জাদুকরের খেলা
কোর্ট স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি-শ্যামবর্ণ কিশোরী ডাকছে দূরে
যেতে হবে তার কাছে-ভুলে থাকি জাদুকরের জাদুতে সব,
মাথামুণ্ড খণ্ডবিখণ্ড শরীর থেকে; চোখে ঝাপসা তখন
লোকটি ভীষণখেলা খেলছে আমাকে-কিশোরী কোথায়!
সব অন্ধকার-ঘামছে শরীর-মাথার ভেতর খণ্ডিত মস্তক,
আমি কি দাঁড়িয়ে আছি না দৌড়াচ্ছি কত দূর সেই বাসা!
রাজু আহমেদের বাড়িটা তে এখানেই কোনো এক গলিতে!
লেখক শহীদ আশরাফও তো আশেপাশেই থাকতেন কোথাও!
কখন দাঁড়িয়ে আছি-জাদুকরের রক্তাক্ত শরীরটা আর নেই
জাদুকরও তো নেই-মগ্নতায় বেজে ওঠে দুরন্ত ট্রেনের হুইসেল
কোথায় যে যাবো ভুলে গেছি জাদুকরের খেলায়;
ঝড়োবাতাসে আচমকা উড়ে আসে মৌতাতের মায়াবী ওড়না।
আমাকে জড়িয়ে নেয়; গৌরিকা আবেগে-অবাধ্য সুঘ্রাণ,
জাদুকর চলে যায়; ট্রেন চলে যায়; পড়ে থাকে মনের কঙ্কাল।
শামুক খেলার শৈশব
শামুকের ওপর শামুক রেখে শামুক ভাঙার খেয়ালি খেলায়
ভেঙে গেছে কত মধ্যদুপুর-বিকেলও।
শুকনো বিরান মাঠে কেটেছে এভাবে
শৈশবের সরল জীবন
খেলাতে যে ডুবে থাকি কোনো মাঠের গরুর পাল
কোন মাঠে যায় চলে, শামুক ভাঙাতে মেতে থাকি।
বাড়ির পাশের ছোট সাঁকো আর সাঁকো নেই
দিগন্ত ছড়ানো মাঠ নেই
হাওর-বাঁওড় বিল ঝিল কিছু নেই
বাড়ি বাড়ি গোয়ালঘর গরুর পাল নেই
সকাল দুপুর মাটি করা খিদেতে আগুনভরা
মেজাজ খারাপ শৈশবের রাগ অভিমান কান্না নেই
কয়া আর সদরপুরের মাঠে বাপ-দাদার পায়ের শব্দও নেই
হাতের মুঠোয় শামুক ভরে তো শামুকের খেলা
এখনো যে খুঁজি রৌদ্র ঢেউ খেলা সারা মাঠ
আমার আমিকে ফিরে নিয়ে যেতে চাই
যেখানে মাঠের রাজ্য জুড়ে ভাঙা এক লাঠি হাতে
হৈ হৈ করে গরু রেখে বেড়ায় দুপুর ভেঙে হাফপ্যন্ট পরা খালি গায়ে
ভূপতি গণিমালের নাতি ছেলে রকিবুল হাসান
চমৎকার প্রাণঘাতী
সহজেই তো হত্যা করতে পারো আমাকে দুপুর বিকেল যখন ইচ্ছে
আমিও তো বুক পেতে বসে থাকি
সুন্দর একটা খুন হবো বলে;
তুমি ভালোবাসার সুঘ্রাণ পাপড়ি দিয়েছ
ওগুলো শাণিত ছুরি; এখন বুঝতে পারি সহজেই;
তুমি সহজেই কত আরাম আয়েশে দারুণ খুনের প্লানে
চুমুতে বিষাক্ত বিষ ঢেলে দাও চমৎকার প্রাণঘাতী !
তুমি সহজেই তো হত্যা করতে পারো আমাকে যখন ইচ্ছে তখনই:
আমি তো সরল বিশ্বাসে আমার সবুজ জমিন বুক
পবিত্র মাটির মতো নিখাদ নিশ্বাস দিয়েছি তোমাকে;
সেখানে তোমার ইচ্ছেরা ইচ্ছের ফলায় চাষ করে পলিমাটি যৌবন জমিন;
এর থেকে বেশি প্রেম জানিনি কখনো-চাইওনি,
সেখানে বিরান তুমি, খুনের চুম্বনে গোলাপের গল্প করো।
তুমি খুব সহজেই তো হত্যা করতে পারো
দুপুর বিকেল নিশুতি যখন ইচ্ছে;
খুন হবো বলে বুক পেতে বসে আছি নিখাঁদ মাটিতে
ভালোবাসলেই খুন হতে হয় প্রতিটি নিশ্বাসে প্রতিটি চুম্বনে
এত সুন্দর যে তুমি, বুঝিনি কখনো প্রাণঘাতী চমৎকার।
স্পর্ধিত দৃঢ়তা
যতটুকু সময় পেয়েছি অবেলায়
সেটুকুই বেলা করে হেঁটে যাবো বহুদূর
ভেঙেপড়া বৃক্ষতেও থাকে অবাধ্য যৌবন।
মন খারাপের কথা মনে নেই
নতুন সবুজে নিজেকে নিজেই দেখি
সাহসের পাখিটা ওড়াই ঝড়োহাওয়ায়।
কোনো অভিযোগ নেই
যে যেমন পারো ওড়ো-উড়ে যাও
আমিও উড়ছি-হেরে যেতে আসিনি নগরে।
শুধু এটুকু জেনেছি ভালোবাসা
ঢেউ খেলে চকচকে স্বর্ণজলে
দীনহীন মানুষেরা জানে ওসবের কোনো মূল্য নেই।
কোনো অভিযোগ নেই
ঝড়ঝাপটায় উড়ছি আকাশ অন্ধকার
ফুটবে নতুন যৌবন স্পর্ধিত দৃঢ়তায়।