ডাক হরকরা
নিখিলের বনে ডাক হরকরা হাঁটে।
বাতাসে ঝরছে সবুজ-হলুদ পাতা;
তিতিরের ডাক, দৌড়ে বনমোরগ
ঝোপের ভেতর, ডাক হরকরা হাঁটে
লোকালয় কিবা শহরের সরু পথে।
তার হাতে চিঠি, চিঠির ভেতরে খাম–
সেই খামে লেখা কার নাম, কার নাম!
দেশ থেকে দেশে ডাক হরকরা হাঁটে।
জাড়া-জামিরের পাতায় পড়ছে জল–
চোখগুলো করে টলমল টলমল।
পৃথিবীর ছায়া ক্রমশ সূর্য ঢাকে
কাছাকাছি দূরে ডাক হরকরা হাঁকে।
ডাক হরকরা, ডাক হরকরা বলো,
কী কাজ তোমার হাতফোনের এ যুগে?
ঘ্রাণটুকু যায় রয়ে
আমাদের পথ দুই দিকে যায় বেঁকে
বনের ভেতরে কেমন উদাসী একা
হয়ে চলে যায় অগনিত স্মৃতি রেখে;
কখনো কি আর হবে আমাদের দেখা
কখনো কি আর হবে আমাদের দেখা
দক্ষিণ থেকে বাতাস আছড়ে পড়ে
পাতাদের গায়ে, দূর দিগন্ত রেখা
ধরে এক ঝাঁক পাখি যায় দূরে ওড়ে
কখনো কি আর হবে আমাদের দেখা?
রোদ হয়ে গেছি জানালার কাচ ছুঁয়ে;
সব মিলনই বিরহের অপঘাতে
শেষ হয়ে যায়, ঘ্রাণটুকু যায় রয়ে
আমাদের পথ হয়ে যায় দুই তারা
দুই দিকে বেঁকে চলে যায় দিশেহারা
শরৎ
শ্বেত শুভ্র ওড়া মেঘদল
ডানা ঝাপটায় দূরে অম্বর
ছোট পর্বত পেটে কাশফুল
শুধু উড়ছেই, শুধু উড়ছেই
নদী তিরতির জলে মাঠঘাট
ছেড়ে আনমন হয়ে ছুটছেই
তাকে পরশায় হীরা ঝলকায়
করে চিকচিক, রোদে ঝলমল
সাদা পায়রার পাখা লীন হয়
দূরে প্রান্তরজুড়ে ধানক্ষেত
বায়ু দোল খায়, ঢেউ খেলছেই
যেন ফূর্তির কোন শেষ নাই
চির বৈকাল, কাচা হলদির
রোদে ভিজছেই সারা গাঁও-গ্রাম
কত হৈ চৈ, কত চঞ্চল
পারা রামপাম, পারা রামপাম
অ্যারন বুশনেল
ছুরি হওয়ার চেয়ে তুমি ফুল হওয়াটাই বেছে নিলে।
যেখানে আমরা এক বদ্যভূমি ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছি
পৃথিবীর কোটি কোটি বিফল মানুষ
দেখছি কীভাবে ঝরে পড়ছে পাপড়ি, তুমি
সেখানে সফলতার পথ বেছে নিলে
মানুষ নিজের স্বার্থে মানুষের শত্রু হয়ে গেলো!
‘আওয়ার ইন্টারেস্ট’ বলে প্রকাশ্যে করলো শুরু ঘোড়দৌড়; আর সেই
ঘোড়ার খুরের নিচে যুগে যুগে ঝরে গেলো অগণিত প্রাণ।
এখন যে ধ্বংসের মহোৎসব চলছে
আমরা তা দাঁড়িয়ে দেখছি
রাজনীতি, অর্থনীতি বা অন্য কারণে
চুপ করে আছি ভীরুর সদৃশ। অথচ তুমি কী দুর্দান্ত চেষ্টায়
চারপাশের সকল কাঁটাতার সরিয়ে, বীরের বেশে
অমরত্ব বেছে নিলে
যেখানে আমরা নির্বিকার মারা যাচ্ছি প্রতিদিন
আমরা যেখানে সব নিষ্প্রাণ পাথর
সেখানে হয়েছো তুমি অনন্ত উদ্যান
ভোগ আর লালসার চেয়ে দুরূহ কঠিন
শাশ্বতের পথ বেছে নিলে
মৃত পাতাদের বনে অনেকে হারিয়ে যাবে, বহু লোক খোশগল্প শেষ করে
ক্ষয়িষ্ণু বিকেলে ফিরবে বাড়ি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
তুমি সব দীর্ঘশ্বাস আগুনে পুড়িয়ে
দেখিয়েছো অনন্য সংহতি, মানুষের মনে
স্থায়ী ঘর নির্মাণের পথ বেছে নিলে।
ছুরি হওয়ার চেয়ে তুমি ফুল হওয়াটাই বেছে নিলে