চরবৃত্তান্ত
পাখিরা, অন্নধান ছিটিয়ে এখানেই ডানা খুলে বসে
জবর খালের পুল থেকে শোনা যায় এই অবিমিশ্র ভুতুম-সুর।
প্রতিদিন এখানে ভিখু-জন্ম হয়।
মাঝেমাঝে কান্না ও জরায়ুর চিৎকারে কেঁপে ওঠে
জংলি খালের ক্ষুধা। চর-দখলীরাও বৃত্ত গুনে গুনে
কিছু না-কিছু ভাঙা পা, রক্তচূর্ণ হাত ও হৃদয় খাওয়ার গল্প শোনায়।
প্রতি সকালেই সুবহে সাদেক-ভাঙা রুহু আর রিজিকে খুলে যায়
দখলিপনার নতুন বৃত্তান্ত।
পোনার শিশির
শাদা সহিসের বৃক্ষটি গলে যেতেই ভেসে গেলো
সোনা-পৃথিবীর আরেকটি মানচিত্র।
হেলেঞ্চাখোলায় ধরা আছে এইসব বিবিধ শিশির পট
একটি মোহনার সম্ভাবনাময় ঘর-গেরস্থি, জাল মাখানো ছবি;
ছানাপোনা-খোপ টানানো আছে সমুদ্রপুত্রের হেঁয়ালে—
সবগুলো একসাথে করে শুকনো শিশির ফুলে শুয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে
পড়ে আছে ধ্বনির মমতা, হাড়গোড়ে আঁকা দীর্ঘ দমের ছাতি।
পাইথন ফুলের দেশে
তোমার ছায়া থেকে পাইথন ফুলের আস্তানা সরে গেলে
এখনো বাজাও খোল-করতাল, বর্শা-বন্ধনী।
নবীনগর বনে, বন-মোরগ খাওয়ার কতো সহস্র গল্প ফুটালে—
পাইথন মোরগ খায়। তোমরা বন খাও।
অথচ খাওয়া-খাওয়া এই গল্প প্রকৃতির সহজ পাঠ।
আমাদের আমিষ বনে কতো পাইথন আর ধুতরা ফুলের বিষ
তোমার দক্ষিণা বারান্দায় প্রতিদিন ইকো-সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
পাইথন মোরগ খায়। তোমরা বন খাও।
তোমরা পাইথন ও বন-মোরগ দু’টাই খাও!
পরদা
পৃথিবীর উষ্ণ আঙুলফুলে দুলছে কংক্রিট জুঁই
সেও মাঝেমধ্যে খুলে রাখে নোংরা দম,
কোভিড ধুলার উদ্বাহু বন্ধনে ছুটছে নতুন পরিযায়ী ফুল
ত্রুটির ঢাকনা খুলে মেলে ধরা পোশাকের উচ্ছ্বলতা
বেশিদিন আটকে রাখা যায় না,
বিচ্ছিন্ন শরীর-মাধুরী নিয়ে করোনাও খাওয়াতে পারেনি
বড় কোনো দ্রুম!
আজ, মানুষের উপেক্ষা হাতে বাজে-তার রিনিঝিনি শরীর।
উভচর
আলো-খাওয়া পাখিরা আবারও সূর্যের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠলো—
চাঁদের আলোকে ঝাপসা করলো। বীজধানের খাতায় বসালো নতুন ছন্দ।
আরও কিছু উভচর হঠাৎ পাখির আনন্দে খুঁড়তে চাইলো পৃথিবীর দিল;
ছদ্মবেশী করোনা-ফুলে তারাও বিদ্ধ হলো—কলিজা আর ফুসফুস থেকে ছিনিয়ে
নিলো হারিয়ে যাওয়া গতজন্মের বংশগুণ।
ধান
গাছের শরীরঘন আনন্দে ডুবে ছিল পৃথিবীর শর্করা ধান—
নিজস্ব গন্ধ-কথার নিচে তুমিও খুলো ধন-ধান্যের বান
বণিক ছন্দ যত বাড়ে তত কমে উর্বরতা
নিজের নাম-পরিচয় থান।
প্রোটিন বাহাদুর
সাপ। পৃথিবীর অপ্রতিরোধ্য শক্তিশালী প্রোটিন তারাও শরীরে গেঁথে নিয়েছে;
তুমিও কাগজে-মগজে ধরেছ বিষ, ক্ষতিকর মারণাস্ত্র।
পুরো পৃথিবীটাই এখন অবিস্ফোরিত বোমা
দেখো তোমার লালা থেকে ঝরে পড়ছে শ্লেষ
প্রতিদিন খাও বনজপাতা, অবিমিশ্র পাহাড় জঙ্গল,
পরিপার্শ্ব বাও-প্রেম—এই অবেলা কুলঘাটে দাঁড়িয়ে আছি ভেষজ-স্রোতস্বতী।
হাড় ও হাঁড়ি
এই নদী ও মানুষের গল্প খুব বেশি দিনের নয়।
হাড়ের বাদাম খুঁটে মেখেছি শ্রমণ; তমিস্র রাতের আঁধারে চলো
রাত পোহায়ে আসি।
তোমার সতেজ ঝোনাকির পায়ে এখন মহাপতঙ্গের ঘা;
চতুষ্পদী পায়ে তুলি চিনি-পাখির স্বর।
ফুল তোলা কাঁথা আর বালিশের আজন্ম ইতিহাস
এখনো ভুলি নি। তুমিও মিছে-আর্তনাদে আর সইবে না
দাঁড়ের ফসিলে মাখা প্রত্নছাও।
চাহিবা মাত্র
এখনো-পাই মটকা জালার অরণ্যে সু-পুরাণ শস্যের ঘ্রাণ—
আমি এক আহত নাবিক।
এই বাতিঘরে, রুপালি নখরে ঝরে না কথার নক্ষত্র।
চারদিকে হৈ হল্লোল। উকুন সমাবেশ। কূট-কুচালি।
এই অমৃত-শস্য বিছানায়, একটি শক্তিশালী পেখম-খোলার শরীরে
আরো কিছু কথার চিবুক সাথে রেখেছি।
পুরনো পেশিতে মেখেছো নিজেকে! চাই ধনধান্য নতুন বেলা—
চাহিবা মাত্র যাহা দিতে বাধ্য থাকিবে।
গন্ধ পর ঝোপ
সূর্যবন্দি হতে চেয়ে পেলাম প্রেত-পাখির ঘ্রাণ
কতো পলি এলো-গেলো সন্ধ্যার নরম আলকাতরায়
প্রতিদিন নিজেকে বাধো গেঁয়ো ফকির বন্ধনে;
এখনতো নিজ-পরিচয়েও থাকে দ্বিধার নিম অজপাড়া-গাঁ’র ছেলে বলে!
সেই বর্গীকালসহ আরো ক্রুর চোখ পেরিয়ে মনো-ভূমে এখনো ভজে আছি
পর-গন্ধ ঝোঁপ।
আমাদের পাঠসূচিতে প্রতিদিন নামছে সকাল—
অথচ এখনো মধ্যাহ্নও আসেনি।