চারু মিত্র,আপনাদের লোকাল পথের
ডানে ঘুরতেই
আড়াইতলা আকাশের মধ্যাহ্ন নরম নদী,
আমি ওটা দেখে জলে ফেলে দেই
ঘুম ঘুম গোধূলির সমুদ্র সৈকত।
এই ধরুন এটাই আমার কপাল,
কবিতার আঙিনা পার হলেই দেখি
লোকাল বাসের স্টেশন ভিজে যাচ্ছে
আপনার চোখের দৃষ্টিতে,
বৃষ্টিতে।
শুধু আপনাকে দেখার জন্য
টিকিট কাউন্টার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি
স্নেহের জানালা ধরে।
আমার আঙুলের আলিঙ্গন ছাড়িয়ে
সমস্ত সন্ধ্যার শূন্য পেট কেটে
বের করে আনি
আপনার দিকে হাওয়ায় ছুড়ে দেওয়া
চুমোর ভবিষ্যৎ।
চারু মিত্র, আমি দেখি
যখন মেট্রোরেলগুলো
আপনার সুন্দর নিয়ে চলে যায়
তখন আমার ভেতরে জারি হয়
দুর্ভিক্ষ দিনের গান
আর আমার চোখ বেয়ে নেমে আসে
ব্যথার টেলিফোন।
চারু মিত্র, হঠাৎ মনে পড়ে যায়
বাবার পুরনো সাইকেল প্যাডেলে
আমাদের দরিদ্র সংসার ঘোরে,
আমাদের দিন ঘোরে,
আমাদের কষ্টের মুহূর্ত ঘোরে,
আমাদের সুখ ঘোরে, দুঃখ ঘোরে,
বাবার পুরনো বাইসাইকেল প্যাডেলে
আমার পৃথিবী ঘোরে।
চারুমিত্র, আপনার প্রিয় বালিকারা
স্কুল ফাঁকি দিয়ে
ব্যাগভর্তি ক্লাসরুম নিয়ে
প্রতিদিন দুপুরে
কমন রুমে আপনার সুন্দরের আড্ডা জমায়
ঘুমে হেলেপড়া
আপনার চশমার মসৃণ আড়ালে।
আপনাদের পাড়ার মেঠোপথ
মুঠোতে ভরে দেখি
আপনার ঠোঁটের জাদুবিদ্যায়
আমার অন্তর ডুবে যায়,
আমার জীবন ডুবে যায় চারু মিত্র।
ওই পাড়ার বখাটে ছেলেরা জানে
বিকেলে এ পাড়ার উঠতি বয়সী বালিকাদের ক্লাস রুমে
আপনি ইংলিশ ম্যাম।
প্রথম পৃষ্ঠায় তারা নিজেদের নাম লিখতে গিয়ে
ভুলে যায় নিজেদের নাম,
তাই খুব আদরে-আহ্লাদে,
যত্ন করে লিখে আপনার নাম
‘চারু মিত্র’,
আমি তখন বাদামি শৈশবের ড্রইং রুম দেখি
আমার ব্যাকরণ বইয়ের
শেষ ছেঁড়া পাতায়।
চারু মিত্র, আপনি যখন খাতায় লিখে যান
চাকা আবিষ্কারের গল্প
আমি তখন উইন্টার সিজনে খুঁজি
আপনার গোলাপি বোর্ডে প্রেমের মৌসুম।