১
কোনো প্রেরণাবশত আমি এই জঙ্গলে আসিনি
বৃক্ষপাতায় রাখা জিরাফের ভোজ, ডাগর হরিণ
আয়তনেত্র মেলে চেয়ে থাকা পাতাদের দিনে
বাঘ হানা দেওয়া পিঠে পড়ে ভয়ের দীর্ঘ ছায়া;
প্রাগৈতিহাসিক সব প্রপিতামহদের ঘরে
ভীত লুকিয়ে থাকা আমি কোনো শিশু নই,
. এসেছি উদ্ভাসে
ঐ সম্পর্কজালের সাথে হৃদয়ের তারটি মেলাতে…
২
মানুষ আশ্চর্য জীব, তবে জিরাফের চেয়ে বেশ খাটো,
হরিণীরা মানবীর চেয়ে ঢের সহজ সরল;
মানুষ অদ্ভুত প্রাণী, তবে সিংহের চেয়ে হিংস্রতর,
সিংহমামার কাছে সিংহ এক হাবাগোবা প্রাণী!
৩
এই প্রাণ অজস্র প্রাণের ভেতর উন্মীলিত আজ
মহাপ্রাণের সাথে মিশে যাবে বলে নমিত তার সাজ,
আলোকের গোলক ছেড়ে অন্তহীন কালোর পরিধি
কেবল নিভন্ত এক গ্রহে বয়ে চলা প্রাণ নিরবধি!
ঐ সবুজ উষ্ণীষে, ঐ অচিন্ত্য বল্কলে
পড়িমরি বৃক্ষদের দৌড়, ঐ সবুজের সংসারে।
৪
এই ধ্বনিময় চূড়া রীতিসিদ্ধ করে রাখে ধবল পালক
যেন আর কোনো রঙ নেই প্রতিপালকের
প্রতিপলে কালো যে ঠেলেছে বুকে, সে তো আমি, মাঝি
শুভ্রশুদ্ধ প্রভূর করতলে টলমলে এই জীবন বরজ।
৫
কী কান্তিময় উজ্জ্বল এই বনভূমির দেহ!
প্রতিটি পাতা যেন গিলে করা সোনায়
কোনোদিন এই বনাঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছিল
সবকিছু ভিজে হয়েছিল জবুথবু
ভাবাই যায় না। মনে হয়, এমনি প্রখর রৌদ্র
চিরটাকাল ছিল, টাঙ্গিয়েছিল এই প্রখর ছবিটি
ততোধিক প্রখর প্রতিভায় লিখে ফেলতে
. এ সকল রৌদ্রমোড়ানো পঙ্ক্তি
সোনায় জড়ানো প্রতিটি ঘাসের ডগা, আর
পুরো মাঠখানি সোনার পাতে মোড়ানো এক খাতা
ঈশ্বরের, তাতে তিনি লিখছেন মেঘবিজয়ের কবিতা।
সবকিছু ঝলমলে আজ পৃথিবীতে কোনো মালিন্য নেই,
দুঃখের মেঘাবৃত আকাশ আর বেদনার বৃষ্টি নেই কোনো;
যেন শীত ভয়ে কোনোদিন কাঁপেনি শিশুরা…
৬
সবুজ বলেই তাকে ডাকো
ঐ উদ্ভিদের আরো আরো নাম আছে
জগতের সমূহ প্রণতি রাখো ওর পায়ে
ওর অনিষ্ট কিছুই নেই, শুধু জানে
. সবুজ অক্সিজেন ঢেলে দিতে
ছায়া আর ফলমূল, ফুলদের একান্ত সৌরভ
সমগ্র কাঠামো জুড়ে পরোপকার আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে
আর মানুষ দেখ বৃক্ষের চেয়ে কত খাটো
. দৈর্ঘ্যে ও স্বভাবে
মানুষের ভেতরে শত বিধ্বংসী প্রবণতা খেলা করে
সে দেয় বিষাক্ত প্রেম, শান্তছায়া দেয় না কাউকে
অকাতরে ঢেলে দেয় কার্বনের বিষ।
৭
সামান্য পিছিয়ে পড়ে বৃক্ষরা
দ্রুত পিছনে সরে যায় বৃক্ষসারি
ক্রমশ অপসৃত হয় বৃক্ষদল
এগুই কয়েকটি বৃক্ষ বরাবর
সমুখে এসে পড়ে বৃক্ষদল
সোজা চলে যাই বৃক্ষমহলে
পাশে এসে দাঁড়ায় কয়েকটি তরু
পাশাপাশি দাঁড়াতেই থাকে গাছেরা
দু’পাশজুড়েই কেবল তরু ও তমাল…
৮
এসব অস্তিত্বের পাশে আমাদের গৃহশান্তি
পাললিক স্তর শুধু, বালুকণিকার মতো ঝরে যায়
নরোম সম্পর্কজাল ছিন্ন হয় জঙ্গলের ত্রিমাত্রিক টানে
আমরা নৈশনিদ্রার পাশে অবিরত পরম নিষ্ঠায়
দিনের সূর্যের মুখ, আলোকিত প্রতিমা স্থাপন করে গেছি
মাতৃমুখস্মৃতি ম্লান হয়ে এলে ভিনদেশি জাহাজের মাস্তুলে
আমাদের শৈশবছায়া লুপ্তপ্রায় বাঘদাঁত জঙ্গলের মুখে।