আমার প্রেম আমার কবিতা
কবিতার তুমিটা আসলে কে? কোনো মানুষ? ঈশ্বর? না কি একাকিত্ব, শূন্যতা, জীবনের অর্থহীনতা? না কি কবি নিজেই এক আদি-অন্তহীন দুঃখিত সত্তা? আমার কবিতায় এর সবগুলোই ঘুরেফিরে এসেছে। আমার কাছে কবিতা এক কোয়ান্টাম- অনিশ্চয়তার জগৎ। আর প্রেমের কবিতায় এই অনিশ্চয়তার সঙ্গে আরও যোগ হয় বিভ্রম, প্রহেলিকা, পাওয়া না পাওয়ার মনো-দৈহিক প্রতিক্রিয়া, অতিরঞ্জনসহ ব্যাক্তির সুখ-দুখ, সর্বগ্রাসী নিঃসঙ্গতা ও যৌথ-অবচেতনের পরম্পরা। আমার অধিকাংশ কবিতাই প্রেমের কবিতা। এবং আবশ্যিকভাবে শেষমেশ বিরহপ্রাপ্তিতেই তাদের মিশন সম্পন্ন হয়।
একটি কবিতা তার প্রথম শব্দ থেকেই এক অপার সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। তবে দুটি শব্দ কিংবা দুটি পঙ্ক্তির মধ্যখানে একদিকে যেমন অসীম টেক্সট লুকিয়ে থাকে, তেমনি থাকে অনেক অকবিতা, আবেগ-অনুভুতি-বিষয়ের ভারসাম্যহীনতা, সর্বোপরি কিছু লঘু-টেক্সট এর মরীচিকা। এ-মরীচিকা কবিকে অস্থির ও অকারণে দুর্বোধ্য করে তোলে। কেবল শক্তিমান কবিরাই পারেন এসব জঞ্জাল থেকে কবিতাকে বের করে আনতে। প্রেমের কবিতার ক্ষেত্রেও একই কথা। কবিতা যদি তার কাঙ্ক্ষিত নৈঃশব্দ্যে না পৌঁছয়, তবে প্রেমও অসমাপ্ত থেকে যায়। love is the driving force of the universe —প্রেম বিষয়ক এই ক্লাসিক্যাল ধারণাটিতেই আমি বিশ্বাস করি। প্রেম আমাদের জন্য যা বহন করে নিয়ে আসে তা হয়তো প্রেমেরও অধিক। এ-কারণেই বুঝি প্রেমের কবিতায় ‘Distorted reality’-র উপস্থিতি প্রবল। বাস্তবতার এসব বিকৃতি বা নির্মিতি হয়তবা আমাদের স্বপ্নকে নির্দেশ করে, যেখানে আমরা পৌঁছাতে চাই। আমাদের কবিতাগুলো কবি ও পাঠকের মনোজগতের বাইরে গিয়ে আরেকটি স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন জগত সৃষ্টি করে, যেখানে প্রেমিক কিংবা প্রেমাস্পদ কারোই উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়।
অশ্রুলীন
তুমি আসবে না জেনেও বৃষ্টি হল সারারাত,
আকাশটা নেমে এল জানালার ধারে
বকুল ফুলের ঘুম ভেঙে গেল খুব ভোরে,
তুমি আসবে না জেনেও বিশটি রাতের পর এসেছিল
একটি প্রভাত।
তুমি ভালোবাসবে না জেনেও এক উদ্ভ্রান্ত বালক
প্রণয়ের পতাকা ওড়ালো কাল সারাটা বিকেল
আর সূর্যাস্ত-টেনিসের পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে
ছিঁড়ে ফেলল সে সন্ধ্যার পালক।
তুমি ভালোবাসবে না জেনেও একটি শালিখ
খড়কুটো কুড়ালো সারাটি সন্ধ্যা,
কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো ভীষণ রক্তিম হল সারারাত,
খুব ভোরে বকুল ফুলের ঘুম ভেঙ্গে গেলে
দেখা গেল তুমি আমি একই—
আমাদের মধ্যে শুধু
পাশাপাশি জেগে থাকা গাছের তফাৎ।
লাল আকাশ
একদিন তুমি তরমুজ কেটে নিয়ে এলে
খেতে খেতে ভাবলাম—
তরমুজ কাটলে দু’ভাগ হয়ে পড়ে থাকে তার লাল আকাশ।
কিন্তু হৃদয় দু’ভাগ হলে মাথার ওপরে কোন আকাশ থাকে না।
আজ তুমি নেই
আমি আলো আঁধারির মধ্যে বসে কাঁদলাম
কেউ আর তরমুজ কেটে নিয়ে আসে না এখন
আজ সত্যি সত্যি মাথার ওপরে কোনো লাল আকাশও আর থাকলো না।
চিঠি
আজ বাবা অঙ্ক শেখাচ্ছিলেন
বললেন— ধরো, ডালে-বসা দুটি পাখি থেকে
শিকারির গুলিতে একটি পাখি মরে গেল,
তবে বেঁচে থাকলো কয়টি পাখি।
অঙ্কের বদলে এই মন চলে গেল
বেঁচে থাকা নিঃসঙ্গ সে-পাখিটির দিকে,
আর মনে এলো তুমি আজ স্কুলেই আসোনি।