আলাদা হয়ে যাচ্ছি
আমরা ক্রমশ আলাদা হয়ে যাচ্ছি…
সেই কবেকার কথা
চায়ের কাপ থেকে লিপস্টিকের দাগ মুছতে মুছতে হাসির আভাস তুলেছিলে ঠোঁটে
সেই ঠোঁটে এখন অন্য তরঙ্গ
এখন আমাদের কাপ ভিন্ন, বিকেল ভিন্ন
ভিন্ন বাগানে আমরা ফোটাই অচেনা ফুল।
পাহাড়ে, সমতলে
আমরা তো এতোকাল দু’পায়ে ভর দিয়েই হেঁটেছি
এখন আমাদের চারটি পা পাশাপাশি হাঁটে ভিন্ন গন্তব্যে।
তেমন বড় একটি বিছানা আমাদের ছিল না কখনোই
এক বালিশেই দুজনের সুখের নিদ্রা
শীতরাত্রির উষ্ণ লেপ তো আমরাই ছিলাম, পরস্পরের।
এখন মাঠের মতো দীঘল বিছানায় এপাশ-ওপাশ, সারারাত;
আমাদের মাঝখানে শুয়ে থাকে নির্জীব পাশ-বালিশ
. দুই দেশের সীমান্ত নদীর মতো শীতল।
আমরা ক্রমশ আলাদাই হয়ে যাচ্ছি…
আমাদের তো একটিই ডেস্কটপ ছিল
একটিই চেয়ার
একই স্ক্রিনে দু’জোড়া চোখ, খুঁজতো সমৃদ্ধির সিঁড়িপথ
এখন আমাদের ঘরে ঘরে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ,
তুমি আইপ্যাডে খোঁজো দামি শাড়ি, জুয়েলারি,
আমি কবিতার বই,
কিংবা সেলফোনে চোখ রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মগোপন।
আমরা ক্রমশ বড় হচ্ছি, অনেক বড়…
আমাদের ব্যক্তিত্ব বেড়েছে, প্রতিদিন বাড়ছে আরও
এখন তোমার সঙ্গে এক টেবিলে বসে খেতে চাইলে
আগে থেকে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট করে নিতে হয়, এবং এটাই
স্বাভাবিক বলে পৃথিবীকে জানিয়ে দিচ্ছি,
দেখো কতোটা সভ্য এবং আধুনিক আমরা…পরস্পরের প্রতি কী শ্রদ্ধাবোধ!
আমাদের পছন্দের গাছগুলো
কখন যে ভিন্ন ভিন্ন রঙের ফুল-পাতায় ভরে উঠলো
টেরই পেলাম না…
অথচ আমরা তো দোলান চাঁপার শুভ্রতায়ই ডুব দিতে চেয়েছিলাম।
গিটার
বার্ধক্যে উপনীত এক সন্ধ্যা-পুরুষ
দুচোখে রাত্রির প্রজ্ঞা নিয়ে
বসেছেন ইস্ট নদীর পাড়ে।
ওর হাতে দুঃসময়ের গিটার
তরঙ্গ তুলছে জলে, বাতাশে, গাছের পাতায়।
ধুলোরা নৃত্য করতে করতে
অভিবাদন জানায় নতুন অভিযাত্রীকে।
ক’জন সি-গাল শুভ্র ডানার গভীরে
হলুদ চঞ্চু লুকিয়ে নিশ্চিত করে
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের গাম্ভীর্য।
লোকটি গিটার বাজাতে বাজাতে
টুংটাং খরচ করে ফেলে বাকিটা সন্ধ্যা।
সহস্রাব্দের পাখি
রাত্রির যুগল ভ্রূর মাঝখানে জেগে
ওঠে সমৃদ্ধিপ্রবণ সূর্য
সহস্রাব্দের পাখিরাই ওকে ডেকে তোলে
এবং ঠেলে দেয় কর্পোরেট আকাশে।
নৈবেদ্যের থালায় যে সংশয়
রোজ
অজান্তেই জমা হয় মহন্তের,
সেই মেঘ,
সেই ছায়া, ঢেকে দেয় দুপুর, বিকেল…
তটরেখায় বিস্তৃত ভ্রূর নিচে
দুটি নদী
টলমল করে আসন্ন সন্ধ্যায়।