দিন-দুপুরে রাত্রি নামে
মনটা যেন গুমোট আকাশ, প্রান্তরে ঝড় ওঠে—হঠাৎ মেঘে-মেঘে কি আজ ব্রজপাণি ছোটে? বর্জ্র তো নয়, যুদ্ধবিমান ফিলিস্তিনে ওড়ে—ড্রাগন যেন আকাশ থেকে উল্কারাশি ছোড়ে। স্বপ্ন ছিল ওই আকাশে হাস্নাহেনার ঘ্রাণে—দেবদূতেরা আসবে ওড়ে মানব শিশুর টানে। বিশ্ব হবে সুখের স্বর্গ, থাকবে না বিদ্বেষ—মেঘের ভেলায় উড়বে শিশু, দেখবে পরীর দেশ। কিন্তু কোথায় সে-সব স্বপন, মানুষ করে খুন—রাবণ ভরা বিশ্ব এখন শরীর ভরা তূণ।
অন্তরে সব বিষের ঘড়া, চোখে আগুন জ্বলে—হৃদয় এখন মৌন পাহাড়, পাথর কথা বলে। দিন-দুপুরে রাত্রি নামে গভীর অন্ধকার—যে দিকে চোখ যায় দেখা যায় সবই বন্ধদ্বার। কোন মরুতে মুখ লুকালে বিশ্ববিবেক আজ? মরছে দেখো তোমার শিশুই, মারছে রাবণ রাজ। রাম হয়ে আজ আসো তুমি, গাণ্ডিবে হাত রাখো—পৃথিবীকে ভালোবাসার ছায়ায়-মায়ায় ঢাকো।
জতুগৃহের গান
দুপুর কেন ঝুলছে এখন চার দেয়ালে-ছাদে? হৃদয়পুরে পাথর রেখে আকাশ কেন কাঁদে। কে কাঁদে আর কে আনন্দে পোড়ানদীর বাঁকে—চোখের জলের রঙতুলিতে বিষণ্ন মন আঁকে—সেই খবরে এখন কি আর প্রাণে জাগে ঢেউ? সময় এখন থমকে গেছে জতুগৃহের পাশে—পাণ্ডবেরা দেশান্তরী, কৌরবেরা হাসে। এরইমধ্যে পুকুর-নদী বুকের ভেতর জাগে— শান্ত জলে কে ছোড়ে ঢিল, কিসের অনুরাগে? রাগ-অনুরাগ যাক মুছে যাক জীবন-খাতা থেকে—সময় এখন প্রতিবাদের মানুষ আনো ডেকে।
মরছে শিশু ফিলিস্তিনে, মরছে নারী মাঠে—খুনের নেশায় মাতাল বিশ্ব, রক্ত পুকুর ঘাটে। সেই পুকুরের পানিতে কার ভাসছে দেখো লাশ—রক্তখেকো হায়েনারা ঘটায় সর্বনাশ।
কবিরা আজ ঘুমিয়ে আছে
কবিরা আজ ঘুমিয়ে আছে পদ-পদবি নিয়ে—রাজার দামি জুতোর-মুকুট মাথার ওপর দিয়ে। নিত্য চাটে পুঁজির দু-পা, কুকুর-বিড়াল হয়ে—কথায় কথায় ‘জয়-মহারাজ’ বলে ভয়ে-ভয়ে। পুড়লো কোথায় মায়ের সমান মাতৃভূমির বুক—কোন মরুতে মরলো শিশু লুকিয়ে কচি মুখ? রাত্রি নামে—আকাশজোড়া রাত্রি নামে মনে—বোমারু বিমানে কারা যাচ্ছে উড়ে বনে? কারও কারও রাত্রি বাড়ে, দিন আসে না আর—পেটে ক্ষুধার আগুন জ্বলে, চোখে অন্ধকার। মানুষ এখন নেই যে মানুষ; পাথর তাদের মন—করছে বিরান জনপদ আর করছে উজাড় বন।
মানুষ মরে পথে-ঘাটে, ইঁদুর-পেচা যেন—ছুটছে সবাই রুদ্ধশ্বাসে কীটের প্রকারেণ। দেখেও সব, কবিরা আজ ঘুমোচ্ছে নাক ডেকে—মাথা তাদের মগজশূন্য কলম গেছে বেঁকে? আয়রে বনের বৃক্ষরাজি, আয়রে পশুপাখি—মানুষ বাঁচাও-জীবন বাঁচাও বাঁধো হাতে রাখি।
রচনকাল: ০২-০৩ নভেম্বর ২০২৩ খ্রি.