একুশ.
গন্ধের আনন্দে-গন্ধের অভিশাপে ছুটে আসে মাছি
মৃতদেহ কিংবা মলের গন্ধে মাছি-ফুলের গন্ধেও মাছি
এই মাছি ও মৌমাছি হয়ে বেঁচে রয়-মানব হৃদয়।
মৌমাছির মল চাকের ভেতর জমে জমে মোম হয়ে যায়
এসব মোম আলো হয়ে জ্বলে জীবনের অন্ধকারে
তাই ভাবি আমার কবিতা মাছি, না কি মৌমাছি।!
গভীর অন্ধকারে মোমবাতি হাতে
ঘোলা নদীর অস্পষ্ট জীবন নিয়ে বয়ে চলি—চোখের জ্বলে।
বৃষ্টির আনন্দে ব্যাঙের মতো ডেকে উঠি প্রণয় আখ্যানে
তবু কোথাও কেউ নেই—শুধু রাজপথে পড়ে আছে আমার মৃতদেহ।
আমার এ মৃতদেহ—আমিই আবার ডোম হয়ে কাটি
আর অনুসন্ধান করি, এই দেহের কোথায় লুকিয়েছিল বাংলাকবিতা।
বাইশ.
নিঝুম নদীতীরের সাথে ঢেউয়ের অভিমান বেজেই চলে
তীর প্রায়ই বলে: ঢেউ তুমি আমাকে অভিমানে স্পর্শ করো না।
আমরা সেই শান্ত নদীতে হাঁসের মতো ভেসে চলি—ধীরে ধীরে।
তবু সন্ধ্যা হলেই নিঝুম দীপের শ্মশান থেকে শব্দ আসে
. চৈ-চৈ-চৈ-চৈ।
আর আমরা সেই শব্দে প্যাঁক-প্যাঁক-প্যাঁক-প্যাঁক করে ডেকে উঠি।
আমরা ডাকতে ডাকতে দূরে বহুদূরে ভেসে যাই
যেখান থেকে চৈ-চৈ ধ্বনি আর শোনা যায় না।
চতুর্দিকে অবারিত রক্তমেঘ আর ধূ-ধূ জলরাশি
আমরা এই জলরাশির গভীরে কেন অনন্ত নিঃসঙ্গতায় ডুবতে পারি না!
আমরা কেন নবলব্ধ আকাশে মানুষের মতো উড়তে পারি না।
তাই আমার এই হাঁস জনমের বেদনা-ফাঁস করে গেলাম কবিতায়
যে কবিতা পাঠ করলেই শুনতে পাবেন : চৈ-চৈ-চৈ-চৈ।
তেইশ.
ভাতের থালায় চোখের জল থৈ থৈ করে
সেই জলে ভেসে যাচ্ছে আপজনের মৃতদেহ,
কোনো মৃতদেহের পাশে বেহুলা নেই—একা লখিন্দর—একাকী নির্জন কবি।
এভাবে এক এক করে মা-বাবা-ভাই বোনের মৃতদেহ ভেসে যেতে দেখলাম
হঠাৎ দেখি আমারই মৃতদেহ ভেসে যাচ্ছে উবু হয়ে।
টুব করে আমার মৃতদেহ থালা থেকে সরাতেই ঘটলো অবাক কাণ্ড—
এ কি! থালা ভর্তি ভাতের পাহার—ভাতগুলো পাথরের তৈরি।
আমার মায়ের ভাতারের ভাত দেওয়ার কোনো যোগ্যতা ছিল না—
তাই মায়ের চোখের জল ভাতের থালায় জমে জমে থৈ থৈ নদী।
নদীর পাড়েই শ্মশানঘাট—এই ঘাটেই প্রতিদিন ভেসে আসে—
ঈশ্বর আল্লাহ যিশু ও বুদ্ধের মৃতদেহ।
সেই প্রতিটি মৃতদেহে মানুষের রক্ত দিয়ে কেন যে লেখা আছে—
‘হে মানবজাতি তোমরা আমাকে ক্ষমা করো
তোমাদের পরস্পরের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করার জন্য।’