইপাতা জীবনের মর্ম আকাশে ভাসে
আর জানালা দিয়ে ভেসে আসে সাকুরার সৌরভ
এসো তালপাতা, আমরাও মাতাল হই বৃষ্টিবেলায়
যদি এক ঝাঁক চাঁদ পায়ে লুটিয়ে প্রণাম করে…
তবে কি ভুলে যাবো বিড়ালের সাথে উচ্ছিষ্টের প্রেম!
যদি দেয়াঙ পাহাড় মাথায় করে গান করে শুক্লাপক্ষে
আর নেমে আসে ঝিরঝিরিয়ে ঝর্ণা দেহের ভাঁজে ভাঁজে
তবে কি ভুলে যাবো দাঁড়কাকের লোভাতুর প্রেম!
একদিন ভুলে যাবো, যাবো কল্কে হাতে ননীদের পাড়ায়
মহল্লাজুড়ে নাচবো…আর ভুলে যাবো দাঁড়কাকের জীবন
ওড়ার কৌশল
একটা বালুর ঘর অথবা কাগজের নৌকা
চারু ও কারু ক্লাসে শিখাতে পারি।
শিক্ষক সব শিখাতে পারেন
কিভাবে পাতার নিচে আঠা দিয়ে ফুল বানানো যায়
আর ছেঁড়া কাগজ দিয়ে স্বপ্নের মেঘ।
আমি সাদামেঘের ভেতর উড়তে চেয়েছিলাম
কৌশলটা শিখাতে পারেননি আমার জীববিজ্ঞান শিক্ষক।
কিন্তু আমি উড়েছি, উড়ছি সাত স্তবক আসমান
মেঘেদের দেশ আমার খুব চেনা।
যে বৃষ্টি ঝরে অথবা ঝরবে ঝরবে করছে
তাদের ইতিহাস আছে আরও আছে প্রেম।
তুমি উড়তে, বসবাস করতে
অথবা অঙ্গে মেখে মজা লুটতে পারবে
শিগগিরই যোগাযোগ করো
এসো ফুলেদের হিম-সন্ধ্যায়
যেখানে থোকা থোকা প্রেম থাকে
ফুল আর প্রেম
প্রেম আর ফুল
শেখাবে কৌশল।
পুরুষ তোমার পুরস্কার
যার নাভিমূলে এঁকেছি ঠোঁটপালিশ
সুখ কাতরতার বিনিময়ে সে পুরুষ বুক ভরা ঝড় পুরস্কার দিয়েছে
নখের পথ বেয়ে জল জড়ানো চুলের ডগায় দিয়েছে দীঘল পাথার।
একরাশ প্রেম…
শূন্য পথ পূর্ণ করেই চর্বণ করলো শিশুর কলিজা
রক্ত আর মজ্জার স্বাদ গ্রহণকারী বাঘের সঙ্গম দেখে
জেগে ওঠা ক্ষুধা মৃত্যুর মতো সহজ সাবলীল হয়
অতপর নির্গত হয় লোহিত কণিকা।
চাঁদের গায়ে লেপ্টে থাকা অমাবস্যার দুঃখের মতো
রাতের কাহিনীগুলো সিঁধেল চোর পাশা খেলে
তৈরি হয় আগুন আর অ্যাশট্রের অভিধান
যুগ ধরে শিশ্নগুলোর চাটুকারিতায় মুখর থেকে নির্লজ্জ বেহারা
পালকীর গান ভুলে এঁকে যায় হৃদয় বিলে কার্বনডাই-অক্সাইড
আর…
বৃক্ষ জীবনের প্রেম নিয়ে লোমশ বুক জমিনে জিহ্বার পেলব শিহরণ
ছড়ায় কুসুমবুচি।
অনন্ত ক্ষুধা আর তন্দ্রার মাঝামাঝি বসে বালক জীবনের ফসিল
গ্রহণের ফলে দিয়েছে প্রেমিক উচ্চতর দক্ষতার ধ্যানমগ্নতা…
ফলে সুখ দক্ষিণা দিচ্ছে নারীজন্ম,
দিবে পুনর্জন্মেও সমগ্র ইন্দ্রিয়তে
যাবতীয় স্বাদ এনে দিবে কল্কের জরায়ু ছিঁড়ে…