অবক্ষয়
চারদিক থেকে ধেয়ে এলো অবক্ষয়
আমরা ডানে তাকালাম, আমাদের বলা হলো,
‘ধৈর্য ধারণ করো, নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু অবগত আছেন।’
আমরা অপেক্ষা করলাম; কেউ এলো না…
আমরা বামে তাকালাম, পরিপাটি শুভ্র পোষাকধারী নেতা শেখানো বুলি আওড়ালেন।
কেউ কেউ বিপ্লব! বিপ্লব! ধ্বনি তুলে বাতাসে মিলিয়ে গেলো।
আমরা পথে নামলাম, কিন্তু কোথাও কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।
আমরা ওপরে তাকালাম, আমাদের শোনানো হলো উন্নয়নের ফিরিস্তি।
গমগম করে উঠলো বুটের ভারী আওয়াজ।
শিকারি কুকুর খুলে দেখালো সংবিধানের পৃষ্ঠা।
সেখানে চকচক করে উঠলো একটি বিশেষ সংখ্যা-(৫৭)
আমরা নিচে তাকালাম। পায়ের নিচে কোনো মাটি নেই।
আমরা তলিয়ে যেতে যেতে শুনতে পেলাম,
ডান, বাম, ওপর, নিচ থেকে হাহাকার বয়ে যাচ্ছে…
চিঠি
শিলং পাহাড় থেকে আমাকে চিঠি লিখেছে এক সৌম্য যুবক।
চিঠির প্রতিটি অক্ষরে সে আমার জন্য পাঠিয়েছে ঝর্ণার গান,
পাখির কূজন আর রংধনু রঙে আঁকা আকাশের ছবি।
কোথাও ভরা বর্ষায় হিমালায় থেকে ভেসে আসা মেঘের গুচ্ছ,
পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির নৈবেদ্য নিপুণ তুলিতে এঁকেছে চিঠিতে,
ইউক্যালিপটাস আর দেবদারু গাছের পাতায় রোদের মিতালি
সে এঁকে পাঠিয়েছে প্রতিটি যতিচিহ্নে।
চিঠিতে সে অক্ষর এঁকেছে রংধনু কলমে
কখনো সবুজ, কখনো লাল, কখনো নীল আর শুভ্র সাদায়…
কাঠগোলাপের কিছু পাপড়ি সে পাঠিয়েছে খুব যত্ন করে গুচ্ছ মেঘের ভাঁজে
চিঠিতে সে লিখেছে, এইসব উপঢৌকনের কোনো বিনিময় তার চাই না।
সমতল থেকে আমার করতলে করে তাকে যেন কিছু ধ্বনি,
কিছুটা কাজল আর একটি কালো টিপ পাঠাই।
ধ্বনিগুলো যেন গতিময় হয়,
হাসির হিল্লোল ঝরে ঝরে পড়ে যেন তার থেকে।
কাজলের জন্য মায়াবি চোখ আর কালো টিপের জন্য একটি সুশ্রী কপাল এঁকে নেবে সে।
এখানে জীবনের পাশে ভাঙনের নদী মর্মর ধ্বনি তুলে বয়ে চলে
কী করে পাঠাই তারে মিলনের গান,
এখানে বারোমাস থৈ থৈ জল
কালোটিপ দিয়ে যদি কলঙ্ক ঢাকে
তবে পাঠাবো তাকে—
কিছু কোলাহল, কিছু চিৎকার আর ঘনরাত্রির দীর্ঘশ্বাস!
যদি বিমূর্ত হয় তার তুলির আঁচড়ে…
ভোর
একটি স্নিগ্ধ ভোর রোজ এসে আমাকে ডাকে ইশারায়
মিষ্টি হাওয়ায় ভাসিয়ে নিতে চায় দূর অরণ্যে…
যেন প্রতারক প্রেমিক,
গোপন মন্ত্রণা ঢালে কানে
আমাকে নিয়ে পালাতে চায় দূর গ্রাম
শেকড়ের কাছে
যেখানে শালিকেরা জটলা করে
পাকুড়ের ডালে
ঘাসের ঠোঁট চুম্বনে সিক্ত করে শিশির
আমাকে সে ডাকে দু-হাত বাড়িয়ে
জানি প্রতারক সে, তবু মন পালাই পালাই করে
আমি কি যাবো?
শীত নয় বসন্ত
এখানে এখন খুব শীত
অথচ জড়ানোর মতো একটিও চাদর নেই!
নতুন উলে কথার ওম বসিয়ে অনেক দিন ধরে বুনছি একটি চাদর
তার ওপর ছড়িয়ে দিচ্ছি ঠোঁটের কারুকাজ
রঙিন ফুল, ডানামেলা পাখি ও বয়ে চলা নদী
কুরুজে পেঁচিয়ে নিচ্ছি সবটুকু দীর্ঘশ্বাস
আর বুনে দিচ্ছি উষ্ণতর প্রেম
ধীরে ধীরে উবে যাবে আড়ষ্টতা
সুদীর্ঘ গ্রীবা গুটিয়ে পালাবে এবার শীত।
দরজার ফাঁক গলে হু-হু বাতাস এসে ফিরে যাবে ফাগুনের দিকে
গাছে গাছে ফুল আর পাখিদের গুঞ্জনে মেতে উঠবে বিশুষ্ক প্রকৃতি
আর আগত জোসনায় ছুঁয়ে দেবো তার
ধবল আঙুল।