গোলাপ বনের কদুফুল
কাঁটার বেষ্টনী মোড়া গোলাপের চাষাবাদ করি
খাদ্যের বিকল্প চেয়ে কান পাতি উপাদেয় ভোজে
চোখ বুঁজে জয় করি অজেয় দুর্গের দ্বার-ক্ষুধা
নিজেই ক্ষুধার্ত থাকে: হত্যে দিয়েছে তীর্থের কাক
আমি রোজ গোলাপের চাষ করি, কাঁটার আঘাত
নিত্য প্রাপ্য; সে রেখেছে টেনে জামাকে ভীষণ প্রেমে
সামনে-পেছনে ডানে-বাঁয়ে-ভূঁয়ে, সব দিকে গাঁথা
কাঁটা বিক্ষত ফতুয়া জানে প্রণয়ের ইতিকথা
আমি ফুল ভালোবাসি আর খুব ভুল ভালোবাসি
ফুল ও ভুলের মূলে কাঁটার মুকুট সমোদ্যত
মন ও মরমে খোঁচা খেয়ে বিনা শর্তে রক্ত দান
খুনের আখরে লিখি হৃদকম্পনের শঙ্খনাদ
কদুর ফুলের আভা মুখে মেখে তুমি দাঁড়িয়েছ
স্তনাগ্র বোঁটায় কাঁপে থিরথির গোলাপের দ্যুতি।
পতন
পাতাটি পড়ালো খসে
শিরাটি ছিঁড়লো কষে
জলপতনের শব্দে ধূয়ে গেলো রক্তারক্তি রমনেতিহাস
সে সাথে নিতুই জাগে
থইহীন অনুরাগে
বাসনার বীজতলা ডোবে-ভাবে বসে বিপুলের পরিহাস
পাতার পেছনে থাকে স্বপ্নের সংরাগ
শিরাউপশিরা ব্যাপী কামের কল্লোল
প্লাবনের পলিমাটি বুকে তুলে নিরবধি বুনি বীজধান।
খুশিমঙ্গলের এপিট-ওপিট
দুই.
আমার প্রথম পূর্ণস্নানের আস্বাদে নেমেছিল বর্ষা, তীব্র অনুকূল
টিনের চালায় ভেসে যাচ্ছিল পিচ্ছিল এক সময় দ্যোলক
যূথবদ্ধ ঘনঘোর মেঘের ওপারে মিটিমিটি তারাগণ
অলক্ষে ছুঁড়েছে তীক্ষ্ন বিষতীর, হলাহলে ফুলে-ফেঁপে পূর্ণ চরাচর
সবুজ নক্ষত্র এক বহু আলোকবর্ষ মাইল দূর থেকে আশীর্বাদ
. পাঠায় ইশারা
তোমার প্রথম রাত কবে নেমেছিল, ভেঙে পড়েছিল ঢেউ?
আমার পতন দেখে তোমার পড়ার ক্ষণ আমাকে কি বলে দেবে কেউ!
তিন.
ওষ্ঠের সংরাগ লেপ্টে আছে সারা স্মৃতির পাতায়
দণ্ড-পীড়নের দাগ জ্বলজ্বলে এখনো সত্তায়
আগ্রাসী বেষ্টনে গড়া দু’পায়ের গেরো অন্তহীন
শিষ্যের খসড়া খাতা যুগে-যুগে বাসনা-রঙিন
পেয়ে হারানোর দুঃখ বুঝেছিলো রবীন্দ্র ঠাকুর
অবহেলা পেয়ে তার ভালবাসি পথের কুকুর।
চার.
আবার ডেকেই দেখো, সাড়া পাবে নিঝুম বনের-
ডেকে ডেকে সারা হই, বনান্তরে একা বসে রই
বাজাই সরোদ-বাঁশি, দেখা নাই সুচেনা কনের
আকাঙ্ক্ষার ছায়ানীড়ে ছায়াকে কিভাবে পাবো সই?
সপ্তমে চড়িয়ে স্বর তোমাকেই ডাকি বুনোফুল
উত্থানপর্বের দিন আজো বাজে ব্যাকুল-বিপুল।