আলো, আরও আলো, আরও আরও আলো চাইলো মানুষেরা পৃথিবীর ভেতর।
আলোও বেড়ে গেলো।
আলো তীব্রতর হলো আর মানুষগুলো তীব্রতম আলোর ভেতর আর কিছুই দেখতে পায় না।
আলোয় আলোকিত হয়ে বোমার ধোঁয়া ছাড়তে শুরু করলো মানুষ।
আমি ক্ষোভের কথা বলছি না, এসব হয়েছে আমরা চেয়েছি বলে।
তবে কি এসব আর হবে না, আমরা চাইছি না বলে?
তা আর কেমন করে বলব। গ্রন্থেতো এসব লেখা নেই।
তুমিই তোমার কালো শ্লেটে সাদা চকে লিখে দাও,
এইসব ঐশি শূন্যতার কথা, যাতে ভয় পেলে মুছেও ফেলা যায় সাথে সাথে—সঙ্গে সঙ্গে।
এই যে একজন চিৎকার করে উঠল ‘সাপ! সাপ!’ বলে আর সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষ,
সাথে সাথে বহু মানুষ, ইট কাঠ লাঠি নিয়ে বেরিয়ে এলো।
সাপটাও চিৎকার করে উঠেছিল পালিয়ে যাবার সময়—‘মানুষ! মানুষ!’ বলে।
তুমি আসবে তো, আমার ভেতরে একবার শান্তি লিখে দিতে?
হাসপাতালের ছাদের ওপর থেকে আকাশ দেখেছ কখনো?
বিদ্যালয়ের ছাদের ওপর থেকে আকাশ দেখেছ কখনো?
সংসদভবনের ছাদের ওপর থেকে, আদালতের ছাদের ওপর থেকে,
পেন্টাগনের ছাদের ওপর থেকে আকাশ দেখেছ কখনো?
ধর্মালয়ের আর যাদুঘরের ছাদের ওপর থেকে?
এবার মৃত্যুর পর যদি জ্ঞান একবার ফিরে আসে,
তোমাকে দেখাব সমস্ত ছাদের ওপর থেকে আকাশটাকে।
দেখা যদি সঠিক হয়ে যায়, ঠাঁই মিলে যাবে অমর হৃথিবীর মধুতে।
বাতাসের শরীর শুয়োরের মতো দাঁত নিয়ে খুঁড়ে খাচ্ছে ফুসফুসের গতর
আর কারা যেন আতর ছিটিয়ে দিয়ে সুগন্ধের একটা প্রলেপে ঢেকে দিতে চাচ্ছে
বাতাসের শুয়োরীয় স্বভাব।
সুগন্ধের প্রলেপে ঢাকা দুর্গন্ধের প্রতি লোভ বাড়ছে মানুষের।
আমি জীবন ভরে দেখতে চেয়েছি এইসব পৃথিবীর যন্ত্রণার উপশমের বেড়ে ওঠা, বৃক্ষের কারুকাজ।
কাল যে ফুল ফুটে উঠেছিল, আজ সে মধু নিঙ্ড়ে ধুসর হলো।
ঝরে যাওয়া মানে যদি দাঁড়িয়ে যায়—আবার পৃথিবীর মেরামত।
তবে আমি আকাশ চুম্বনের কথা ভাবব, মেরামতের মতে আর পা দেবো না কখনো।
পৃথিবীর আচরণে সাধারণভাবেই অবাক হবার বহু বিষয় থেকে যায়।
যেমন—পা ধোয় না। সন্ধ্যায় এমনিই বিছানায় ওঠে। ঘুম যায় অঘুমের মতো।
আর ভোর হলেই শুরু করে বেফাঁস গালাগালি।
এসব গালাগালিকেই মানুষ কর্ম ভেবে নিয়ে মাথায় তুলে নাচানাচি করে, ঘাম ঝরায়।
পা ক্ষয়ে, হাত ক্ষয়ে, শরীর ক্ষয়ে চকের মতো চলে যায় ধুলোর ভীড়ে।
আমরা নিরীহ মানুষ সকাল হলে আর ঘুমের কথা ভাবতে পারি না।
অথচ দুপুর হলেও ঘুমের বিড়ি চোষে কেউ কেউ।
আমি কি হৃৎপিণ্ড থেকে বহুদূরের এক বাসিন্দা হতে চেয়েছি বহুদিন পরে? হৃৎপিণ্ডতো হৃথিবীর শরীর…
বারবার বল—‘প্রার্থনা কর ঈশ্বরের দেওয়ালের কাছে।’ আমি করেছি।
সম্ভবত তিনি মরে গেছেন অথবা গভীর ঘুমে আছেন।
যতদিনে জেগে উঠবেন তিনি, ততদিনে—তখন—বর্তমান ফড়িংদের মধ্যে থেকে
কোনো এক প্রজন্মের কোনো এক ফড়িং হয়ত ভুলে গেছে ওড়া।
আকাশটা ভালো, চাঁদটা গোল, মতিচুরের লাড়ু মিষ্টি, সমুদ্রের জল লোনানীল,
রংধনু বাঁকা এসব কথা আমরা শিখেছি।
কেন শিখেছি জানি না।
আমি লাল ফুল ফুটে উঠলে নিষেধ করবো তোমাকে এর গোড়ায় পানি ঢালতে।
তার চেয়ে বিছা এনে ছেড়ে দাও এর গোড়ায় আর উকুন ছেড়ে দাও আর ছারপোকা ছেড়ে দাও।
পৃথিবীকে আর পা ধোওয়ার অনুরোধ করতে যেও না।
মানুষের পায়ের কাছে পিপড়ের কামড়, মাথায় কামড় উকুনের।
মানুষের মাথা থেকে পা পর্যন্ত শুধু কামড় সইবার সমীকরণ।
যতসব দেবতা ‘চাইবে যা দেব তা’ বলেই খালাস কিন্তু কই দেয়? যা চাই।
লাল মরিচ বেশি ঝাল একথা আর কতবার শুনতে হবে আমাকে।
লাল মরিচের স্বভাব সহি করার চিন্তা বাদ দাও, নিজে সহি হও মানুষ।
আমি অবিশ্বাস্যরকমভাবে মৃত্যুদূতকে মানুষের রূপ ধরে ডায়াসে দাঁড়াতে দেখেছি।
তুমি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে দেখ টিভিতে।
তুমি সমগ্র পৃথিবীর সরকার প্রধানদের দেখ টিভিতে,
সমস্ত ক্ষমতাপ্রধানদের দেখ টিভিতে।
সবখানে রক্তপাত। সবখানে অশ্রুপাত।
কাঁদাটা কোনো পরিশ্রম নয় সে কথা জানি, তারপরেও কাঁদতে কাঁদতে ঘেমে ওঠে মানুষ।
মানুষের কাছে মানুষ, মানুষের ওপর মানুষ জীবন্ত বজ্রপাত।
তুমি বাতি জ্বালাতে পছন্দ কর আঁধারের কালো দেহ পৃথিবীতে আস্তে আস্তে আসতে শুরু করলেই।
অশ্রু কি কেরোসিন? তবে কেন জমা করে রাখ অশ্রু?
তবে কেন জমা করে রাখা সমস্ত অশ্রু ঢোকাও বাতির ভেতর?
আর বাতিটাও কি বোকা!
ঠিক ঠিক জ্বলে ওঠে আর অন্ধকার আরও গাঢ় হয়, গাঢ় হতে হতে কঠিন হয়ে যায়।
আমি অভিশাপের কথা বলতে চাইছি না।
চুলগুলো সব পুড়ে গেলে চলবে কী করে?
অথচ, প্রতিদিন সেই গুচ্ছ গুচ্ছ চুল কেটে সলতে তৈরি কর চেরাগের।
আমি বিষণ্ন এহেন তোমার অবিবেচনা দেখে।
ত্বক ভাল হবে কবে? দুখে পোড়া ত্বক? আমি জানি না। প্রশ্ন করো না।
কারণ রাত হলে কাত হয় সব মানুষ, রাত গেলে জেগে ওঠে সব মানুষ।
আর দেখ, বাইরের খোকামুখ বৃদ্ধবটগাছ, দাঁড়িয়েই আছে।
তাদের ঘুমের গতি কী দিয়ে মাপবে?
আমি বাতাসের কথা তোমার কানে কানে বলব।
আর মানে মানে বুঝে যাবে সব।
নিরীহ ঘোড়া, নিরীহ ঘুড়ি, নিরীহ ঘড়ি। নিরীহ বলেই দ্রুত চলে যায়।
পৃথিবী জন্মিয়ে নেয়, পীড়ন করে আর টুঁটি ছিঁড়ে রক্ত পান করে মেরে ফেলে শেষে।
লালন ফকিরের গান কবে আর শুনবে মানুষ? হৃথিবীর গান গেয়ে গেয়ে চলে গেলেন তিনি।
তার গান শোনার কান, গান মানার প্রাণ হলো না মানুষের।
আরও পড়ুন: