মনে পড়া
শরীরের কথা ভাবি কখনো কখনো; যেন আকাশ থেকে দেখা মাটি আর কাদা—এক হয়ে থাকা চোখের সুর্মার মতো নির্ভুল এক অপরূপ।
শরীরের কথা মনে পড়ে যেন পুরনো দিনের কথা—যেন বহু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একাকী জংশন—যেন বিপরীতে ছুটে আসা দুটো ট্রেন—যেন প্রতিধ্বনির বুকে শুয়ে থাকা ধ্বনির আদর।
কোথায় আছ শরীর—এই বোকা অবেলায়; এত চুপচাপ—ব্যথা ভরা বকুল, শান্ত হয়ে আছ—এতটা সরে গেছ কবে।
আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে
আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে? হেমন্তের মৃদু হাওয়ায় কাঁপে আলো, কাঁপে সারাটি দিন। স্বকীয় রসে আপন কৌতুকে শিখেছ হাঁটা বালুকাবেলায়। আকাশ থেকে আকাশে উৎসবের গোপন প্রণয় রিন-ঝিনিয়ে ওঠে, মধ্যরাত্রিতে স্নান সেরে বিষাক্ত সাপের মতো সময়ের গম্বুজ পেঁচিয়ে রেখেছে নৈঃশব্দ্যের ঘ্রাণ। আমাদের এই নতশীর উভপাশ চাওয়া, এই বিরতিহীন আবেগের ক্রন্দন, ধ্বংস আর সৃষ্টির মতো বীজ আর ফসলের ধারাবাহিক যাত্রা! ভেতরে-বাইরে সবখানে ছড়ানো নিঃসঙ্গতার অন্ধকার, আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে?
তবু হবে আসা
বুকের দাগের পাশে নাম লেখা আছে সে কি কোনো নাম, সেকি কারো নাম, সাগরে নামতে গিয়ে দেখি—মুখচোরা বালি মর্মাহত মুখে চুকে যাচ্ছে নাম না জানা সব জানালায় সাগরের ঢেউ যেন রেপ্লিকা-উল্টানো সঙ্গীতের সমাহিত পরব—যার পঙ্ক্তিতে পঙ্ক্তিতে গাঁথা—আমি সমুদ্র আর তুমি নীলাকাশ—পাওয়ার অদম্য ইচ্ছার ধ্যানই তুমি, পৃথিবীর সবচেয়ে শুকিয়ে যাওয়া নদীর মতো তোমার ঘুমন্ত চোখ কখনো কি দেবে একটি মায়াবি রাত—মোনালিসা জানি অদ্ভুত দূরত্বে থেকে তুমি কখনো আসতে পারবে না মনের সাগরের তীরে, দেখবে না মানবীর খুনসুটি, ভালোবাসার পরিণাম, জানবে না চিঠির অপেক্ষায় কেটে গেছে কত রানারের দিনরাত্রি, জানবে না আসতে চাইলেই আসা হয় না সংসারের মৌনতার অন্ধকারে।
সব রঙ মিশে গেছে
বলতে গিয়ে থেমে গেছি কতবার, রোদে দাঁড়ালেই বার বারঘিরেছে ছায়া, যেন শহুরে দস্যু, অথচ আমাদের দুজনের জানা, রাতের সমুদ্র পার হয়ে গেলে আকাশ নীরব হয়, নক্ষত্ররা মিটমিট চোখে চায়, যেন কাঁটার ওপর ঝুলছে জলন্ত সলতে। ‘হিম অন্ধকারের ছায়ারা মিশে যায় যেখানে পরস্পর অন্ধকারের হিম বিশ্বাসে, আমরা কবে সেই সমুদ্রে যাব’—বলে যতবার তাকিয়েছি তোমার বিকশিত ঠোঁঠে, দেখেছি সময়ের ঢেউ মুছে নিয়েছে তোমার দ্বিরুক্তির ফেনা।
তুমি তো জানতে শব্দহীন সম্মতি, জানতে রক্তপরাগের দাগ দেহে রাঙালেই যুদ্ধে নামতে হয়। ‘বলো তুমি, কী করে গড়বো আমাদের রাতের সাগর’—তুমিও বলেছ লগ্নহীন সপ্তম লগ্নে। আমি যেই আঙুল দিয়ে বায়ুহীন বাতাসের দেয়ালে আঁকতে গেছি ছবি, দেখি নিরুপায়, আমার সব রঙ সময়ের সমুদ্রে মিশে গেছে।
রাত খুব ওলট পালট
রাত খুব ওলট-পালট, দিনের ডাকাত ভয় পায় অহেতুক, বেঘোরে হারায় ক্ষণ, ছুটি পেয়ে উধাও নৈশ প্রহরী, রোগিণীর মুখে চেয়ে মানবিক ডাক্তার প্রেমে পড়ে, ছবির রাত খুব অদ্ভুত বদলে যায় কথা বলা, বলার ভাষা, বদলে যায় স্বর, অনুস্বর, এক অনুকম্পার আদেশ লেগে থাকে ঘনঘোর হয়ে কপালে।
রাতের বারান্দায় ঝোলে ফুলকলি দস্তানা থাকে ভীরু পায়রার বিশ্রাম। আরও বেশি রাত হলে চোখ শুধু দুটি চোখ দেখে, যেন তুষারে মোড়া শীতল ডিভান, মনে হয় ঘুমিয়ে যাই ওই চোখে চোখের তারায়—জেগে উঠি পুনঃঘুমের প্রশ্রয়ে।