জঙ্গলে বেড়াতে এলে
জঙ্গলে বেড়াতে এলে আমি আসলে তোমার শরীরেই
নিঃশব্দে ভ্রমণ করি!
জঙ্গলের বুকঝিম্ পথে হেঁটে গিয়ে
আমি খুঁজে পাই দূরের ছড়ানো ভাঁটফুল
পাতাঝরা আমলকীবন—
কোথাও যেনবা ভেসে আসে তিতিরের ডাক
ঝোপ থেকে উঠে আসে ময়ূরীর মনোলগ
আর জলডাহুকীর গান—
জঙ্গলে বেড়াতে এসে তোমার শরীর জুড়ে লেখা হতে থাকে
আরণ্যিক নোটবুক!
জঙ্গলের কিছুটা দূরে তাঁবুর ভেতর থেকে
উঠে আসে হালকা পালক, শালপাতা, ঘুমহরিণীর চোখ—
আরো দূরে কালো জিপ, পোড়া ডিজেলের ঘ্রাণ,
ছায়া ও ছাতিমতলায় ডুবে যায়
হাওয়া হ্রেষার গান—
জঙ্গলে বেড়ানো মানে তোমার শরীরের অরণ্যের ভেতর
নিঃশব্দে হেঁটে যাওয়া!
জঙ্গল ও তাঁবু
তোমাকে আগেও আমি বলেছি প্রেমের জন্যে আমার একটা নিঝুম জঙ্গল চাই! অথবা প্রেমের জন্যে আমার একটা নিঃশব্দ রিসোর্ট চাই! কমপক্ষে আমার একটা সুনসান তাঁবু চাই!
অথচ তোমার পাশে বসতেই কোত্থেকে যেনবা কিছু ছায়াশরীর এসে জুড়ে যায়—তারা আচমকা ঘিরে ধরে আমাদের—তাদের চোখের লেন্স ধরে ফেলে রেস্তোরাঁর আলোআঁধারিতে হাত ধরে বসে থাকা আমাদের!
জঙ্গলের গহিন ভিতরে একটা তাঁবুর জন্যে অপেক্ষা করছে আমাদের প্রেম!
জঙ্গলে, জোছনায়
জঙ্গলের পাশ ঘেঁষে ছুটে যাই জংধরা পুরনো সাইকেলে চড়ে—নিজেকে যেনবা মনে হতে থাকে এক অলীক পিয়ন যে প্রেমিকের শেষ চিঠি হাতে নিয়ে ছুটে যাচ্ছে আফ্রোদিতির গহিন ডেরায়! কিছুটা দূরেই বয়ে যাচ্ছে এক রূপালি ঝরনা—যার মৃদু ঢেউ বেয়ে ভেসে যাচ্ছে লাল নীল খাম! গোধূলির লালাভ আলোয় দেখা যায় যতদূর শুধু প্রান্তরের খোলা ঘাস, বনময়ূরের নীলাভ পেখম আর শ্বেতাভ ঘোড়ার আস্তাবল!
খড়ের গাদায় শুয়ে কেটে যাচ্ছে এ জোছনা রাত—জোছনার ধারালো করাতে এ জঙ্গলে নেমে আসে আততায়ী চাঁদ!