ক্ষমতার দাপটে পিতার দর্শনধারীরা আজ নির্বাসিত
পিতা
পিতা তোমাকে নিয়ে
একটি কবিতা রচনার আবদার রক্ষা করতে পারছি না।
যখনই কলম হাতে বসি কোথা হতে আমার চোখে ভাসে
রাসেলের ভয়ার্ত মুখচ্ছবি।
পিতা তোমাকে নিয়ে
ডামাডোলের ভেতরে ঠাঁই নিয়েছে শকুন শাবক
কলকল নদীর স্রোতের মত শনশন নির্মল বায়ুপ্রবাহের মতো
একটি রচনার আবদার রক্ষা করতে পারছি না
যখনই কলম হাতে বসি কোথা হতে আমার চোখে ভাসে
সদ্য র্যাংকপ্রাপ্ত উজ্জ্বল উচ্ছল জামালের মুখ
নিমিষেই বুলেটের আঘাতে ঝাঁজরা হয়ে ভয়ার্ত শব্দে
রক্তনদী বয়ে যায় মধুমতীর দিকে
পিতা তোমাকে নিয়ে
যখনই কলম হাতে বসি সুবেহ-সাদিকের পরে কোথা হতে আমার চোখে ভাসে
উত্তাল উদ্দাম পৌরুষদীপ্ত কামালের মুখ
পিতা তোমাকে নিয়ে
কোমলে কঠিন একটি কাব্যনাট্যের আবদার রক্ষা করতে পারছি না
তোমারই শতবর্ষ আয়োজন স্মারকের জন্য
যখনই কলম হাতে বসি কোথা হতে আমার চোখে ভাসে মাতৃজন্মের আর্তনাদ,
সদাশান্ত মুক্তিচেতনায় অবিচল মমতাময়ী রেণু’মার মুখ।
এই শতবর্ষে তোমার নামে তোমার জন্য
কোন মঙ্গলকাব্য রচনার অক্ষমতা ক্ষমা করে দিও পিতা।
তুমি জননীর জননী- দিব্যমাতা
জননী ধরিত্রী সর্বংসহা মা আমার
অষ্ট্রিক, দ্রাবিড়, অনার্য, আর্য আরও আরও কতো
বাঙময় বাঙাল, বাঙ্গালী, জাত-উপজাত
আদী-অনাদি জাতিগোষ্ঠীকে
তোমার পবিত্র আচঁলে ধারণ করে,
কত সন্তানের আঁচড়ের আঘাত সয়েছো অনায়াসে
হাজার বছরের যমুনা-বিপাশা-গঙ্গা-পদ্মা-কর্ণফুলী,
মেঘনা-মাতামুহুরি হয়ে মধুমতীর তীরে তোমার আবির্ভাব
জন্মতে থিতু হয়ে তোমারই জন্মাবাস
তারপর খরস্রোতা মধুমতীর মতো
কখনো খুব ধীর কখনো অস্থির, কখনো সুস্থির শীতলক্ষা হয়ে
ঘাট থেকে ঘাটে, অবশেষে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে ধানমণ্ডি।
শৈশবেই হারিয়েছো জন্মদায়িনী মা জন্মদাতা পিতা
লুৎফর-সায়েরা আমার প্রপিতামহ-মাতা কখনো তোমার
ভরসা, ভালোবাসা, মমতার এতটুকু অভাব অনুভব করতে দেয়নি
তুমি জননীর জননী- দিব্যমাতা।
আমার সেই প্রপিতামহ-মাতা জানতেন,একটি ব্রাত্য জনগোষ্ঠীর জন্য
আপনাকে সর্বংসহা জননীর আসনে অধিষ্ঠের প্রয়োজন।
সর্বজয়া সর্বংসহা বেহুলা রেণু মা আমার
তুমি আগলে রেখেছিলে তোমার খোকাকে
তুমি আগলে রেখেছিলে হাসিনা-রেহেনা, কামাল-জামাল-রাসেলকে
তুমি আগলে রেখেছিলে আদরের ভাই-দেবর শেখ নাসেরকে
তুমি আগলে রেখেছিলে বৌমা আরজু মণি-রোজিকে
কিন্তু তোমার বুক বিদ্ধ করে ঘাতকের নির্মম বুলেট যখন
এফোঁড় ওফোঁড় করে প্রাণপাখিটাকে উড়িয়ে দিল
তখন সব যেনো তোমার আঁচলহারা হয়ে আকাশে আকাশে
একজন একজন করে উড়তে থাকলো!
এক এক করে উড়তে থাকলো তোমার প্রিয়তম খোকা,
তোমাদের আদরের কামাল-জামাল-রাসেল
মা, রেণু মা আমার, আমরা পারিনি তাদেরকে আগলে রাখতে
আমরা পারিনি, সেই ভোররাতের প্রথম প্রহরে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
নির্বাসিত হও দিকশূন্যপুরে
চেতন রাজ্য ও রাজনে বোধবিহীন বাণিজ্যে
সুভাষ-ফরহাদ-শরিফ চেয়ারম্যান-অভিনাশ স্যার
নগ্ন পায়ে পড়ে না পদচ্ছাপ আর।
তাঁদের পায়ে পেরেক ঠুকে পরমাত্মাকে করেছি বন্দি
রাজনীতির জাদুবাক্সে।
শহীদ আব্দুল হামিদ, এনাম সাবেরের নামে গড়পরতা
চেতনসভার আয়োজক আমরাই
তোমাদের কাছে আমরা পরম ঋণী
তোমাদের পুজি, তোমাদের স্মরি ,
তোমরাই মোদের লুটের হাতিয়ার,
তোমরাই মোদের আখের গোছারি।
মুজিবের ডাকে তোমাদের মহৎ আত্মদান
আমরা ভুলে গেছি তার সরল অনুবাদ
লোভ ও লালসার কালিক ছলনায়।
ভালো থেকো হে বীর শহীদ, ভালো থেকো মহাকালে
তোমাদের রেখে যাওয়া প্রজন্ম আজ
বানরের পিঠা ভাগে বড্ড চেঁচামেচি করে।
করুক তারা চেঁচামেচি হে বীর শহীদান,
অভিশাপ দাও ,
তোমাদের পবিত্র আত্মা থেকে বর্ষণ করো
তাদের ওপর লানৎ।
আমরা যারা মুজিবমন্ত্রে, দেশপ্রেমে
মিনারে, স্বাধীনতা মঞ্চে আমাদের বক্তৃতায়
তোমাদের স্মরণ করি।
উতল অভিমানে আমরা স্বেচ্ছানির্বাসিত আজ
যোজন যোজন দূরে দিকশূন্যপুরে।
ক্ষমতার ব্যাপারিরা শোনো
ও হে রাষ্ট্র
রাষ্ট্র ও সরকার কর্তাগণ তোমাদের বলছি
রাষ্ট্র ও সরকারের লোকদেখানো সেবাদাস
তোমরা মূলত ঈশ্বরের একধাপ নিম্ন মহাতাপ
আকাশসম সিঁড়িস্বপ্ন পরিকল্পনা আর দেখাইও না
শুনাইও না বিগত স্বপ্নবিলাসিতার তেজারতি আর।
ও রাষ্ট্র
তুমি আমার স্বপ্নজড়ানো চাঁদের বুড়ি দাদিমা
ও হে স্বদেশ
আমি তোমার রক্তস্নাত জরায়ুছেঁড়া সন্তান
সেই সব দৈত্বদানু রাক্ষসখোক্কসের গল্প শুনাইয়ো না
হে স্বদেশ মাতা রাষ্ট্র কর্তাদেবী
ওসব বিগত অনাগত স্বপ্ন বিলাসিতার কল্পকথায় বিশ্বাসী
স্বপ্নবিভোর সন্তানেরা আজ ম্যাজিক লাইন পার করেছে
স্বপ্নবিলাসি কল্প পরিকল্পনার অলিক স্বপ্ন সাধন করতে করতে
মা তোমার সেই সব সন্তানেরা আজ ক্ষুধা জ্বরায় উদ্ভ্রান্ত উম্মাদ
নাগিনীর খুনচোখা সন্তান তাদের সিপাহি বর্কন্দাজের ভিড়ে
আজ তারা স্বেচ্ছা ফেরারি, বেদুইন, নির্বাসিত যাযাবর
বিজয় স্বপ্ন-সবুজ মাঠে খোঁজে পাবে না তাদের ছায়া।