গোরের নকশা
সকালে কাঁচাবাজারে গিয়ে
আমি টমেটো হয়ে গেছি
টলটলে আবেগ নিয়ে
গোঁফ-দাড়ি কামাতে গেছি সেলুনে
বেসিনে কেঁচো দেখে উঠে এসেছি শেভ না করেই
গেছি বড় রাস্তার উঁচু মসজিদে নামাজ পড়তে
ওজু করার পর আবিষ্কার করেছি আমি মৃত!
পানশালার আহ্বানে চুর হতে গিয়ে
দুধ আর কলার প্রেমে পড়ি
চারপাশে কালো পিঁপড়ের ঝাড়
শুধু একটা মিষ্টি পানের জন্যও চলে গেছি
দূরের টঙ দোকানে
না, চুরুটের আগুনেই আজ আর হতাশা নেই
তাছাড়া চা-তামাকে কেন জানি
ব্রিটিশ ব্রিটিশ গন্ধ লাগে!
দুপুরে আমি ঘরে পৌঁছাতে পারিনি
বউ দম ধরে ফোন করে যাচ্ছে
নেটে খুঁজে যাচ্ছে না আমাকে!
আমিও কি নেট ফেল করা
কোনো রাষ্ট্রযন্ত্র?
কনিষ্ঠ প্রেমিকা চিংড়ির জো ছটফট করছে
কারণ সে নাবালিকা!
আর মায়ের মাথার ওপর দাঁড়কাকেরা
ভরদুপুরে সারা-পাড়া তাড়িয়ে দিচ্ছে
আপন জনের কাছে খবর পৌঁছে গেছে—
পাওয়া যাচ্ছে না আমাকে!
লাপাত্তা খবর কেন জানি দ্রুত দৌড়াতে পারে
সে উপজেলার দিকে
থানার দিকে আমাকে তাক করে রাখে
পুলিশ আমার লাশের ভেতর গুলি ভরে রাখে
আমার ওজন বেড়ে যাচ্ছে
রুহুটা কয়েক কদম গিয়ে আবার ফিরে আসছে
এ যাবৎ তার কারও জন্য এত মায়া হয়নি
মায়ার কারণ সে স্বপ্নে দেখাবে
আজ গোরের ব্যবস্থা হোক!
কিন্তু গোরের জন্য অনেক কাজ বাকি
মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার আগে
তারা আমার নাকের রস
মুখের ফেনিল কস
আর কান দুটো সাদা নরম তুলো দিয়ে
খুবই যত্ন করে মোছে
বুঝতে দিতে চায় না
এ লাশটা হত্যার!
কিন্তু আমার বাজান খুব সিরিয়াস লোক
পানি ও আগুন
তাকে আমি এই দুই রূপে দেখেছি
আজ সে বারুদে রূপ নিছে!
আমি আব্বাকে ডাক দিচ্ছি
আব্বা থানার ভেতর ঢুকতে পারছে না
পুলিশ তাকে বাধা দিচ্ছে
বাবা বলছে—ছেলের লাশ চাই বদমাশ
ওর কবরের পাশেই হবে আমার কবর!
আমি অসহায় হয়ে কাঁদছিলাম
আমার মা বিদ্রোহী
সে দেশের জন্য একটা না
দু-দুটো ছেলের জান কোরবান করতে প্রস্তুত
তাকে সান্ত্বনা দিতে গেলে লোকে লজ্জা পায়
মায়ের এই হিম্মত আমাকে যেন জীবিত করে তুলছিল
আমি আনন্দে কাঁদতে ছিলাম
কারণ মায়ের চেয়ে আমি বাবাকে বেশি ভালোবাসতাম!
এসব নিয়ে মা আমাকে কয়েকবার খোটা দিয়েছে
আমি বলেছি হেসে হেসে—তোমারই তো স্বামী!
ফেসবুকে তুলোধুনো অবস্থা!
আমার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করা হয়েছে
যাদের শত্রু ছিলাম আমি
তারা নেচেছে আমার কাম নিয়ে
আমি শুধুই হেসেছি মা
আমি মৃত্যুর আগে একটা স্বপ্ন দেখেছি
সেটা বলে যেতে চাই বাবা
রবি আর কাজী দুজনে
আমার কানে কানে বলছে—
এই দেশটা একটা বড় কবর!
এখানে সবাই মরেই বেঁচে আছে বহুকাল
পাওয়া কাকে বলে যারা জানে না
ছোঁয়াকেই তারা পাওয়া মনে করে।
তুমুল যন্ত্রণাময় সময়ে
আমার মুখ থেকে একটি সুন্দর
থুড়ে মাছ বের হয়ে গেলো
সত্য যে কী সুন্দর
তা যদি কেউ একবার জেনে যায়
তাকে আর কে ফেরায়!
কিন্তু সুন্দর কি সবসময় সত্য?
তার গতরে ছলনার চেয়ে
কলঙ্ক বেশি সুন্দর!
কিন্তু এ কী!
আমার মুখে হাসির জানাজা
পুলিশগুলোর হাঁটু থরথর করছে!
তাদের জান বুঝি হাজতেই হাইজ্যাক হয়ে যায়!
আমি দেখি পাগলা গারদে এজরা পাউন্ড
কারাগারে নাজিম হিকমত
আমাকে তারা বলছে—তুমি মৌমাছি
স্বাধীনতা বলে কিছু নেই!
ওটা একটা খোয়াব ও মিথ্যে জানালা
ওর লোভে পড়ে এত সুন্দর মৃত্যুকে তুমি
পিছে ফেলে যেও না!
যারা ভাবে মৃত্যু মানেই সব শেষ
তাদের তো মৃত্যু হয়েই গেলো
তুমি জানো না?
মানুষ একবার তো নয়
বারবার জন্মগ্রহণ করে!
এইসব কারখানার মধ্যে
আমি হাওয়া হয়ে গেলাম!
সত্য বলার অপরাধে
যারা আর ভালোবাসবে না আমায়
তাদের মুখে আমি চুমু ছিটাচ্ছি!