মুহ্যমান
এমন মুহ্যমান কোন স্পষ্টতার দিকে আহ্বান করে! এমন নৈঃশব্দ্য পরিব্যপ্ত হয়ে কোথাও পৌঁছানোর ইঙ্গিত রেখেছে! নিজের ভেতর দাবা ঘর, চিন্তার মগ্নতায়, অন্ধচোখ। ব্রক্ষ্মাণ্ডের বিস্ময় অপার! ঘনায়মান সজীব ঘনত্ব, বিমলা বাতাস দগ্ধ উত্তাপের ওপর শান্তির প্রলেপ বুলিয়ে শূন্যতার দিকে নিয়ে যায়। ধীরে, মায়াবৃত হয়ে, আমি আর নদী, একে অন্যের বুকে সাঁতার কাটি।
জলতরঙ্গ
ছড়ানো হাসির সংক্রাময়তায়, ছোট ছোট জল তরঙ্গের চঞ্চলতা পরিব্যাপ্ত হয়ে জড়িয়ে নেয় সকলকে। আমি আমাকে দেখি, আকাশ নিজেকে দেখে, বৃক্ষরাজি নিজরূপে মুগ্ধ, ঠাই দাঁড়িয়ে। এমন স্বচ্ছতায় নিজের ভেতর ডুব দিয়েছি কখনো! সদ্য জন্মানো শিশুর কান্নার মতো, হাঁটতে শেখা বাচ্চার পড়ে গিয়ে পাওয়া ব্যথার মতো, সবার মগ্নতায় বিঘ্ন ঘটিয়ে আরশির বুকে ঢেউ খেলিয়ে যাওয়া পাড়াগাঁয়ের কিশোরীর চঞ্চলতা আমি, আমি তিতাস, ধারণ করা সকল স্বপ্নের রঙ।
জলারণ্য
নিবিড়তার অপূর্ব ছায়া! যেখানে সমস্ত একাকার। বিবশ আমি একমনে এঁকে যাই, পানির নির্জনতায় আমার বাড়ি, কিছুটা প্রলম্বিত, আশ্চর্য মায়াশীতল। ওপর থেকে যে আমাকে দেখছে তাকে শোনাই মৎসজীবনের কাহিনি, তন্ময় হয়ে যে আমাকে দেখছে।
কঁচুরিপানার মন্থরতা
একটা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে হেলে পড়ছে, আমি কঁচুরিপানার মন্থরতায় ভেসে যাই, ওই ঊর্ধ্বে কিংবা নিম্নে, সহযাত্রী মেঘদল তিতাসের বুক ছুঁয়ে নৈঃশব্দ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, এমন নীরবতায় কোনো ভাবনার বিলাস নাই, কেবল প্রশান্তির নিঃশব্দ বয়ে চলা অনুভব করি। আমার ভেতর যাপিত বহুবিদ আগুনের হুল্কা ধুয়ে জলজ আত্মার স্পর্শ পাই। ক্রমে, পৃথিবী নামক ধারণা পেরিয়ে আমি দেখছি অথবা কিছুই দেখছি না।
গোধূলির সুর
নির্জন গোধূলিবেলায় সুরের জালে আটকে পড়া মাঝি, দাঁড় রেখে চুপচাপ, মায়ার অনাদিকাল থেকে, যেন গোধূলিও যেতে যেতে থমকে চেয়ে আছে, একে অন্যের পরিপূরক হয়ে, যে মুহূর্তে আমিও অন্য কারোর দৃশ্যে বসে আছি তন্ময় হয়ে। মূলত, একে অন্যের দৃশ্য হয়ে ওঠার সামগ্রিক যোগসূত্রে আমাদের বাস।