জন্মতিথির মাহাত্ম্য
আমার কোনো সুনির্দিষ্ট জন্মদিন থাকতে নেই!
কালের কোনো এক প্রচ্ছন্ন প্রহরে
ভূমিষ্ট হয়েছি আমি।
শীতের সকালে, গ্রীষ্মের দুপরে কিংবা
বসন্তের বিকেলে…
সেই ভূমিষ্টের তিথি রহস্যের চাদরে আবৃত!
কার এমন দায় ছিল যে, লিখে রাখবে
আমার জন্মের দিনক্ষণ!
বিধির কৃপায় এসেছি এ পৃথিবীতে
এ যে এক পরম পাওয়া!
আমার মতো অতি নগণ্যজনের জন্মক্ষণ
কে রাখে মনে?
কত যে মহান পুরুষ কিংবা মহিয়সী নারীর
জন্মের তারিখ বিস্মিত এ জাতি!
সৃষ্টির প্রথম প্রহর থেকেই
যখন কোনো মহামনীষীর বয়স ও মাসের
নির্দিষ্ট তারিখ ও বছর একই পর্যায়ে থাকে
তখন তাকে লোকে বলে স্টার বার্থ ডে
কিংবা মহাজন্মদিন!
আমি তো তেমন কেউ নই;
প্রশ্ন জাগে, তবে আমার উদ্ভব কবে?
মায়ের গর্ভে আসার আগে আমি তো ছিলাম
রুহের জগতে। তারও আগে আমার উদ্ভব
অন্যসব মানবাত্মার মতোই!
আমার পিতা কিংবা পিতামহ
আমার জন্মের তিথিতে ছিলেন কি নিজ গৃহে?
নাকি ছিলেন তারা ফসলের মাঠে?
সেই মাঠে বুনেছিলেন কোন ফসলের বীজ?
নবান্নের ঘ্রাণে ঘ্রাণে মৌ মৌ করেছে কি
আমাদের সারা বাড়িঘর?
অথবা, সেদিনের সেই প্রসন্ন প্রহরে
সেই সোনামুখী ফসলের বিপণনে
ছিলেন কি তাঁরা গাঁয়ের কোনো হাটে?
আমার জন্মের ক্ষণে ছিলো কি প্রফুল্ল
এই গ্রাম, এই জনপদ
এই নদী, এই সমুদ্র
এই পাহাড়, এই বনভূমি
এই চন্দ্র, এই সূর্য
এই আলো, এই অন্ধকার?
আমার জন্মের তিথিতে কারো কোনো
দায় নেই, নেই কোনো বিড়ম্বনা!
না স্বজন, না প্রতিবেশী
না বন্ধু, না প্রিয়জন
কারোরই না।
শুধু, কোনো এক আলোর ফেরিওয়ালা
আমার জন্মের দিনক্ষণ ঠিক করে দিয়েছিলেন;
সেটা ছিল কি আমার মায়ের দেয়া
দিনপঞ্জি মেনে? না কি ইচ্ছেমতো
বসিয়ে দিলেন তিনি?
আত্মার অন্ধকারে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিতে
নাকি কোনো নাগরিক প্রয়োজনে?
শিক্ষার সনদ যে অতি অনিবার্য!
আরো কত কী যে মাহাত্ম এই জন্মতিথির!
এছাড়া ক্ষণস্থায়ী জীবনে জন্মের ক্ষণ গুনে
কী হবে, বলো?
আমার জন্মের তিথি জানতে চেয়ো না কেউ;
খুঁজো না বয়স আমার!
আনন্দঘন উৎসবে দিয়ো না কোনো ফুল
করো না প্রদীপ প্রজ্জলন!
শুধু এটুকু জেনে রেখো, বিধির বিধান মেনে
. এসেছি এ পৃথিবীতে
তবে কি আজীবন গেয়ে যাবো তারই মহিমার গান!
আমার জন্মের ঋণ তবু হবে কি কখনো শোধ?
স্থায়ী প্রেম, সুবর্ণ সকাল
স্পেনিশ নারীর মতো ক্ষণিক প্রেমের পাখি তুমি
ও মনে যখন যাকে ভালো লাগে প্রেম দাও তাকে
আবার ফিরিয়ে নাও সেই প্রেম অন্য কারো ডাকে
মালকোয়া তুমি কি তবে, ক্ষণস্থায়ী মেঘের মৌসুমী?
কখনো বদলাও রূপ, যেমন বদলায় দিন-রাত
নিজেকে বাঁচিয়ে চল টেরর বার্ডসের থাবা থেকে
নিজেকে রাখো কি দূরে দুরন্ত শকুন, চিল থেকে?
কখনো শত্রুর সঙ্গে সহজে মিলাও দু’টি হাত!
ব্রিটিশ-মার্কিন থেকে শেখোনি যুদ্ধের ছলাকলা
অজস্র আতঙ্কে তবু বিক্ষুব্ধ বিবেক নিয়ে চলা
সাথীহারা যেন কোনো রহস্যলোকের বাইনমাছ
বিলুপ্ত বসন্ত পাখি, খুঁজে ফেরো কৃষ্ণচুড়া গাছ;
এখন পৃথিবীময় গাণিতিক গ্রহণের কাল
তবে কে ফিরিয়ে দেবে স্থায়ী প্রেম, সুবর্ণ সকাল?
এই কবির আরও কবিতা: বিবর্ণ বসন্ত ॥ কাজী রহিম শাহরিয়ার